৮ ম্যাচ খেলেই শীর্ষ পাঁচ উইকেট সংগ্রাহকদের কাতারে সাইফউদ্দিন
৮ ম্যাচ খেলেই শীর্ষ পাঁচ উইকেট সংগ্রাহকদের কাতারে সাইফউদ্দিন

কথা দিয়ে কথা রেখেছেন সাইফউদ্দিন

কথা রেখেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। গত জানুয়ারিতে চোট কাটিয়ে বিপিএল দিয়ে মাঠে ফেরার আশা জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, মাঠে ফিরতে পারলে করবেন বিশেষ কিছু। সেই সাইফউদ্দিন মাঠে ফিরেছেন, বিশেষ কিছুও করেছেন।

এবার বিপিএলে মাত্র ৮ ম্যাচ খেলেই তিনি শীর্ষ পাঁচ উইকেট সংগ্রাহকদের কাতারে। নিয়েছেন ১৪ উইকেট, সেটাও ওভারপ্রতি মাত্র ৬.৪৯ রান খরচ করে। বরিশালকে ফাইনালে তুলতেও বড় ভূমিকা রেখেছেন এই পেস অলরাউন্ডার।

চোটের সঙ্গে সাইফউদ্দিনের ‘বন্ধুত্ব’ অনেক দিনের। ক্যারিয়ারে কখনো টানা দুই মৌসুম চোটমুক্ত কাটানোর নজির নেই তাঁর। বেশির ভাগ সময়েই চোট থেকে ফেরার লড়াই করতে হয়। চোটের কারণে খেলতে পারেননি গত বিপিএলও। এবার বিপিএল দিয়ে মাঠে ফেরার আগে সাইফউদ্দিনের সর্বশেষ প্রতিযোগিতাপূর্ণ ম্যাচ খুঁজতে ফিরতে হয় ২০২৩ সালের মে মাসে—ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ।

আর সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ২০২২ সালের অক্টোবরে নিউজিল্যান্ড সফরে। প্রথম শ্রেণির ম্যাচ তো খেলেছেন আরও আগে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিসিএলে। এবারের বিপিএলেও শুরু থেকে খেলতে পারেননি। এই অলরাউন্ডার যখন ফিরেছেন, তত দিনে তাঁর দল বরিশাল ৬টি ম্যাচ খেলে ফেলেছে।

টুর্নামেন্টে সাইফউদ্দিনের উইকেট ১৪টি

অনেক দিন পর মাঠে ফেরা সাইফউদ্দিন কেমন করবেন, এ নিয়ে একটা শঙ্কার জায়গা তো ছিলই। সাইফউদ্দিন প্রথম ম্যাচেই সেই শঙ্কা খানিকটা দূর করেছিলেন। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ‘পাওয়ার প্লে’ ও ‘ডেথ ওভার’ মিলিয়ে ৪ ওভার বোলিং করে ২৪ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। ব্যাটিংয়ে নেমে ১৮ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় করেন অপরাজিত ৩০ রান। পরের ম্যাচে সাইফউদ্দিন ঢাকার বিপক্ষে নেন ২১ রানে ৩ উইকেট। সেদিন ব্যাটিংয়ে সুযোগ পাননি। অবশ্য এবারের টুর্নামেন্টে তিনি ব্যাট হাতে সুযোগ পেয়েছেন খুবই কম। ৪ ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে আউট হয়েছেন মাত্র একবার, করেছেন ৬৩ রান। স্ট্রাইক রেট ১৮৫.৩০!

সাইফউদ্দিনের বোলিংয়ে ফেরা যাক। চোট থেকে ফিরে দ্বিতীয় ম্যাচে ৩ উইকেট নেওয়া এই পেসার পরের ম্যাচেও ঢাকার বিপক্ষেই নেন ৩ উইকেট। এমন দারুণ শুরুর পর সাইফউদ্দিন এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে মাত্র একটি ম্যাচেই উইকেট পাননি, সেটি গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রংপুরের বিপক্ষে। যেটা আবার গতকাল সেই রংপুরের বিপক্ষে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে পুষিয়ে দিয়েছেন।

ওপেনিং স্পেলে আউট করেছেন রংপুরের ফর্মে থাকা দুই ব্যাটসম্যান মেহেদী হাসান ও সাকিব আল হাসানকে। এতে শুরুতেই চাপে পড়ে রংপুর। সবচেয়ে বড় বিষয় মাঠে ফেরার পর নতুন বলে নিয়মিত কাইল মায়ার্সের সঙ্গী হয়েছেন। কখনো কিপটে বোলিং, কখনো উইকেট নিয়ে বরিশালকে বল হাতে দারুণ শুরু এনে দিয়েছেন।

সাইফউদ্দিনের বোলিংয়ে ছিল ইয়র্কার, স্লোয়ার, বাউন্সারের মিশেল। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন বৈচিত্র্য—সেটা লাসিথ মালিঙ্গার বিখ্যাত স্লিঙ্গি অ্যাকশন! ওভারে মাঝেমধ্যেই বল করেন স্লিঙ্গিং অ্যাকশনে। পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলা সাইফউদ্দিনের ফাইনাল ‘পরীক্ষা’ আগামীকাল। দেখা যাক, সেই পরীক্ষায় আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারাইনদের সামনে তিনি কেমন করেন!

জ্যাকেট পরে গ্যালারিতে দৌড়াচ্ছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। মাঠে ফেরার লড়াইয়ের সময়।

সাইফউদ্দিন ভালো করতে পারলে দেশের ক্রিকেটের লাভ। একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের জন্য বাংলাদেশ দলের হাহাকার নতুন নয়। তাই চোটমুক্ত আর দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে বিপিএল শেষ করতে পারলে তাঁকে নিয়ে নির্বাচকেরাও হয়তো ভাবতে বাধ্য হবেন। সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে যে সাইফউদ্দিনের নামটা এখনো সবার আগে আসে!