একদিকে ‘বাজবল’, অন্যদিকে প্রথাগত টেস্ট ক্রিকেট। একদিকে টেস্টের চিরচেনা চিত্রনাট্য অন্যদিকে সেই চিত্রনাট্য ভেঙে নতুন কিছু করার চেষ্টা। টেস্ট ক্রিকেট খেলার কোন ধরন আপনাকে রোমাঞ্চিত করে? প্রশ্নটা ক্যারিবিয়ান তারকা ক্রিস গেইলের।
গেইল অপ্রাসঙ্গিকভাবে এই প্রশ্ন করেননি। ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি প্রশ্নটা রেখেছেন, অ্যাশেজে প্রথম টেস্টের প্রথম দুই দিন দেখে। যেখানে ইংল্যান্ড ব্রেন্ডন ম্যাকক্যালামের মস্তিষ্কপ্রসূত, আক্রমণাত্মক-ফলকেন্দ্রিক টেস্ট ক্রিকেটের সমার্থক হয়ে ওঠা ‘বাজবল’ খেলে দাপট দেখানোর চেষ্টা করছে। আর অস্ট্রেলিয়া আপাতত জবাবটা দিচ্ছে প্রথাগতভাবে টেস্টের প্রথাগত ব্যাটিংয়ে।
টেস্টে প্রথাগত ব্যাটিং সম্পর্কে নিশ্চয় সবার ধারণা আছে। দিনের প্রথম ঘণ্টা বোলারদের দিয়ে ধীরে ধীরে বড় সংগ্রহের দিকে যান ব্যাটসম্যানরা। হারের সম্ভাবনা এড়িয়ে এরপর খেলাটা হয় জয়ের জন্য। ‘বাজবল’ এই প্রথা মেনে খেলা হয় না।
ইংল্যান্ডের এই কৌশলে প্রথম ঘণ্টা দূরে থাক, প্রথম বলটাও ছাড়তে রাজি না! এবারের অ্যাশেজের প্রথম বলটা যেভাবে জ্যাক ক্রলি কাভার দিয়ে বাউন্ডারি ছাড়া করেছেন সেরকমই। বাজবল শুধু বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তোলায় সীমাবদ্ধ নয়, বাজবল ক্রিকেটটা খেলা হয় গ্যালারির দর্শকদের বিনোদনের কথা মাথায় রেখেও। দিন শেষে এই কৌশলের মূলমন্ত্র একটাই—জয় পরাজয়ের ঊর্ধ্বে গিয়ে ‘বিনোদন’ দেওয়া।
এবারের অ্যাশেজে প্রথম দিনে তাকালেও অনেক কিছু স্পষ্ট হয়ে উঠবে। প্রথম দিনে মাত্র ৭৮ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৯৩ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে দিয়েছিল ইংল্যান্ড। যখন জো রুটের মতো ব্যাটসম্যান ১১৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। অবশ্য তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। গত এক বছরে এ নিয়ে ৪ বার ৯০ ওভার ব্যাটিংয়ের আগে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছে ইংল্যান্ড। গত ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে তো ৫৮.২ ওভারেই ব্যাটিং ছেড়ে দিয়েছিলেন স্টোকস। এটাই ইংল্যান্ডের বর্তমান টেস্ট দলের খেলার ধরন।
তবে অস্ট্রেলিয়া প্রথাগত উপায়ে জবাবটা দিয়ে কি খুব বেশি পিছিয়ে আছে? বোধ হয় না। কারণ, ৩৯৩ রানের জবাবে ওভারপ্রতি গড়ে ৩.৩ করে রান তুলে অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় দিন শেষে রান ৫ উইকেটে ৩১১। ক্রিজে আছেন সেঞ্চুরিয়ান উসমান খাজা, সঙ্গে ফিফটি পাওয়া অ্যালেক্স ক্যারি। অর্থাৎ প্রথম ইনিংসে এখন অস্ট্রেলিয়ার লিড নেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ক্রিস গেইল হয়তো একই টেস্টে এমন দুই ধরনের কৌশল দেখে নিজেও রোমাঞ্চিত হয়েছেন। সে কারণে টুইটারে ভক্তদের প্রতি প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়েছেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটে কী দারুণ একটা দিন। অস্ট্রেলিয়া রান তুলেছে ওভার প্রতি গড়ে ৩.৩, যেখানে প্রথম দিনে ইংল্যান্ডের রানরেট ছিল ৫.০৩। পুরোটাই ছিল বাজবলের প্রদর্শনী। শুরুর ধাক্কা সামলে অস্ট্রেলিয়াও লিড নেওয়ার পথে। টেস্ট ক্রিকেটের কোন ধরনটা আপনাকে রোমাঞ্চিত করে?’