আবারও চাপে পাকিস্তান
আবারও চাপে পাকিস্তান

মেলবোর্ন টেস্ট: আবারও সহজ ক্যাচ ছেড়ে বিপদে পাকিস্তান

আবদুল্লাহ শফিক হাত দিয়ে মুখ লুকালেন। এ ছাড়া আর কীই–বা করার আছে! ভুল যা করার, তা তো করেই ফেলেছেন। আসলে ভুল বলাটাও একধরনের ভুল। এর চেয়ে অপরাধ বলাই বোধ হয় ভালো।

আবারও স্লিপে সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন শফিক। এবার মিচেল মার্শের। তিনি যখন মার্শের ওই সহজ ক্যাচ ছাড়েন, তখন অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ছিল ৪৬ রানে ৪ উইকেট। মার্শের রান ২০। সেই মার্শ পরে আউট হন ৯৬ রানে। সেটাও স্লিপে সালমান আগার দুর্দান্ত ক্যাচে। তবে ততক্ষণে অস্ট্রেলিয়াকে সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছে গেছে। লিড নিয়ে ফেলেছে ২২৩ রানের।

অথচ শফিক যখন ক্যাচ ছাড়েন, তখন লিড ছিল ১০০ রান। সে সময় মার্শ ফিরে গেলে মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টের গল্পটা অন্যভাবে লেখা হতে পারত। তৃতীয় দিন শেষে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ৬ উইকেটে ১৮৭ রান। এগিয়ে আছে ২৪১ রানে ।

প্রথম ইনিংসেও ওয়ার্নারের সহজ ক্যাচ ছেড়েছিলেন শফিক। দুটি ক্যাচের মধ্যে কোনটা বেশি সহজ, সেটা নিয়েই বরং আলোচনা হতে পারে। মার্শের ক্যাচ ছাড়া দেখে ধারাভাষ্যকক্ষে থাকা মার্ক ওয়াহ বলেই ফেললেন, ‘মনে হয় যেন কুমিরের চোয়াল দিয়ে বল ধরার চেষ্টা করছে।’

মার্শ ফেরেন ৯৬ রানে

পার্থে প্রথম টেস্টেও ক্যাচ ছেড়েছিলেন শফিক। মেলবোর্ন টেস্টেও তাঁর একাধিক ক্যাচ মিসের মাশুল দিতে হচ্ছে পাকিস্তানকে। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ৩১৮ রানের জবাবে আজ পাকিস্তানের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ২৬৪ রানে। সফরকারীরা পিছিয়ে থাকে ৫৪ রানে। বোলিং সহায়ক কন্ডিশনে ২৬৪ রানও মন্দ হতো না, যদি না প্রথম ইনিংসে পাকিস্তান ৫২ রান অতিরিক্ত দিত।

৫৪ রানে পিছিয়ে থেকে পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে দুর্দান্ত শুরু করেছিল। ১৬ রানেই তুলে নিয়েছিল ৪ উইকেট। গত ১১২ বছরে মেলবোর্নে যেটি অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বাজে শুরু। শুরুটা ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ওপেনার উসমান খাজাকে শূন্য রানে ফিরিয়ে। শাহিন শাহ আফ্রিদির করা শর্ট লেংথে করা বল আউট সুইং করলে এজ হয় খাজার।

টেস্টে মেলবার্নে শেষ ইনিংস খেললেন ওয়ার্নার

মধ্যাহ্নভোজ বিরতির শেষ বলে আফ্রিদি ফেরান মারনাস লাবুশেনকে। এরপর বিরতির পর মীর হামজার শর্ট আউটসাইড অফে করা বলে পুল করতে গিয়ে এজ হয়ে বোল্ড হন ওয়ার্নার। হামজার পরের বলেই বোল্ড হন ট্রাভিস হেড। বাঁহাতি এই পেসারের ফুল লেংথে ভেতরে ঢোকা বলে কূলকিনারা খুঁজে পাননি হেড।

মার্শ ক্রিজে এসে স্মিথকে সঙ্গে নিয়ে ১৫৩ রানের জুটি গড়েন, যে জুটিতে স্মিথ সামলেছেন এক প্রান্তে আটকে রাখার দায়িত্ব। তাঁর প্রথম বাউন্ডারি পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১০১ বল, যেটা তাঁর ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাউন্ডারির জন্য অপেক্ষা। এর আগে এই পাকিস্তানের বিপক্ষেই দুবাইয়ে ২০১৪ সালে ১৭৫ বলে ৫৫ রান করার পথে ১৩৪ বল খেলার পর প্রথম বাউন্ডারি মেরেছিলেন স্মিথ। স্মিথ আজ টেস্ট ক্যারিয়ারের ৪০তম অর্ধশতক পেয়েছেন। যদিও ইনিংস বড় করতে পারেননি স্মিথ। আফ্রিদির বলে দিনের একেবারে শেষ দিকে উইকেট দিয়েছেন তিনি। স্মিথ আউট হওয়ার পরই দিনের খেলা শেষ ঘোষণা করা হয়।

অন্যদিকে পার্থ টেস্টের দুই ইনিংসে অর্ধশতক পাওয়া মার্শ আজও শতক পেলেন না। ১৩ চারে ১৩০ বলে ৯৬ করেন মার্শ। গত জুলাইয়ে টেস্ট দলে ফেরার পর ১০ ইনিংসে এটি মার্শের পঞ্চম পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস। পাকিস্তানের হয়ে দুই উইকেট নিয়েছেন আফ্রিদি। হামজা নিয়েছেন ৩ উইকেট।

পাকিস্তানের হয়ে আফ্রিদি ও হামজা নিয়েছেন ৩ উইকেট। এর আগে ৬ উইকেটে ১৯৪ রান নিয়ে ব্যাটিং করতে নামা পাকিস্তান ২১৫ রানে হারায় ৭ উইকেট। ৪২ রান করে কামিন্সের বলে ফেরেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। রিজওয়ান ফিরে গেলেও আমের জামাল, আফ্রিদিদের ছোট ছোট জুটিতে পাকিস্তান ২৬৪ রান তুলতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দশমবারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট নেন কামিন্স। লায়ন নেন ৪ উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস : ৯৬.৫ ওভারের ৩১৮

(লাবুশেন ৬৩, খাজা ৪২; জামাল ৩/৬৪, হামজা ২/৫১)

পাকিস্তান ১ম ইনিংস : ৭৩.৫ ওভারে ২৬৪

(শফিক ৬২, মাসুদ ৫৪; কামিন্স ৫/৪৮, লায়ন ৪/৭৩)

অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস : ৬২.৩ ওভারে ১৬৭/৬

(মার্শ ৯৬, স্মিথ ৫০; হামজা ৩/২৭, আফ্রিদি ৩/৫৮)

* তৃতীয় দিন শেষ অস্ট্রেলিয়া ২৪১ রানে এগিয়ে।