আইপিএলে আলো ছড়াচ্ছেন জন্টি রোডস ও রিকি পন্টিংয়ের মতো তারকারা
আইপিএলে আলো ছড়াচ্ছেন জন্টি রোডস ও রিকি পন্টিংয়ের মতো তারকারা

আইপিএলের ডাগআউটে তারার মেলা

ব্যাটিংয়ের এক প্রান্তে শচীন টেন্ডুলকার, অন্য প্রান্তে ব্রায়ান লারা। আছেন সৌরভ গাঙ্গুলী, স্টিফেন ফ্লেমিং, শেন ওয়াটসনরাও। বোলিং আক্রমণে মুত্তিয়া মুরালিধরন, ডেল স্টেইন, শেন বন্ড, লাসিথ মালিঙ্গা, মরনে মরকেল। ফিল্ডিংয়ে চিরচেনা পজিশন পয়েন্টে জন্টি রোডস, বাউন্ডারি লাইনে কাইরন পোলার্ড। কিপিং গ্লাভস ভাগাভাগি করছেন অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, কুমার সাঙ্গাকারা ও মার্ক বাউচার। আর এই দলের নেতৃত্বে রিকি পন্টিং—একবার কল্পনা করে দেখুন তো!

নব্বইয়ের দশকে জন্ম নেওয়া ক্রিকেটপ্রেমীদের নামগুলো পড়তে পড়তেই নিশ্চয় রোমাঞ্চিত হওয়ার কথা। টেন্ডুলকার–লারা–মুরালিধরনদের খেলা দেখেই তো বেড়ে উঠেছেন তাঁরা। ক্রিকেটের এই রথী–মহারথীদের খেলা এখনো চলছে। তবে বাইশ গজে নয়, বাউন্ডারির ঠিক বাইরে। আইপিএলের ডাগআউটে তাঁরা বসিয়েছেন তারার মেলা। তাঁদের কেউ প্রধান কোচ, কেউ সহকারী কোচ, কারও পরিচয় ফ্র্যাঞ্চাইজি আইকন, কেউ কেউ আবার পরামর্শকের ভূমিকায়।

আইপিএলের ১০ দলের প্রায় সব কটিতেই কোনো না কোনো কিংবদন্তি আছেন। একাধিক ফ্র্যাঞ্চাইজির কোচিং স্টাফে আবার এমন কজন আছেন, যাঁদের সঙ্গে জড়িয়ে বাংলাদেশের নাম।

মুম্বাই ইন্ডিয়ানস

মুম্বাই ইন্ডিয়ানসে জড়িত শচীন টেন্ডুলকার (বাঁয়ে) ও জহির খান
শচীন টেন্ডুলকার (আইকন), মার্ক বাউচার (প্রধান কোচ), কাইরন পোলার্ড (ব্যাটিং কোচ), শেন বন্ড (বোলিং কোচ), মাহেলা জয়াবর্ধনে (পারফরম্যান্স বিভাগের প্রধান), জহির খান (ক্রিকেট উন্নয়ন বিভাগের প্রধান)

অর্থের ঝনাঝনানির আসরটির সবচেয়ে সফল দল মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। রেকর্ড পাঁচবারের শিরোপাজয়ী দলটির আইকন ভারতের ব্যাটিং জিনিয়াস শচীন টেন্ডুলকার। এই মৌসুমে মুম্বাইয়ের প্রধান কোচের দায়িত্ব পেয়েছেন মার্ক বাউচার। দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি এই উইকেটরক্ষক শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। জয়াবর্ধনেকে দেওয়া হয়েছে পারফরম্যান্স প্রধানের দায়িত্ব। দলের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করা ও বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিভা খুঁজে বের করাই তাঁর কাজ। মুম্বাইয়ের সমার্থক হয়ে ওঠা কাইরন পোলার্ডকে করা হয়েছে ব্যাটিং কোচ। নিউজিল্যান্ডের সাবেক গতিতারকা শেন বন্ড আছেন বোলিং কোচের দায়িত্বে। আর ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ে ভারতের পেস বোলিংকে নেতৃত্ব দেওয়া জহির খান কাজ করছেন ক্রিকেট উন্নয়ন বিভাগের প্রধান হিসেবে।

চেন্নাই সুপার কিংস

স্টিভেন ফ্লেমিং (প্রধান কোচ), মাইক হাসি (ব্যাটিং কোচ), ডোয়াইন ব্রাভো (বোলিং কোচ)

আইপিএলের দ্বিতীয় সফলতম দল চেন্নাই সুপার কিংসেও আছেন একাধিক কিংবদন্তি। চেন্নাইকে চারটি আইপিএল ও দুটি চ্যাম্পিয়ন লিগ শিরোপা জেতানো স্টিভেন ফ্লেমিং এবারও আছেন প্রধান কোচের দায়িত্বে। সহকারী হিসেবে নিউজিল্যান্ডের অন্যতম সফল এ অধিনায়ক পেয়েছেন ‘মিস্টার ক্রিকেট’ মাইক হাসি ও আইপিএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ডোয়াইন ব্রাভোকে।

