রিশাদ কি জ্বলে উঠতে পারবেন আরও একবার?
রিশাদ কি জ্বলে উঠতে পারবেন আরও একবার?

উৎপল শুভ্রর লেখা

‘একটা কিছু’ কি হবে আজ 

এই মাঠ বাংলাদেশ দলের চেনা। দক্ষিণ আফ্রিকার আরও বেশি। ১০ দিন আগে এই মাঠে ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। ডালাস থেকে তিন–চার দিন নিউইয়র্ক ঘুরে যাওয়া এই উপলক্ষে। দক্ষিণ আফ্রিকা যেখানে নিউইয়র্ককে প্রায় ঘরবাড়িই বানিয়ে ফেলেছে। 

দুই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার দুই জয় এই মাঠেই। আজ বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে দক্ষিণ আফ্রিকানদের তাই ‘হোম গ্রাউন্ড’ মনে হতেই পারে! 

এমন স্বল্পায়ু আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম ক্রিকেট আগে কখনো দেখেনি। আর কোনো দিন দেখবে বলেও মনে হয় না। ১২ জুনের পর থেকে রেকর্ড বইয়ে নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নাম থাকবে, তবে বাস্তবে সেটির কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। এ যেন প্রবাদের সেই কাজীর গরু কেতাবে আছে কিন্তু গোয়ালে নেই।

১০৫ দিনের মধ্যে একটা স্টেডিয়াম দাঁড়িয়ে যাওয়া এমন কোনো বিস্ময় নয়। টুকরো টুকরো জোড়া দিয়ে বানিয়ে কাজ শেষে খুলে নেওয়া এমন স্থাপনার চল উন্নত বিশ্বে অনেক দিনের পুরোনো। এমন মডুলার স্টেডিয়াম কাতার বিশ্বকাপেও একটা বানানো হয়েছিল। সেটির বিশেষত্ব ছিল, তা বানাতে ব্যবহৃত হয়েছিল জাহাজের ৯৭৪টি কনটেইনার। নামেও ছিল সেটির ঘোষণা—স্টেডিয়াম নাইন সেভেন ফোর।

সেই মাঠের স্থাপত্য নিয়ে শুধু প্রশংসাই শোনা গেছে। সমালোচনা একটুও নয়। এখানে স্টেডিয়াম দেখে বাংলাদেশ অধিনায়কের মুগ্ধতার কথা আইসিসি সাড়ম্বরে জানিয়েছে সবাইকে। কিন্তু সপ্তাহ না ঘুরতেই বিবৃতি দিয়ে প্রকারান্তরে দুঃখ প্রকাশও করতে হয়েছে। 

বাংলাদেশ–দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে কী রূপে দেখা দেবে নাসাউ কাউন্টি ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামের ২২ গজ?

ফুটবল আর ক্রিকেট যে এক নয়। ফুটবলে মাঠটা সবুজ-সুন্দর হলেই চলে। ক্রিকেটেও সেটি লাগে, তবে সবচেয়ে বেশি লাগে এর মাঝখানে উইকেট নামে ২২ গজী আয়তাকার ক্ষেত্রটা। তড়িঘড়ি করে সুন্দর গ্যালারি বানিয়ে ফেলা যায়, সবুজ-মসৃণ ঘাসে ঢাকা মাঠও। কিন্তু উইকেট সময় দাবি করে, যত্নও। তা না পেলে কী হয়, এই বিশ্বকাপে সবাই তা দেখে ফেলেছে। প্রতিষ্ঠিত কোনো ক্রিকেট স্টেডিয়াম হলে আইসিসি এত দিনে ডিমেরিট পয়েন্ট দিয়েটিয়ে নিষিদ্ধও করে ফেলত এটিকে। এখানে সেই প্রশ্নই উঠছে না। কারণ যে করেই হোক, বিশ্বকাপের খেলা শেষ করতে হবে। আর যে স্টেডিয়াম থাকবেই না, সেটি নিষিদ্ধ করে কী হবে! 

নাসাউয়ের অসমান বাউন্সের উইকেটে শ্রীলঙ্কা-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের নাজেহাল অবস্থা টেলিভিশনে দেখেছে বাংলাদেশ দল। শুনেছে ভারত-আয়ারল্যান্ড ম্যাচে কী হয়েছে, সেটিও। ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে কেন উইকেট খুব বেশি ফোঁসফাঁস করেনি, এ নিয়ে একটু বিস্ময়ও আছে দলে। যে উইকেটে ভারত-আয়ারল্যান্ড ম্যাচ হয়েছে, প্রস্তুতি ম্যাচও তো হয়েছে সেটিতেই!

দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হওয়ার আগে স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ দলে উইকেট নিয়ে আলোচনা আছে। আবার এ নিয়ে বেশি ভাবলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি, এটাও মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে সবাইকে। যা তোমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তা নিয়ে ভেবে কী হবে?

আরেকটি ভাবনাও দলে বহমান। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডারের হুড়মুড় করে ভেঙে পড়াটা যে ভাবনায় জ্বালানির কাজ করছে। একই উইকেটে তো দক্ষিণ আফ্রিকাকেও খেলতে হবে। এমনিতে কাগজে-কলমে দুই দলের অনেক পার্থক্য। প্রশ্নাতীতভাবে অনেক এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। এতটাই যে, দল ঘোষণা করার সময় প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন এই ম্যাচ নিয়ে আশার ঘরে বলতে গেলে শূন্য বসিয়ে দিয়েছেন।

বাংলাদেশ দল যে একদমই তা মনে করছে না, সেটির কারণ আপনার অনুমান করে ফেলার কথা। ডালাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়টা দলের আবহে এমনই এক ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে যে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আর আগের মতো অজেয় মনে হচ্ছে না। সুরটা বরং এমন—একটা কিছু হয়েও যেতে পারে। 

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রান করে লিটন দাস কিছুটা হলেও নির্ভার

গত কিছুদিনের পারফরম্যান্স এবং সেটির যৌক্তিক-অযৌক্তিক সমালোচনায় ক্রিকেটাররা অসম্ভব চাপে ছিলেন। দীর্ঘদিন বাংলাদেশ দলের সঙ্গে আছেন, এমন একজন বলছিলেন, এর আগে কোনো ম্যাচের আগে ক্রিকেটারদের এত টেনশনে থাকতে কখনো দেখেননি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ে উড়ে গেছে সেই চাপ। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে যা-ই হোক, নেদারল্যান্ডস আর নেপালকে হারাতে পারলেই সুপার এইটে উঠে যাওয়া যাবে—এই সমীকরণও নির্ভার করে দিচ্ছে অনেকটাই।

এমনিতে এই ম্যাচের প্রস্তুতির জন্য মাত্র এক দিনই সময় পেয়েছে বাংলাদেশ। গত শনিবার শ্রীলঙ্কা ম্যাচের পরদিন দুপুরে ডালাস থেকে নিউইয়র্কে এসেছে দল। সাড়ে তিন ঘণ্টারও বেশি বিমানযাত্রার পর বাকি দিন আর কিছু করার সুযোগ ছিল না। বিচ্ছিন্নভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ নিয়ে কথা হলেও একসঙ্গে বসে আলোচনা হয়নি। আলোচনা, অনুশীলন—যা হয়েছে সবই রোববার ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের ডামাডোলের মধ্যে।

যে ম্যাচের হ্যাংওভার কাটিয়ে এখন সামনে তাকানোর সময়—বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা!