দুবাইয়ে গতবার এশিয়া কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান
দুবাইয়ে গতবার এশিয়া কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান

পাকিস্তানের ‘হাইব্রিড’ এশিয়া কাপ আয়োজনে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের আপত্তি

অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপের আগে হওয়ার কথা এবারের এশিয়া কাপ। তবে টুর্নামেন্টটি শেষ পর্যন্ত কোথায় হবে, নিশ্চিত হচ্ছে না সেটিই। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সর্বশেষ সভায় আবারও ‘হাইব্রিড’ পদ্ধতিতে টুর্নামেন্টটি আয়োজনের রূপরেখা উত্থাপন করেছে আয়োজক পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তবে ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো বলছে, এ ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি) ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। যদিও পিসিবির এক কর্মকর্তার দাবি, পাকিস্তানে খেলার ব্যাপারে বিসিবি বা এসএলসির আপত্তি নেই।

বিসিবি ও এসএলসির পাকিস্তানে খেলার ব্যাপারে সরাসরি আপত্তি থাকার কথাও নয়। তাদের আপত্তি অন্য জায়গায়। পাকিস্তানের সঙ্গে রাজনৈতিক সংকটের কারণে দেশটিতে গিয়ে খেলতে চায় না ভারত, এমন পরিস্থিতিতেই বিকল্প এই ‘হাইব্রিড’ টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রস্তাব দেয় পিসিবি। এ মডেলে ভারত তাদের ম্যাচগুলো খেলবে পাকিস্তানের বাইরে ভিন্ন কোনো দেশে, বাকি ম্যাচগুলো হবে পাকিস্তানেই। দ্বিতীয় সে দেশটি হতে পারে সংযুক্ত আরব আমিরাত।

এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সর্বশেষ সভায় পিসিবি দাবি করেছে, দুটি ভিন্ন দেশে টুর্নামেন্ট আয়োজনের ক্ষেত্রে যেসব টেকনিক্যাল সমস্যার কথা এসিসি উত্থাপন করেছিল, সেসব তারা সমাধান করে ফেলেছে। গত মঙ্গলবার দুবাইয়ে বৈঠকে বসেছিল দুই পক্ষ। তবে টুর্নামেন্টের একটি অংশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে হতে পারে, এমন প্রস্তাবেই মূলত আপত্তি জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।

মূলত যে সময়ে আরব আমিরাতে টুর্নামেন্টের একটি অংশ হবে, সে সময়ে সেখানকার গরমের কথা ভেবেই আপত্তি এ দুই বোর্ডের। প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি ভারতে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপের আগে পাকিস্তান ও অন্য আরেকটি দেশে ভ্রমণের ঝক্কি নিতে চায় না তারা।

ক্রিকইনফোকে এ ব্যাপারে এসএলসির সচিব মোহন ডি সিলভা বলেছেন, ‘আমরা এসিসিকে এই হাইব্রিড মডেলের বিপক্ষে আমাদের অবস্থান লিখিত আকারে জানিয়েছি। এর বাইরে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আর সংযুক্ত আরব আমিরাতে এ সময়ে বেশ গরম থাকে।’

আমরা এসিসিকে এই হাইব্রিড মডেলের বিপক্ষে আমাদের অবস্থান লিখিত আকারে জানিয়েছি। এর বাইরে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আর সংযুক্ত আরব আমিরাতে এ সময়ে বেশ গরম থাকে।
এসএলসির সচিব মোহন ডি সিলভা

এ ব্যাপারে পাল্টা যুক্তি দিয়ে পিসিবির এক কর্মকর্তা বলেছেন, পাকিস্তানে খেলতে কোনো আপত্তি না থাকার কথা তাদের ই-মেইলে জানিয়েছে বিসিবি ও এসএলসি। আর গরমের ব্যাপারে তাদের যুক্তি, গত বছরও আগস্টের ২৭ থেকে সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখে আরব আমিরাতেই এশিয়া কাপ হয়েছিল। কাছাকাছি সময়ে এবারও সেটি আয়োজন করতে চায় পিসিবি। ২০১৮ সালেও ৫০ ওভারের এশিয়া কাপ সেপ্টেম্বরের ১৫-২৮ তারিখের মধ্যে হয়েছিল।

২০১৮ ও ২০২২ সালের এশিয়া কাপ আরব আমিরাতে হলেও অফিশিয়াল আয়োজক তারা একবারও ছিল না। প্রথমবার পাকিস্তানের সঙ্গে রাজনৈতিক সংকটে নিজেদের দেশ থেকে সেটি সরিয়ে নিয়েছিল ভারত। গতবার শ্রীলঙ্কা সেটি সরিয়ে নেয় সে সময়ে দেশটিতে চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের কারণে।

আগের দুবারের মতো পুরো টুর্নামেন্টটি অন্য দেশে সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে পিসিবিকে। এবার নিরপেক্ষ ভেন্যু হতে রাজি শ্রীলঙ্কাও। এ ব্যাপারে ডি সিলভা বলেন, ‘যদি শ্রীলঙ্কায় টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রস্তাব দেওয়া হয়, তাহলে আমরা রাজি। পাকিস্তানই অফিশিয়াল আয়োজক থাকবে সে ক্ষেত্রে।’

গতবার এশিয়া কাপের শিরোপা জেতে শ্রীলঙ্কা

পিসিবির দাবি, পাকিস্তান ও অন্য আরেকটি দেশে এশিয়া কাপ আয়োজন করা হলে সব রকমের সমস্যারই সমাধান হয়। তাদের হাইব্রিড মডেল শেষ পর্যন্ত গ্রহণ করা না হলে পাকিস্তান এশিয়া কাপে খেলবে না, নিজেদের এমন অবস্থানের কথাও জানিয়েছেন পিসিবির এক কর্মকর্তা।

গতবারের মতোই দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে ছয়টি দলের খেলার কথা আছে এশিয়া কাপে। ভারত, পাকিস্তানের সঙ্গে একই গ্রুপে আছে প্রথমবারের মতো সুযোগ পাওয়া নেপাল। অন্য গ্রুপে আছে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। গতবারের মতোই প্রতি গ্রুপ থেকে দুটি করে দল যাবে সুপার ফোরে, সেখান থেকে শীর্ষ দুটি দল খেলবে ফাইনালে। শেষ পর্যন্ত গেলে ভারত ও পাকিস্তান মুখোমুখি হবে তিনবার।

পাকিস্তানের হাইব্রিড মডেলে অবশ্য কোনো আপত্তি নেই আফগানিস্তানের। এ ব্যাপারে নিরপেক্ষ অবস্থানে তারা। তাদের চাওয়া, টুর্নামেন্ট যেন নির্ধারিত সময়ে হয়। আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের এক মুখপাত্র ক্রিকইনফোকে বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ে টুর্নামেন্ট আয়োজনের ব্যাপারে আগের দুটি এসিসি সভায় আমরা নিজেদের জোরালো অবস্থান জানিয়েছি। আর ভেন্যুর ব্যাপারে আমরা এসিসির সিদ্ধান্তই মানব, কোনো নির্দিষ্ট বোর্ডের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নেব না। এ অঞ্চলে ক্রিকেটের প্রসার ও উন্নতির ব্যাপারে একটি স্বচ্ছ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক টুর্নামেন্ট আয়োজনের গুরুত্বকেই প্রাধান্য দিচ্ছি আমরা।’