কলকাতা নাইট রাইডার্স

রায়ান টেন ডেসকাট (ফিল্ডিং কোচ)

হাই–প্রোফাইল কোচের তালিকায় কলকাতা নাইট রাইডার্স অবশ্য বেশ পিছিয়ে। দুইবারের চ্যাম্পিয়ন দলটির কোচিং স্টাফে চেনা মুখ শুধু রায়ান টেন ডাসকাট। নেদারল্যান্ডসের সাবেক এ অলরাউন্ডার পেয়েছেন ফিল্ডিং কোচের দায়িত্ব।

দিল্লি ক্যাপিটালস

দিল্লি ক্যাপিটালসের ক্রিকেট পরিচালক সৌরভ গাঙ্গুলী
রিকি পন্টিং (প্রধান কোচ), সৌরভ গাঙ্গুলী (ক্রিকেট পরিচালক), অজিত আগারকার (সহকারী কোচ), শেন ওয়াটসন (সহকারী কোচ)

অস্ট্রেলিয়ার ‘মহাপরাক্রমশালী’ দলের অধিনায়ক ছিলেন রিকি পন্টিং। সে সময় ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সৌরভ গাঙ্গুলী। দুজন একসময় ছিলেন তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী। সেই তাঁরাই এখন দিল্লি ক্যাপিটালসের ডাগআউট সামলাচ্ছেন। পন্টিং আছেন প্রধান কোচ হিসেবে, সৌরভকে করা হয়েছে ক্রিকেট পরিচালক। পন্টিংয়ের সতীর্থ ও দুবার আইপিএল–জয়ী শেন ওয়াটসন সহকারী কোচের ভূমিকা পালন করছেন। একই পদে আছেন ভারতের হয়ে ২০০৭ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী অজিত আগারকার।

গুজরাট টাইটানস

আশিস নেহরা (প্রধান কোচ), গ্যারি কারস্টেন (ব্যাটিং কোচ ও পরামর্শক)

আইপিএল অভিষেকেই বাজিমাত করেছে গুজরাট টাইটানস। বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা স্বাভাবিকভাবেই কোচিং স্টাফে খুব বেশি পরিবর্তন আনেনি। প্রথম ভারতীয় প্রধান কোচ হিসেবে আইপিএল জেতা আশিস নেহরার ওপরই ভরসা রেখেছে গুজরাট। গ্যারি কারস্টেন আছেন ব্যাটিং কোচ ও পরামর্শকের ভূমিকায়। মজার ব্যাপার হলো, কারস্টেনের অধীনেই ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। সেই দলে তাঁর শিষ্য ছিলেন নেহরা।

লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস

অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার (প্রধান কোচ), গৌতম গম্ভীর (পরামর্শক), জন্টি রোডস (ফিল্ডিং কোচ), মরনে মরকেল (বোলিং কোচ)

আইপিএলের গত মৌসুমে অভিষেক হয়েছে লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসেরও। নবাগত এই দলটি নিজেদের প্রথম আসরেই প্লে–অফ পর্বে খেলেছে। তাদের কোচিং স্টাফেও আছেন কয়েকজন পরিচিত মুখ। প্রধান কোচের দায়িত্বে জিম্বাবুয়েন কিংবদন্তি অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার। ফিল্ডিং কোচ হিসেবে আছেন তর্ক সাপেক্ষে এই বিভাগের সর্বকালের সেরা জন্টি রোডস। রোডসের স্বদেশি মরনে মরকেলকে দেওয়া হয়েছে বোলিং কোচের দায়িত্ব। আর ভারতের হয়ে ওয়ানডে ও টি–টোয়েন্টি দুই সংস্করণের বিশ্বকাপ জেতা গৌতম গম্ভীর পরামর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। কলকাতা দুবারই আইপিএলের শিরোপা জিতেছিল এই গম্ভীরের নেতৃত্বে।

রাজস্থান রয়্যালস

রাজস্থান রয়্যালসের প্রধান কোচ ও ক্রিকেট পরিচালক কুমার সাঙ্গাকারা
কুমার সাঙ্গাকারা (প্রধান কোচ ও ক্রিকেট পরিচালক), লাসিথ মালিঙ্গা (ফাস্ট বোলিং কোচ)

২০০৮ সালে আইপিএলের প্রথম আসরেই চ্যাম্পিয়ন হয় রাজস্থান রয়্যালস। সেই দলটাই পরের ১৩ বছর শিরোপার ধারেকাছেও যেতে পারেনি। অবশেষে গত বছর ফাইনালে ওঠে রাজস্থান। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হলেও দলের কোচিং স্টাফদের কাজ মালিকপক্ষের মনে ধরেছে। সে কারণে দুই লঙ্কান কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারা ও লাসিথ মালিঙ্গাকে তারা ধরে রেখেছে। সাঙ্গাকারা আছেন দ্বৈত ভূমিকায়—প্রধান কোচ ও ক্রিকেট পরিচালক, আইপিএল ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি মালিঙ্গা কাজ করছেন ফাস্ট বোলিং কোচ হিসেবে।

