ওল্ড ট্রাফোর্ডে পাঁচ পেসার নিয়ে খেলছে অস্ট্রেলিয়া
ওল্ড ট্রাফোর্ডে পাঁচ পেসার নিয়ে খেলছে অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়া কি স্পিনার না নিয়ে ভুল করেছে

নাথান লায়ন চোটে পড়ায় অস্ট্রেলিয়ান স্কোয়াডের বোলিং শক্তি কমে গেছে দ্বিতীয় টেস্টেই। হেডিংলিতে পরের টেস্টে খেলানো হয়েছিল টড মারফিকে। তবে ওল্ড ট্রাফোর্ডের চতুর্থ টেস্টের দলে মারফিও নেই। অস্ট্রেলিয়া একাদশ সাজিয়েছে পাঁচ পেসার নিয়ে। ২০১২ সালের জানুয়ারির পর এই প্রথম বিশেষজ্ঞ স্পিনার ছাড়া টেস্ট খেলতে নেমেছে অস্ট্রেলিয়া।

কিন্তু শতভাগ পেসনির্ভর বোলিং আক্রমণ কি অস্ট্রেলিয়ার কাজে লাগছে? অ্যাশেজে ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে প্রশ্নটি বেশ জোরেশোরেই উঠেছে। ইংল্যান্ড এরই মধ্যে প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেটে ৩৮৪ রান তুলে ফেলেছে। বাঁহাতি পেসার মিচেল স্টার্ক বাদে বাকি চার ডানহাতি পেসারের কেউই ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের অস্বস্তিতে ফেলতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ তাই সোজাসাপটাই বলে দিয়েছেন, একাদশে বিশেষজ্ঞ স্পিনার না রেখে ভুল করেছে অস্ট্রেলিয়া। একই মত সাবেক ক্রিকেটার ট্রেন্ট কোপল্যান্ডেরও। তবে অস্ট্রেলিয়ার কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ডের মত আবার ভিন্ন। তাঁর মতে স্পিনার না নেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল নয়। সহকারী কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টরিও এখনই ভুল-শুদ্ধ বিচার করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন।

লায়ন চোটে পড়ার পর তৃতীয় টেস্টের একাদশে নেওয়া হয়েছিল মারফিকে। তবে ২২ বছর বয়সী এই অফ স্পিনারকে খুব একটা কাজে লাগানো যায়নি। প্রথম ইনিংসে ৭.৩ ওভার আর দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ২ ওভার বল করেছিলেন। চতুর্থ টেস্টের একাদশ থেকে মারফিকে বাদ দেওয়া হয় ব্যাটিংয়ে বাড়তি নজর দিতে গিয়ে। ক্যামেরন গ্রিন চোটে পড়ায় হেডিংলি টেস্টের দলে ঢুকে সেঞ্চুরিসহ মোট ১৪৬ রান করেছিলেন মিচেল মার্শ। চতুর্থ টেস্টের আগে গ্রিন সুস্থ হয়ে ফেরায় তাঁকে দলভুক্ত করতে গিয়ে ছেঁটে ফেলা হয় মারফিকে। এ ক্ষেত্রে ওল্ড ট্রাফোর্ডের কন্ডিশনের কথাও সম্ভবত মাথায় রেখেছিলেন ম্যাকডোনাল্ড-কামিন্সরা।

১১ বছর পর বিশেষজ্ঞ স্পিনার ছাড়া টেস্ট খেলতে নেমেছে অস্ট্রেলিয়া

তবে স্পিনার না খেলানোর সিদ্ধান্ত প্রথম দিনই আলোচনায় উঠে আসে। ইংল্যান্ডের মঈন আলী প্রথম দিনেই কিছু টার্ন পেয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ রান করা মারনাস লাবুশেনকে এলবিডব্লিউর ফাঁদেও ফেলেন। আর দ্বিতীয় দিনে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং করতে নামলে ২২তম ওভারেই আক্রমণে আনা হয় খণ্ডকালীন স্পিনার ট্রাভিস হেডকে। হেড অবশ্য ভালো করতে পারেননি, ৬ ওভারেই দিয়েছেন ৪৮ রান। স্টিভ ওয়াহর মনে হচ্ছে বিশেষজ্ঞ স্পিনার থাকলে ব্যাপারটা ভিন্ন হতে পারত।

এসইএনকিউ ব্রেকফাস্ট অনুষ্ঠানে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক বলেন, ‘(স্পিনার না খেলানোর সিদ্ধান্তে) আমি একমত নই। আমার মতে এটা ভুল সিদ্ধান্ত, বিশেষ করে ম্যানচেস্টারে যেখানে বল টার্ন করে থাকে।’ ওয়াহ অবশ্য কী কারণে স্পিনার না খেলানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটাও অনুমান করেছেন, ‘সম্ভবত আবহাওয়ার বিষয়টি তাঁরা মাথায় রেখেছেন। ম্যাচের মধ্যে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু আমি বলব, আক্রমণে বৈচিত্র্য রাখাটাও দরকার। বিশেষ করে ইংল্যান্ড যেভাবে খেলে তার বিপক্ষে। আর আমরা খেলছি চারজন ডানহাতি পেসার নিয়ে।’

ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টের দ্বিতীয় দিনে কাঁধে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছেড়ে যান মিচেল স্টার্ক

তবে অস্ট্রেলিয়ার কোচ ম্যাকডোনাল্ড স্পিনার না থাকাকে সমস্যা মনে করছেন না। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে হয়েছে উইকেট আর প্রতিপক্ষ বিবেচনায় স্পিন এখানে বড় ভূমিকা রাখবে না। আমি দেখেছি, প্রথম ইনিংসে মঈন এক উইকেট পেয়েছে। আমরা কিন্তু জানি না আজকের দিনে (দ্বিতীয়) স্পিনাররা কেমন করত। আমরা ভিন্নধর্মী আক্রমণ নিয়ে নেমেছি, যারা আছে তাদের দিকেই আমাদের মনোযোগ।’

অস্ট্রেলিয়ার সহকারী কোচ ভেট্টরি স্পিনার না খেলানোর সিদ্ধান্তকে এখনই ভুল বলতে নারাজ। নিউজিল্যান্ডের সাবেক এই স্পিনার আবহাওয়ার কথাই সামনে এনেছেন, ‘আমাদের মনে হয়েছে আবহাওয়া এবং উইকেটের কারণে এই ম্যাচটা বেশি দূর গড়াবে না। আর ইংল্যান্ডও যে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে, ম্যাচটা অল্পতেই শেষ হয়ে যেতে পারে। এখন স্পিনার না নেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে কি না, সেটা টেস্ট শেষে বলা যাবে, দুই দিনে নয়।’

অ্যাশেজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে আছে অস্ট্রেলিয়া।