বৃথা গেছে সূর্যকুমারের ঝোড়ো ফিফটি
বৃথা গেছে সূর্যকুমারের ঝোড়ো ফিফটি

সূর্যকে দমিয়ে মুম্বাইকে থামাল পাঞ্জাব

৪ বলে দরকার ১৫ রান। তিলক ভার্মার কাছ থেকে তখন বড় কিছুর আশায় মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। এত তারকা থাকতেও তিলকের ওপরই ভরসা রাখার কারণ আইপিএলের এ মৌসুমে তিনিই মুম্বাইয়ের সেরা ব্যাটসম্যান।

কিন্তু তিলক পারলেন না। অর্শদীপ সিংয়ের করা ‘পিন পয়েন্ট’ ইয়র্কারে তিলকের মিডল স্টাম্প উড়ে যাওয়ার আগে ভেঙেই গেল। স্টাম্প ভাঙতে দেখে ধারাভাষ্যকার কেভিন পিটারসেন বললেন, ‘এতে আসলে মুম্বাইয়ের মেরুদণ্ডই ভেঙে গেছে।’

কার্যত মুম্বাইয়ের মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে আরেকটু আগে সেই আর্শদীপই রাতের আকাশেও ছড়াতে থাকা ‘সূর্যের উত্তাপ’ নিবারণের মধ্য দিয়ে। আইপিএল ক্যারিয়ারে নিজের দ্রুততম ফিফটি তুলে নিয়ে মুম্বাইকে কক্ষপথেই রেখেছিলেন সূর্যকুমার যাদব। ১৮তম ওভারে তিনি আউট হতেই রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের দমও প্রায় শেষ।

৪ উইকেট নিয়ে পাঞ্জাবকে জিতিয়েছেন আর্শদীপ

ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে রান–বন্যার ম্যাচে তাই শেষ হাসি পাঞ্জাব কিংসের। টানা ৩ ম্যাচ জেতা মুম্বাইকে ১৪ রানে হারিয়েছে পাঞ্জাব। টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে অধিনায়ক স্যাম কারেনের ফিফটিতে ৮ উইকেটে ২১৪ রানের পাহাড় গড়েছিল প্রীতি জিনতার দল। তবে শেষ দিকে আর্শদীপের দুর্দান্ত বোলিংয়ে স্বাগতিকদের থামতে হয়েছে ৬ উইকেটে ২০১ রানে।

এ জয়ে নতুন এক কীর্তিও গড়ল পাঞ্জাব। আইপিএলে মুম্বাইকে সবচেয়ে বেশিবার হারানোয় দিল্লি ক্যাপিটালস ও চেন্নাই সুপার কিংসের পাশে নাম লেখাল পাঞ্জাব। তিন দলই মুম্বাইকে হারিয়েছে ১৫ বার করে। তবে সবচেয়ে কম খেলতে হয়েছে পাঞ্জাবকেই—৩০ ম্যাচ।

আইপিএল ক্যারিয়ারে তৃতীয় ফিফটি দেখা পেয়েছেন স্যাম কারেন

শিখর ধাওয়ান চোট থেকে সেরে না ওঠায় এ ম্যাচেও পাঞ্জাবকে নেতৃত্ব দেন স্যাম কারেন। মূলত তাঁর ব্যাটেই বিদ্যুৎগতি পেয়ে পাঞ্জাবের ইনিংস। প্রথম ১০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৮৩ রান তুলেছিল তারা। সেই দলটাই শেষ ৫ ওভারে ৯৬ রান নিয়েছে কারেনের গড়ে দেওয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে। আইপিএল ইতিহাসে শেষ ৫ ওভারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান এটি। ২০১৬ সালে গুজরাট লায়ন্‌সের বিপক্ষে বিরাট কোহলি–এবি ডি ভিলিয়ার্সের নেওয়া ১১২ রানের কীর্তিটা এখনো সবার ওপরেই আছে।

পঞ্চম উইকেটে হারপ্রীত সিং ভাটিয়াকে নিয়ে ৪৮ বলে ৯২ রানের জুটি গড়েন কারেন। এ জুটি গড়ার পথে আইপিএল ক্যারিয়ারে তৃতীয় ও অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ফিফটির দেখা পান সর্বশেষ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়। শেষ দিকে মহাপ্রলয় বইয়ে দেন জিতেশ শর্মা। ৭ বলেই করেন ২৫ রান। আইপিএলে ন্যূনতম ২৫ রানের ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যা সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেটের রেকর্ড।

উইকেট পেলেও আজ বেশ খরুচে ছিলেন শচীনপুত্র অর্জুন

আগের ২ ম্যাচে দারুণ বোলিং করে প্রশংসিত হয়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকারের ছেলে অর্জুন টেন্ডুলকার। তবে আজ মুম্বাই বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে খরুচে ছিলেন অর্জুন। ১ উইকেট পেলেও ৩ ওভারে দেন ৪৮ রান।

রান তাড়ায় শুরুতে ঈশান কিষান আউট হলেও ক্যামেরন গ্রিনকে নিয়ে দারুণ ভিত গড়ে দিয়েছিলেন রোহিত। দলীয় ৮৪ রানে মুম্বাই অধিনায়ক ফিরলেও গ্রিনের সঙ্গে ৩৬ বলে ৭৫ রান যোগ করে জয়ের আশা জিইয়ে রাখেন সূর্যকুমার।

কিন্তু বোলারদের অসহায়ত্বের রাতে যেন ভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছিলেন আর্শদীপ। ১৮তম ওভারে সূর্যকুমারকে ফিরিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। আর শেষ ওভারে ১৬ রান ডিফেন্ড করে এসে যা করলেন, সেটা আর্কাইভে রেখে দেওয়ার মতোই—১, ০, উ, উ, ০, ১। দুই উইকেট, দুই ডট, দুই সিঙ্গেল। ব্যস, খেল খতম!

সংক্ষিপ্ত স্কোর

পাঞ্জাব কিংস : ২০ ওভারে ২১৪/৮

(কারেন ৫৫, হারপ্রীত ৪১, তাইদে ২৯; চাওলা ২/১৫, গ্রিন ২/৪১, বেহরেনডর্ফ ১/৪১)

মুম্বাই ইন্ডিয়ানস : ২০ ওভারে ২০১/৬

(গ্রিন ৬৭, সূর্যকুমার ৫৭, রোহিত ৪৪; আর্শদীপ ৪/২৯, লিভিংস্টোন ১/২৩, এলিস ১/৪৪)

ফল : পাঞ্জাব কিংস ১৪ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ : স্যাম কারেন।