আইরিশ ক্রিকেট রূপকথায় লেখা আছে তাঁর নাম। লেখা আছে বিশ্বকাপের রেকর্ড বইয়েও। ২০১১ বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যখন ব্যাটিং করতে নেমেছিলেন, স্কোরবোর্ড দেখাচ্ছে ৪ উইকেটে ১০৬। কিছুক্ষণের মধ্যেই যা হয়ে গেল ৫ উইকেটে ১১১। জয়ের জন্য ৩২৮ রানের লক্ষ্যকে তখন মনে হচ্ছে আলোকবর্ষ দূরে। কেভিন ও’ব্রায়েনের কল্যাণে আয়ারল্যান্ড ৫ বল বাকি থাকতেই সেই লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলেছিল হাতে ৩ উইকেট নিয়ে।
৫০ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন কেভিন ও’ব্রায়েন, যা এখনো বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। ৬৩ বলে ১১৩ রানের ইনিংসে ছিল ১৩টি চার ও ৬টি ছক্কা, যার বেশ কটিই ছিল বিশাল। এই বিধ্বংসী ইনিংসের কল্যাণেই বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়েছিল আয়ারল্যান্ড।
এসবই তো পুরোনো কথা। নতুন করে আবারও তা বলার কারণ? কারণ তো আছেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছেন এই অলরাউন্ডার। গত বছরই অবসর নিয়েছিলেন ওয়ানডে থেকে। তবে টি-টোয়েন্টি খেলা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গত অক্টোবরে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর আর দলে সুযোগ না পাওয়ায় আক্ষেপ নিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন কেভিন ও’ব্রায়েন।
সেই বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছেন টুইটারে। যাতে লিখেছেন, ‘দেশের হয়ে ১৬ বছরে ৩৮৯টি ম্যাচ খেলার পর আজ আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিচ্ছি। চেয়েছিলাম অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে বিদায় নিতে। তবে গেল বছর বিশ্বকাপের পর আইরিশ স্কোয়াডে আর জায়গা পাইনি। আমি মনে করি, নির্বাচক ও ম্যানেজমেন্ট ভিন্ন কিছু ভাবছে।’
২০০৬ সালে জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল কেভিন ও’ব্রায়েনের। ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে খেলেছেন ১৫৩ ওয়ানডে, ১১০ টি–টোয়েন্টি ও ৩টি টেস্ট। আয়ারল্যান্ডের হয়ে গড়েছেন অসংখ্য রেকর্ড। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাতটির কথা তো বলা হয়েছে আগেই। ওয়ানডে বিশ্বকাপের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। ব্যাটে–বলে যে সত্যিকার এক অলরাউন্ডার ছিলেন, এর প্রমাণ, ওয়ানডেতে বল হাতে আয়ারল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি তিনি। নিয়েছেন ১১৪ উইকেট। ওয়ানডেতে দুটি সেঞ্চুরি আছে। টি–টোয়েন্টিতে একটি। মাত্র ৩ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ব্যাটিং গড় ৫১.৬০। প্রথম টেস্টের পর যা ছিল ৭৯.০০। ২০১৮ সালের মে মাসে ডাবলিনে পাকিস্তানের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ডের অভিষেক টেস্টের দুই ইনিংসে যে করেছিলেন ৪০ ও ১১৮ রান। এর আগে নিজের দেশের অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করার যে রেকর্ড ছিল অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ব্যানারম্যান, জিম্বাবুয়ের ডেভিভ হটন ও বাংলাদেশের আমিনুল ইসলামের।
দীর্ঘ এই ক্যারিয়ারে মাঠ ও মাঠের বাইরে অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে ও’ব্রায়েনের। বিদায়বেলায় তিনি স্মরণ করেছেন সেসব স্মৃতি, ‘আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলা প্রতিটি মিনিট উপভোগ করেছি। মাঠে অনেক বন্ধু বানিয়েছি এবং জাতীয় দলের হয়ে খেলার সময়ে অসংখ্য সুখস্মৃতি আছে আমার।’