মিরপুর টেস্ট জিততে পারেনি বাংলাদেশ। আজ চতুর্থ দিনে এসে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেছে ৪ উইকেটে। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটে এই টেস্ট শুরুর পর প্রথম দিনের খেলা শেষে অনেকেই তখন বলাবলি করেছেন, ম্যাচটা দুই দিনে শেষ হয়ে যেতে পারে! কারণটাও নিশ্চয়ই সবার জানা।
প্রথম দিনেই পড়েছিল মোট ১৫ উইকেট। দুই দল মিলে রান তুলতে পেরেছিল মাত্র ২২৭। খেলা হয়েছে মোট ৭৯ ওভার, এর মধ্যে দুই দল মিলিয়ে দেড় ইনিংস নেই! বাংলাদেশ অলআউট হওয়ার পর ৫ উইকেট হারিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। প্রথম দিনেই এমন চিত্রের পর টেস্ট দুই দিনেই শেষ হওয়ার নিদান দেওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু সেই টেস্ট চতুর্থ দিনে গড়ালেও খেলা চার দিন হয়নি। দ্বিতীয় দিন ভেসে যায় বৃষ্টিতে।
তৃতীয় দিনেও বাগড়া দিয়েছিল বৃষ্টি। খেলা শুরু হয় দেরি করে দুপুর ১২টায়। তৃতীয় দিনে দুই দলের ইনিংস মিলিয়ে খেলা হয়েছে মোট ৩২.৩ ওভার। আর আজ চতুর্থ দিনে বাংলাদেশ ২৭ ওভার ব্যাট করার পর ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে গিয়ে ৩৯.৪ ওভারেই জয় তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড। অর্থাৎ চতুর্থ দিনে খেলা হয়েছে মোট ৬৬.৪ ওভার। গোটা ম্যাচের হিসাবে দাঁড়ায়, খেলা হয়েছে মোট ১৭৮.১ ওভার।
১৭৮.১ ওভার মানে মোট ১০৬৯ বলের খেলা হয়েছে মিরপুর টেস্টে। আর তাতেই এ ম্যাচ জায়গা করে নিয়েছে রেকর্ড বইয়ে। টেস্ট ক্রিকেটে গত ১০০ বছরের ইতিহাসে ন্যূনতম ৩৬ উইকেট পড়েছে, এমন ম্যাচগুলোর মধ্যে বলের হিসাবে এই ম্যাচ তৃতীয় সংক্ষিপ্ততম।
আরও অবাক করা ব্যাপার হলো, গত ১০০ বছর এবং ৩৬ উইকেটের অনুমিতি ধরে সংক্ষিপ্ততম টেস্টের তালিকায় সবার ওপরে থাকা তিনটি ম্যাচই অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ২২ বছরের মধ্যে। অবাক হওয়ার ব্যাপারটিও বুঝিয়ে বলা যায়। ষাটের দশক পর্যন্ত যখন উইকেট ঢেকে রাখা হতো না, তখন টেস্ট ম্যাচ দুই দিনে শেষ হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। কারণ ‘আনকাভার্ড’ পিচে ব্যাটিং কতটা কঠিন, তা সবারই জানা। অথচ ক্রিকেটের আধুনিক সময়ে এসে কিনা বলের হিসাবে সংক্ষিপ্ততম ম্যাচ দেখতে হচ্ছে এই একুশ শতকে!
শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের পিচ এ ক্ষেত্রে সম্ভবত নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। এই উইকেটে ব্যাট করা কত কঠিন, তা খুলে বলতে হয় না। ম্যাচ শেষে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টিম সাউদির কথাতেই সব পরিষ্কার, ‘এটা সেই উইকেটগুলোর একটি, যেখানে একটি ডেলিভারিতে আপনার উইকেটের পরোয়ানা লেখা থাকবে...এমন উইকেটে জিততে পেরে ভালো লাগছে।’
টেস্ট ক্রিকেটে গত ১০০ বছরের মধ্যে ন্যূনতম ৩৬ উইকেট পড়া ম্যাচে বলের হিসাবে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ততম ম্যাচটি দেখা গেছে ২০১৯ সালে লর্ডসে। ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার সেই টেস্টে ৪০ উইকেটই পড়েছিল এবং ইংল্যান্ড জিতেছিল ১৪৩ রানে। ম্যাচে মোট ১৭৫.৫ ওভার বা ১০৫৩টি বৈধ ডেলিভারির খেলা হয়েছিল। এই তালিকায় দ্বিতীয় ম্যাচটি ২০০২ সালে নিউজিল্যান্ড-ভারতের মধ্যে হ্যামিল্টন টেস্ট।
নিউজিল্যান্ডের ৪ উইকেটে জয়ের সে ম্যাচে মোট ১০৬১টি বৈধ ডেলিভারির (১৭৬.৮ ওভার) খেলা হয়েছিল। আজকের মতো সে ম্যাচেও ৩৬টি উইকেট পড়েছিল। তবে তালিকার শীর্ষে থাকা এই তিনটি টেস্টের মধ্যে সবচেয়ে কম রান উঠেছে হ্যামিল্টন টেস্টে (৫০৭)। ২০১৯ সালের সেই লর্ডস টেস্টের (৬৩৩ রান) তুলনায় মিরপুর টেস্টে অবশ্য ২ রান বেশি হয়েছে।