ছোট মাঠ। কিন্তু ২২ গজ যেন ‘মাইনফিল্ড’। গুড লেংথ থেকে বল ব্যাটসম্যানের কনুইসমান উচ্চতায় উঠছে। সঙ্গে টার্ন তো আছেই। হাংজুর পিংফেং ক্যাম্পাস ক্রিকেট মাঠে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার এশিয়ান গেমসের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটা হয়েছে এমন কন্ডিশনে। বাংলাদেশ তাতে আগে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে তুলেছিল ১১৬ রান।
কন্ডিশন যেমনই হোক, জয়ের জন্য এই রান নিরাপদ ছিল না। মালয়েশিয়ার বীরানদীপ সিংয়ের ৫২ রানের দুর্দান্ত ইনিংসের কাছে প্রায় হারতে বসেছিল বাংলাদেশ। শেষ দুই ওভারে জয়ের জন্য মালয়েশিয়ার দরকার ছিল ১০ রান, বীরানদীপ রিশাদ হোসেনের ১৯তম ওভারের প্রথম বলেই চার মারলে সমীকরণটা কমে আসে ১১ বলে ৬ রান।
কিন্তু রিশাদ ও আফিফ হোসেনের করা শেষ ১১ বলে মাত্র ৩ রান নিতে পেরেছে মালয়েশিয়া। শেষ পর্যন্ত মালয়েশিয়ার ইনিংস থেমেছে ৮ উইকেটে ১১৪ রানে। ২ রানের স্বস্তির জয়ে এশিয়ান গেমসের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। শুক্রবার একই মাঠে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নামবে সাইফ হাসানের দল।
রান তাড়ার শুরুতেই ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে মালয়েশিয়া। পাওয়ার প্লেতে ২৩ রান তুলতেই হারায় শুরুর ৩ ব্যাটসম্যানকে। আফিফ ও সাইফ হাসানের স্পিনে সহজে রান করা যাচ্ছিল না। দুজনের প্রথম স্পেল শেষ হওয়ার পর পেসাররা বোলিংয়ে এলে অবশ্য রান বাড়তে থাকে। এই উইকেটে স্বাভাবিকভাবেই পেসারদের জন্য কিছুই ছিল না। তার ওপর মাঠের এক পাশ খুবই ছোট। ব্যাটসম্যানরা পেসারের গতি ব্যবহার করে সহজেই বাউন্ডারি বের করছিলেন। তাতে এগোতে থাকে মালয়েশিয়ার ইনিংসও। পেসার সুমন খানের দুই ওভারে ২০ রান নেয় মালয়েশিয়া।
তবে আরেক পেসার রিপন মণ্ডলের প্রথম স্পেলটা ভালো না হলেও তিনি দ্বিতীয় স্পেলে এসে ৩ উইকেট নিয়ে ঘুরে দাঁড়ান। ওদিকে একাই লড়াই চালিয়ে যান বীরানদীপ। এক-দুই রানের সঙ্গে বাউন্ডারির সৌজন্যে মালয়েশিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যান বাংলাদেশের লক্ষ্যের কাছাকাছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেষ ওভারের চাপের মুখে আফিফকে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অন বাউন্ডারিতে ক্যাচ তোলেন বীরানদীপ। ৩৯ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কার ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে তাতে। বাংলাদেশের হয়ে সেরা বোলার ছিলেন আফিফ। ৪ ওভারে মাত্র ১১ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি।
স্পিন ভুগিয়েছে বাংলাদেশকেও। এতটাই যে বাংলাদেশ ইনিংসের মালয়েশিয়ার ৫ বোলারের প্রত্যেকেই ছিলেন স্পিনার। ইনিংসের প্রথম ৩ ওভারে ৩ রান তুলতে বাংলাদেশ হারিয়েছে ৩ উইকেট! প্রথম উইকেটটা অবশ্য দুর্ভাগ্যজনক। কোনো বল না খেলেই রানআউট হন উদ্বোধনে নামা মাহমুদুল হাসান। সৌম্য সরকারের পর প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে অভিষেক ম্যাচে বল না খেলেই আউট হন তিনি।
আরেক ওপেনার পারভেজ হোসেন উইকেটের গতি ও স্পিন কিছুই বুঝতে উঠতে পারছিলেন না। তিনি ৮ বল খেলে কোনো রান না করেই এলবিডব্লু হন বিজয় উন্নির ফুল লেংথের বলে সুইপ করতে গিয়ে। তিনে নামা জাকির হাসান করেছেন ১ রান। পবনদীপ সিংয়ের বলে কাভারের ওপর দিয়ে মারতে দিয়ে শর্ট থার্ড ম্যাচে ক্যাচ তোলেন।
শুরুর সেই ধাক্কা সামলে নেন আফিফ হোসেন। পাঁচে নেমে ২টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৪ বলে ২৩ রান করে পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের মান রক্ষা করেন এই বাঁহাতি। পবনদীপের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারির লাইনে আফিফ আউট হলেও অধিনায়ক সাইফ হাসান ইনিংসের বাকি পথ পাড়ি দেন হিসাবি ব্যাটিংয়ে।
শাহাদাত হোসেন (২১) ও জাকের আলীর (১৪) সঙ্গে তিনি জুটি গড়েন। সাইফ অপরাজিত ছিলেন ৫২ বলে ৫০ রান করে। ১টি চার ও ৩টি ছক্কা ছিল তাঁর ইনিংসে।
বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১১৬/৫
(সাইফ ৫০*, আফিফ ২৩, শাহাদাত ২১, জাকের ১৪*; পবনদীপ ২/১২, আনোয়ার ১/২৩, উন্নি ১/৪৬)
মালয়েশিয়া : ২০ ওভারে ১১৪/৮
(বিরানদীপ ৫২, আজিজ ২০, হাফিজ ১৪, উন্নি ১৪; আফিফ ৩/১১, রিপন ৩/১৪, রিশাদ ১/২২, রাকিবুল ১/২৬)
ফল : বাংলাদেশ ২ রানে জয়ী।