সকাল সকাল মেঘলা আকাশের নিচে এম এ চিদম্বরম স্টেডিয়ামের আশপাশের বিশাল লম্বা লাইন দেখতে পেলাম। সাপের মতো প্যাঁচানো লাইনটা স্টেডিয়ামের ৯ নম্বর গেট থেকে শুরু হয়ে গেল ১৩ নম্বর গেট ছাড়িয়ে। সবাই টিকিট কিনে মাঠে ঢোকার অপেক্ষায় আছেন। অনেকে লম্বা লাইন পাশ কাটিয়ে কালোবাজারিদের কাছে টিকিট খুঁজছিলেন। চেন্নাই টেস্টের আজ ও কালকের দিনটায় যে দর্শকের ভিড় বাড়বে, তা অবশ্য অনুমেয় ছিল। আজ শনিবার, এখানে সাপ্তাহিক ছুটির দিন। ভিড় তো বাড়বেই। ভারতও আছে চালকের আসনে। দিনটা দুই তরুণ ব্যাটসম্যান ঋষভ পন্ত ও শুবমান গিলের আধিপত্য দেখানোরও মঞ্চ ছিল আজ।
৩০৮ রানে এগিয়ে থেকে দিন শুরু করা ভারত ওই দুজনের সৌজন্যে সে প্রত্যাশিত কাজটাই করল। দুজনই জোড়া সেঞ্চুরি করে মাঠে আসা দর্শকদের উদ্যাপনের উপলক্ষ হন। দুজনের সৌজন্যে ভারত মধ্যাহ্নবিরতির পর ৪ উইকেট ২৮৭ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করলে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৫১৫ রান। কঠিনতম এ চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ বেছে নেয় প্রতি আক্রমণের পথ। তাতে কিছু রান আসে, উইকেটও হারায়। আলোক স্বল্পতায় খেলা শেষ হওয়ায় বাংলাদেশ নাজমুল হোসেনের ফিফটির সৌজন্যে ৪ উইকেটে ১৫৮ রান করে। অবিশ্বাস্য কিছু না ঘটলে চেন্নাইয়ে বড় হারের সামনে বাংলাদেশ। আপাতত পরের টেস্টের জন্য আত্মবিশ্বাস পাওয়াই হয়তো মূল লক্ষ্য নাজমুলদের।
আগের দিন রাত ও ভোরের বৃষ্টির কারণে ঠিক সময়ে খেলা শুরু হবে কি না, তা নিয়ে একটা শঙ্কা ছিল। কিন্তু বিশ্বমানের ড্রেনেজ সিস্টেম থাকায় তা হয়নি। খেলা শুরু হয় ঠিক সময়েই। কিন্তু মেঘলা আকাশের নিচে মেহেদী হাসান মিরাজকে বল তুলে দিয়ে প্রেস বক্সে আলোচনার জন্ম দেন নাজমুল হোসেন। তবে পুরোনো বলে পেসার কিংবা স্পিনার—কেউই তেমন সাফল্য পাচ্ছিলেন না। আর এ সুযোগ দুই হাতে লুফে নেন পন্ত-শুবমান জুটি। পন্ত টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর ফেরার ম্যাচ রাঙান ১২৮ বলে ১০৯ রানে। গিল ১৭৬ বলে করেছেন ১১৯ রান। পন্ত আউট হয়ে ফিরলেও মধ্যাহ্নবিরতির প্রায় এক ঘণ্টা পর ভারত ইনিংস ঘোষণা করলে গিল অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন।
পন্ত-গিলের গতিতে নিজেদের ইনিংস শুরু করেন জাকের-সাদমানও। ইনিংস শুরু থেকেই দুজনের মধ্যে রান করার চেষ্টা ছিল। ভারতীয় বোলারদের বাজে বলগুলো বাউন্ডারিতে পাঠিয়েছেন স্বাচ্ছন্দ্যে। কিন্তু দ্রুত রানের পেছনে ছুটতে গেলে ঝুঁকির সঙ্গেও হাত মেলাতে হয়। বুমরার করা ১৭তম ওভারে ঠিক তা–ই হলো। অফ স্টাম্পের বাইরের ভালো লেংথের বলে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে জাকির কটবিহাইন্ড। ওই ভুল শট নির্বাচনে তাঁর ইনিংস থামে ৪৭ বলে ৩৩ রানেই। ২২তম ওভারে অশ্বিনের বলে লেগের দিকে ঠেলে খেলার চেষ্টায় শর্ট উইকেটে গিলের হাতে ক্যাচ তোলেন সাদমান (৩৫)। অশ্বিন ফিরিয়েছেন মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিমকেও, দুজনই আউট হয়েছেন ১৩ রানে।
টপ অর্ডার থেকে টিকে ছিলেন একমাত্র নাজমুলই। তিনি খেলেছেন ওয়ানডে মেজাজে। ৫৫ বলে অর্ধশত তুলে নিয়ে বাংলাদেশের রানটাকে দেড় শর ওপারে নিয়ে যান। এর আগে ২০২৩ নভেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেট টেস্টে করা ১০৫ রানের ইনিংসটি ছিল নাজমুলের সর্বশেষ ৫০ ছাড়ানো ইনিংস।
শেষ বেলায় আলোক স্বল্পতায় ৯ ওভার আগেই দিনের খেলা শেষ হয়। ৬০ বলে ৫১ রানে অপরাজিত নাজমুল, সাকিব আল হাসান খেলছেন ১৪ বলে ৫ রান নিয়ে।ো