ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে জাকের আলী
ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে জাকের আলী

‘রানআউট’ হয়ে ফিরে ড্রেসিংরুমে যা যা করেছিলেন জাকের

ঘটনাটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ১৫তম ওভারের। রোস্টন চেজের করা ১৫তম ওভারের তৃতীয় বলে ২ রান নিতে চেয়েছিলেন জাকের। ১ রান নেওয়ার পর জাকের দৌড় শুরু করলেও শামীম সাড়া দেননি। প্রথমে ভাবা হয়েছিল, জাকের রানআউট। কারণ, দুজনেই এক প্রান্তে! রাগে গজরাতে গজরাতে জাকের ড্রেসিংরুমে ফিরেও গিয়েছিলেন।

কিন্তু তৃতীয় আম্পায়ার ভিডিও রিপ্লেতে দেখেছেন, ওই প্রান্তে জাকের যখন ক্রিজে পৌঁছে গেছেন, ব্যাট পেছনে রেখে দাঁড়িয়ে থাকা শামীমের ব্যাট মাটিতে নেই। অর্থাৎ জাকের নয়, শামীম রানআউট! ততক্ষণে জাকের ড্রেসিংরুমে ফিরে গেছেন! কিন্তু আম্পায়ারের ডাকে ফিরতে হলো তাঁকে।

জাকেরের জায়গায় শামীম চলে গেলেন ড্রেসিংরুমে, ক্রিজে এলেন মেহেদী হাসান। কিন্তু কে জানত, রানআউটের ফাঁড়া তখনো যে কাটেনি। চেজের করা ওই ওভারের পঞ্চম বলে রান নিতে গিয়ে আউট হন মেহেদী। কোনো বল না খেলেই ফিরলেন শূন্য রানে।

রানআউটের এই ঘটনা নিয়ে ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কথা বলেন জাকের। জানিয়েছেন, ড্রেসিংরুমে ফেরার পর কীভাবে ক্ষোভ ঝেড়েছেন, তা–ও, ‘আমার ধারণা, এটা ভয়বহ ভুল–বোঝাবুঝি ছিল। ড্রেসিংরুমে গিয়ে আমি নিজেকে, ব্যাটে এবং আশপাশে যা কিছু ছিল, সবকিছুতে লাথি মারছিলাম। আর তখনই তাৎক্ষণিকভাবে থার্ড আম্পায়ার (ফোর্থ আম্পায়ার) আমাকে ডেকে নিল।’

৭২ রানের অসাধারন এক ইনিংস খেলেছেন জাকের

মাঠে ফিরে একই ওভারে মেহেদীর রানআউটে জড়িয়ে যান জাকের। সেই রানআউটটি নিয়ে জাকের বলেন, ‘এরপর আমার কারণে আরও একটি রানআউট হয়েছে। নিজেকে লাথি মারার ইচ্ছা হচ্ছিল আমার এবং সে সময় আমি ভেঙেও পড়েছিলাম। তবে আলহামদুলিল্লাহ। এরপর আমি দলের জন্য রান করার সুযোগ পেয়েছি এবং তাদের (শামীম ও মেহেদী) রানও করতে পেরেছি।’

ড্রেসিংরুম থেকে ফিরে আসার সময় বাংলাদেশের জন্য সৌভাগ্যও বয়ে নিয়ে এসেছেন জাকের। জীবন পাওয়ার সময় ১৭ বলে তখন তাঁর ছিল ১৮ রান। আর সফরজুড়ে অসামান্য নৈপুণ্য দেখানো এই মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান সুযোগ কাজে লাগান ৪১ বলে ৩ চার ও ৬ ছক্কায় ৭২ রান করে। অর্থাৎ জীবন পেয়ে ২৪ বলে করেছেন ৫৪ রান। তাঁর এমন ঝোড়ো ব্যাটিংয়েই বাংলাদেশ পায় ১৮৯ রানের পুঁজি।

শুধু শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই নয়, পুরো সফরেই জাকের ছিলেন দারুণ উজ্জ্বল। টেস্ট (৪ ইনিংসে ৪৪.০০ গড়ে ১৭৬ রান) এবং ওয়ানডের (৩ ম্যাচে ৫৬.৫০ গড়ে ১১৩) পর ভূমিকা রেখেছেন টি-টোয়েন্টি সিরিজেও (৩ ম্যাচে ৬০.০০ গড়ে ১২০)।

শট খেলছেন ছন্দে থাকা জাকের

ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে নিয়ে নিজের পারফরম্যান্সকে জাকের মূল্যায়ন করলেন এভাবে, ‘এই সিরিজটা আমার জন্য দারুণ ছিল। টেস্ট সিরিজ, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিজুড়ে ভালো করেছি। আমার মনে হচ্ছিল, আজকের উইকেট আগের দুই ম্যাচের তুলনায় ভালো ছিল। আমি সময় নিয়ে থিতু হওয়া চেষ্টা করছিলাম। আমি নিজেকে চিনি। জানতাম, যদি লম্বা সময় খেলতে পারি, তবে আমি রান করতে পারব।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিন সংস্করণেই বাংলাদেশের হয়ে দারুণ ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন জাকের।