পাঞ্জাব কিংস

ট্রেভর বেলিস (প্রধান কোচ), ব্র্যাড হ্যাডিন (সহকারী কোচ), ওয়াসিম জাফর (ব্যাটিং কোচ), চার্ল ল্যাঙ্গেভেল্ট (ফাস্ট বোলিং কোচ), সুনীল জোশি (স্পিন বোলিং কোচ)

শুরুতে নাম ছিল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। বর্তমান নাম পাঞ্জাব কিংস। তবে নাম বদলালেও ভাগ্য বদলায়নি পাঞ্জাবের। সব কটি আসরে অংশ নিলেও এখনো ট্রফি ছুঁয়ে দেখা হয়নি বলউড অভিনেত্রী প্রীতি জিনতার দলের। অধরা শিরোপা জিততে এবার প্রধান কোচ হিসেবে পাঞ্জাব এমন একজনকে এনেছে, দলকে যাঁর চ্যাম্পিয়ন বানানোর কৃতিত্ব আছে। কলকাতাকে দুবার আইপিএল শিরোপা ও ইংল্যান্ডকে ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতানো ট্রেভর বেলিসকে গুরু দায়িত্ব দিয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞ এই কোচ সহকারী হিসেবে পেয়েছেন স্বদেশি ব্র্যাড হ্যাডিনকে। হ্যাডিন অস্ট্রেলিয়ার ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য। পাঞ্জাবের ব্যাটিং, ফাস্ট বোলিং ও স্পিন কোচের দায়িত্ব পালন করছেন ওয়াসিম জাফর, চার্ল ল্যাঙ্গাভেল্ট ও সুনীল জোশি। ৩ জনের সঙ্গের জড়িয়ে বাংলাদেশের নাম। ২০০০ সালে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছিলেন সাবেক ভারতীয় অলরাউন্ডার জোশি। জাফর বর্তমানে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলেরও ব্যাটিং পরামর্শক। আগামী বছর তাঁর সঙ্গে চুক্তি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে বিসিবির। আর ল্যাঙ্গাভেল্ট ২০১৯ সালে বাংলাদেশের ফাস্ট বোলিং কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। দায়িত্ব নেওয়ার ৬ মাসের মাথায় পদত্যাগ করেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান।

সানরাইজার্স হায়দরাবাদ

বেঙ্গালুরুর বিরাট কোহলির সঙ্গে কথা বলছেন হায়দরাবাদের প্রধান কোচ। ছবিটি গত মৌসুমের
ব্রায়ান লারা (প্রধান কোচ), মুত্তিয়া মুরালিধরন (স্পিন বোলিং ও কৌশলগত কোচ), ডেল স্টেইন (ফাস্ট বোলিং কোচ), রায়ান কুক (ফিল্ডিং কোচ), মারিও ভিল্লাভারায়ন (শারীরিক প্রশিক্ষক)

হেভিওয়েট কোচিং স্টাফের তালিকায় পিছিয়ে নেই সানরাইজার্স হায়দরাবাদও। ২০১৬ আসরের চ্যাম্পিয়নরা এবার প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে ‘ক্রিকেটের বরপুত্র’ ব্রায়ান লারাকে। হায়দরাবাদকে দিয়েই কোচিং স্টাফের শীর্ষ পদে হাতেখড়ি হয়েছে লারার। স্পিন বোলিং ও কৌশলগত কোচ হিসেবে আছেন লঙ্কান কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরন। ফাস্ট বোলিং কোচ করা হয়েছে ডেল স্টেইনকে। দলটির ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক আর শারীরিক প্রশিক্ষক মারিও ভিল্লাভারায়ন। বাংলাদেশ দলেরও এই পদ দুটিতে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন কুক ও ভিল্লাভারায়ন।

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু

মাইক হেসন (ক্রিকেট পরিচালক)

কখনো শিরোপা জিততে না পারলেও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর আছে বিশাল ভক্তকুল। ক্রিস গেইল, এবি ডি ভিলিয়ার্স আর বিরাট কোহলি তো ফ্র্যাঞ্চাইজিটির সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপনই হয়ে গেছেন। তবে তারকাসমৃদ্ধ কোচিং স্টাফের ভিড়ে সম্ভবত বেঙ্গালুরুই সবার পেছনে। তাদের কোচিং প্যানেলে নেই বড় কোনো নাম। এক মাইক হেসনই ক্রিকেট মহলে যা একটু সমাদৃত। নিউজিল্যান্ডকে ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে তোলা হেসনকে ক্রিকেট পরিচালকের দায়িত্ব দিয়েছে বেঙ্গালুরু।