নাথান লায়ন
নাথান লায়ন

স্মিথ-ওয়ার্নার-ব্যানক্রফটদের কেলেঙ্কারির যে খেসারত দিয়েছেন লায়নও

২০১৮ সালের সেই গ্রীষ্মের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটকে, তোলপাড় ফেলেছিল বিশ্ব ক্রিকেটেও।
বছর ছয়েক আগে কেপটাউন টেস্টে সেই কুখ্যাত বল টেম্পারিং-কাণ্ডে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার তখনকার অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ও সহ–অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার। ক্যামেরন ব্যানক্রফট নিষিদ্ধ হয়েছিলেন ৯ মাসের জন্য। শুধু তা-ই নয়, দুই বছরের জন্য নেতৃত্বের নিষেধাজ্ঞায় পড়েছিলেন স্মিথ। আর ওয়ার্নারের ভাগ্যে জুটেছিল আজীবন নেতৃত্বের নিষেধাজ্ঞা।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বহুল আলোচিত সেই টেস্টে অস্ট্রেলিয়া দলে ছিলেন অফ স্পিনার নাথান লায়নও। বাকি তিন সতীর্থের মতো তিনি কোনো বিতর্কে না জড়ালেও সেই বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারির একটা খেসারত দিতে হয়েছিল তাঁকেও। সেই টেস্টে একটা মাইলফলক ছুঁয়েও এর স্মারকটা নিজের কাছে রাখতে পারেননি।

কী সেই মাইলফলক? অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৫৩০ টেস্ট উইকেটের মালিক অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম নিউজ কর্প-কে বলেছেন সেই গল্পটা, ‘কাগিসো রাবাদাকে স্টাম্পড করে আমি টেস্টে আমার ৩০০তম উইকেট পেয়েছিলাম। কেপটাউন টেস্টের ঘটনা সেটি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এরপর আর সেই বলটা আমি চোখে দেখিনি। আসলে, আমার মনে হয়, ওই ম্যাচে যা কিছু ঘটেছে, এরপর আর কেউ আর সেই বল খুঁজেও দেখেনি।’

টেস্ট ক্যারিয়ারের ৩০০তম উইকেট পাওয়ার পর লায়নকে সতীর্থদের অভিনন্দন

কেপটাউনে প্রথম ইনিংসে ২টি ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৩টি উইকেট পেয়েছিলেন লায়ন। রাবাদার উইকেটটি ছিল প্রথম ইনিংসে তাঁর প্রথম উইকেট এবং টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর ৩০০তম। যে বলে লায়ন সেই উইকেটটি নিয়েছিলেন, সেটি ছিল প্রথম ইনিংসের দ্বিতীয় নতুন বল। ব্যানক্রফট যে বলে শিরিষ কাগজ ঘষেছিলেন, সেটি নয়।


তবে আইসিসির ম্যাচের সেই ঘটনা তদন্তে অন্য সবকিছুর সঙ্গে ওই বলটাও দুই বছর নিজেদের কাছে রেখে দেয়। পরে সেই বলটা খোঁজার অনেক চেষ্টা করেছেন লায়ন, এমনকি সাহায্য চেয়েছিলেন আইসিসির ম্যাচ রেফারি ডেভিড বুনেরও। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন বুনও। সেই ঘটনা বর্ণনা করে লায়ন জানালেন, ‘আমি সেই ২০২০-২১ মৌসুমের কোভিড-গ্রীষ্মে টিম হোটেলের বারান্দায় তাঁকে পেয়ে অনুরোধ করলাম সেই বলটা খুঁজে দিতে। একজন ম্যাচ রেফারি হিসেবে তিনি আইসিসির সঙ্গে যোগাযোগও করেছিলেন, এবং এটি খুঁজে বের করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এটি যেন নিখোঁজ হয়ে গেছে! জানি না এটা কোথায়। এরপর আর কোনো যোগাযোগ নেই। এই হচ্ছে ঘটনা।’

ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সব মাইলফলকেরই কোনো না কোনো স্মারক নিজের কাছে রেখেছেন লায়ন। নিউজ কর্প-কে বলেছেন, ‘আমার স্ত্রী দারুণ একটা কাজ করেছে, বাড়ির একটা দেয়ালে সে আমার সব মাইলফলক বল বা অর্জনের স্মারকগুলো সাজিয়ে রেখেছে, যা দেখতে দারুণ লাগে। এটি এমন কিছু, যা নিয়ে আমি গর্বিত এবং প্রতিদিন এর পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আমি কিছুটা অনুপ্রেরণাও পাই।’
ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ উইকেট, বিগ ব্যাশের প্রথম উইকেট, টেস্ট ক্যারিয়ারের ১০০, ২০০তম থেকে ৫০০তম উইকেটের বল, সবই তাঁর সংগ্রহে আছে, নেই শুধু সেই ৩০০তম উইকেট নেওয়ার বলটা।

লায়নই তাঁর ৩০০তম উইকেট নেওয়া বলটা পেলেন না আজও


এই আক্ষেপের সঙ্গেই লায়ন আবার মজা করে বলেছেন, ‘কিছু স্মারক অনেক আগের, আমি এগুলো নিয়ে গর্বিত। এখন আমার মেয়েরা বেশ বড় হয়েছে এবং প্রশ্ন করতে শিখেছে, এটা কিসের (বল), ওটা কিসের। যদিও আমার মনে হয়, ওরা লাল বলগুলোর চেয়ে গোলাপিগুলো নিয়েই বেশি উচ্ছ্বসিত। আমি এসবের জন্য কৃতজ্ঞ। হয়তো আমি যেকোনো একটা বল সেখানে রেখে দিতে পারতাম এবং বলতে পারতাম, এটাই ৩০০তম উইকেটের বল। কেউ জানত না। জানত? এখন জায়গাটা ফাঁকাই আছে।’
স্মিথ-ওয়ার্নার-ব্যানক্রফট পরে নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত হয়েছেন, স্মিথ অধিনায়কত্বও করেছেন অস্ট্রেলিয়ার। জাতীয় দল থেকে অবসর নিলেও অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে ওয়ার্নারের অধিনায়কত্ব থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে সম্প্রতি। সবাই সবকিছু ফিরে পেলেও শুধু লায়নই তাঁর সেই ৩০০তম উইকেট নেওয়া বলটা পেলেন না আজও!