বাংলাদেশের ব্যাটিং কীভাবে ভালো হবে

এই বিশ্বকাপের আগে কিছু জিনিস প্রত্যাশিতই ছিল। যে কন্ডিশনে খেলা হবে, সেখানে ব্যাটিংয়ের ভূমিকাটা বেশি থাকবে, বড় রান করাটা জয়-পরাজয়ে মুখ্য হয়ে উঠবে—পূর্বানুমান এমনই ছিল। সেদিক থেকে বাংলাদেশ যে তিনটি ম্যাচ খেলেছে, সেখানে ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স বিশ্বকাপের চাহিদাপত্রের সঙ্গে একেবারেই যায় না। বাংলাদেশ আফগানিস্তানকে হারিয়েছে ঠিক, কিন্তু সে জয়টা এসেছে মূলত বোলারদের সৌজন্যে। পাশাপাশি অনিয়মিত ওপেনার মিরাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তো ছিলই।

পরের দুটি ম্যাচেও ব্যাটিংয়ের দুর্বলতাটা সামনে আসতে দেখলাম। শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়, বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের এই রুগ্‌ণ চেহারাটা বিশ্বকাপের আগেও ছিল। দলের পারফরম্যান্স যদি ব্যবচ্ছেদ করি, তাহলে দেখবেন, এই বছর আগে ব্যাটিং করা ১৩টি ম্যাচের মধ্যে ৬টিতেই বাংলাদেশ ৫০ ওভার খেলতে পারেনি। গত মার্চে আয়ারল্যান্ডের সিরিজের পর ওপেনিং থেকে ১০০ রানের জুটি দেখি না। গত ১০ ম্যাচে সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটি ৬০ রানের। তা–ও আবার অনিয়মিত ওপেনার মিরাজের সৌজন্যে।

মিরাজ ছাড়া এ বছর কোনো নিয়মিত ওপেনার এখন পর্যন্ত সেঞ্চুরি করেনি। ইনিংসের শুরুতেই বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের দিকে যদি তাকাই, তাহলে নাজমুলের কথা বলতেই হয়। আরও একজন খুঁজতে গেলে মুশফিককে পাব। এ ছাড়া ব্যাটিং যাদের মূল দায়িত্ব, তাদের কাউকেই ধারাবাহিকভাবে রান করতে দেখছি না। নাজমুল বা মুশফিকের কথা বলছি ঠিকই, কিন্তু তাদের রানকেও আহামরি বলার সুযোগ নেই, বড় জোর চলনসই বলা যায়। সব দিক বিবেচনায় মিরাজই বোধ হয় এই মুহূর্তে আমাদের সেরা ব্যাটসম্যান।

এতেই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ছবিটা পরিষ্কার হয়ে যায়। এত এত ব্যর্থতার পরও একটা দল জিতবে, এটা অনেকটা অতি কল্পনা। এরপরও যে কয়টি জয় বাংলাদেশ পেয়েছে, সেটা এসেছে মূলত বোলারদের সৌজন্যে। ব্যাটিং সেই অর্থে বাংলাদেশকে বেশি কিছু দেয়নি।

মিরাজ ছাড়া এ বছর কোনো নিয়মিত ওপেনার এখন পর্যন্ত সেঞ্চুরি করেনি

অথচ লিটন, নাজমুল, হৃদয়রা এ বছরই বিভিন্ন সময় রান করেছে, দলকে জিতিয়েছে। কিন্তু এখন তাদের কেউই বিশ্বকাপে রান করতে পারছে না। দলটাকে বড় টুর্নামেন্টের জন্য ঠিকমতো গুছিয়ে নিতে না পারা হয়তো বড় একটা কারণ। চিন্তা করে দেখুন, বাংলাদেশ বিশ্বকাপের তৃতীয় ম্যাচ পর্যন্ত চূড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। অথচ এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছয় মাস আগেই শেষ হওয়া দরকার ছিল।

এতটা অস্থিতিশীল অবস্থায় অন্তত ব্যাটিং ভালো হয় না। বেশির ভাগ ব্যাটসম্যানই একটা নির্দিষ্ট জায়গায় ব্যাটিং করতে চায়। বাংলাদেশে সেটা হচ্ছে কই! তবে সব তো শেষ হয়ে যায়নি। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার দুটি ম্যাচে যদি বাংলাদেশ নিজেদের গুছিয়ে নিতে পারে, তাহলে পরবর্তী চারটি ম্যাচের মধ্যে দু-তিনটা হয়তো জিততে পারে। শুধু তো বিশ্বকাপ নয়, ওই স্থিতিশীলতা হয়তো বিশ্বকাপের পরও বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।