ভারতীয় দলের কাছে দেশটির মানুষের প্রত্যাশা এতটাই যে কোনো টুর্নামেন্টে রানার্সআপ হওয়া মানেও যেন ব্যর্থতা। সে হিসেবে গত এক দশকে বৈশ্বিক আসরে ভারতকে ব্যর্থই বলা যায়।
বেশির ভাগ সময় হেসেখেলে সেমিফাইনালে, একাধিকবার ফাইনালে উঠলেও ২০১৩ সালের পর আইসিসি আয়োজিত কোনো টুর্নামেন্টের ট্রফি ছুঁয়ে দেখা হয়নি। দলটির সর্বশেষ বিশ্বকাপ জয়েরও এক যুগ পেরিয়ে গেছে।
তবে এবার নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপ হওয়ায় ভারতকে শুরু থেকেই ‘হট ফেবারিট’ ভাবা হচ্ছে। প্রত্যাশার চাপ সামলে রোহিত শর্মার দল বেশ দাপটের সঙ্গে এগিয়েও যাচ্ছে।
প্রথম ৫ ম্যাচ জিতে স্বাগতিকেরা আছে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত একমাত্র অপরাজিত দল তারাই। নেট রানরেট ‘স্বাস্থ্যবান’ হওয়ায় আর একটি ম্যাচ জিতলেই শেষ চারে ওঠা একরকম নিশ্চিত হয়ে যাবে। এরপর দুই ধাপ পেরোলেই সোনালি ট্রফির সাক্ষাৎ।
কথাগুলো বলা যতটা সহজ, করে দেখানো ততটাই কঠিন। তবে রোহিত–কোহলি–বুমরারা এখন পর্যন্ত যতটুকু করেছেন, তাতেই শোয়েব আখতারের মনে হচ্ছে, ভারতই এবার বিশ্বকাপ জিতবে। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে শোয়েব জোর গলায় বলেছেন, ‘ভারতের বিশ্বকাপ না জেতার কোনো কারণ দেখি না।’
বাকি দলগুলোর চেয়ে ভারতকে কেন এগিয়ে রাখছেন, সে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন শোয়েব, ‘ওদের (ভারতের) একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাটিং ও বোলিং লাইনআপ আছে।’
উদারহরণস্বরূপ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে ভারতীয় দলের গভীরতার প্রসঙ্গটি সামনে এনেছেন, ‘নিউজিল্যান্ডের জন্য শুবমান গিলই যথেষ্ট। রোহিত শর্মা যদি হঠাৎ আউট হয়ে না যেত, সেও যথেষ্ট ছিল। লোকেশ রাহুলকে যদি তিনে বা চারে খেলোনো হয়, সেও খুব ভালো করবে। আসলে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ অনেক লম্বা।’
ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে কথা হবে আর সেখানে বিরাট কোহলি থাকবেন না, তা কি হয়? কোহলির জন্য আলাদাভাবে প্রশংসার ডালি নিয়ে বসেছিলেন শোয়েব। ৫ ইনিংসে ৩৫৪ রান করা কোহলি এই মুহূর্তে বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শতক পূরণ করেছিলেন। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গেও একই ধরনের সমীকরণের সামনে পড়ছিলেন, তবে ছক্কা মারতে গিয়ে ৫ রানের আক্ষেপ নিয়ে ফিরতে হয়েছে।
শোয়েবের মতে, কোহলির কাছে চাপ মানে আরেকটি শতক পূরণের সুযোগ, ‘সে এমন ব্যাটসম্যান, যে চাপের মধ্যে খেলে আরও ভালো করে। ওর কাছে চাপ মানে শতকের সুযোগ, দলকে জেতানোর সুযোগ। এরপর ইনস্টাগ্রামে অনুসারীদের প্রশংসায় ভাসা। আসলে এসব ওরই প্রাপ্য।’
ভারতের প্রথম চার ম্যাচে খেলানো হয়নি মোহাম্মদ শামিকে। তবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে এবারের বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলার সুযোগ পেয়েই সদ্ব্যবহার করেছেন। ফেরার ম্যাচটা রাঙিয়েছেন ৫ উইকেট নিয়ে। ম্যাচসেরাও হয়েছেন এই ফাস্ট বোলার।
শামিকে নিয়ে শোয়েবের ভাষ্য, ‘সে একটু বেশি রান দিয়ে ফেলেছে। কিন্তু ৫ উইকেট নিয়েছে মানে সব ঠিক আছে। নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ যে ৩০০ থেকে ৩৫০ হয়নি, তাতে ওর অবদান অনেক। সে ওর প্রতিভা জানান দিয়েছে। ভারতের এই বোলিং লাইনআপ নিয়েই খেলতে নামা উচিত।’
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পর প্রায় এক সপ্তাহের বিশ্রাম পেয়েছে ভারত। দলটির পরের ম্যাচ আগামী রোববার বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।