প্লে-অফের আগে এ ম্যাচটিকে বলা যায় আরেকটি ‘প্লে-অফ’ ম্যাচ। জয়ী দলের শীর্ষ দুইয়ে থেকে কোয়ালিফায়ার খেলা নিশ্চিত হবে, হেরে যাওয়া দলকে তিন বা চারে থেকে খেলতে হবে এলিমিনেটর। এমন সমীকরণে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ও রংপুর রাইডার্সের ম্যাচে লড়াইটা শেষ পর্যন্ত হলো একপেশেই। লিটন দাস, জাকের আলী ও খুশদিল শাহর অবদানে ১৭৭ রান তোলে কুমিল্লা, রান তাড়ায় রংপুর ১৬.৫ ওভারে অলআউট হয়ে যায় ১০৭ রানেই।
এই নিয়ে কুমিল্লা টানা ৯টি ম্যাচ জিতল, অন্যদিকে টানা ৬টি ম্যাচ জেতার পর হারল রংপুর। ৭০ রানের বড় ব্যবধানে জিতে সিলেট স্ট্রাইকার্সের সঙ্গে প্রথম কোয়ালিফায়ার খেলাও নিশ্চিত করল কুমিল্লা। আগামী রোববার হবে এই ম্যাচ। সেদিনই এলিমিনেটর ম্যাচে ফরচুন বরিশালের মুখোমুখি হবে রংপুর।
জয়ের জন্য ১৭৮ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে সুনীল নারাইন, তানভীর ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমানের দুর্দান্ত বোলিংয়ে পাওয়ার প্লেতেই ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে রংপুর। সেই চাপ থেকে আর বেরোতে পারেনি তারা। তৃতীয় ওভারে প্রথম আঘাত করেন তানভীর, তাঁকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন মোহাম্মদ নাঈম। নারাইনকে ছক্কা মারার পরই বোল্ড হন রনি তালুকদার। টম কোহলার-ক্যাডলার আর অধিনায়ক নুরুল হাসানও তেমন কিছু করতে পারেননি।
রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও শামীম হোসেনের জুটিতে চাপ সামাল দেওয়ার একটু চেষ্টা করে রংপুর, তবে দুজনকেই ফিরতে হয় দুর্দান্ত দুটি ক্যাচে, দুটিই মোস্তাফিজুর রহমানের বলে। আপার কাটের চেষ্টা করেছিলেন শামীম, উইকেটের পেছনে বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। আর গুরবাজের ক্যাচটি ডিপ স্কয়ার লেগ থেকে ছুটে এসে নেন তানভীর।
৭৪ রানে ৬ উইকেট হারানো রংপুর ছিটকে পড়ে লড়াই থেকে। এরপর তারা ১০০ পেরিয়েছে মূলত আজমতউল্লাহ ওমরজাই ও রকিবুল হাসানের অবদানে। তবে এতে শুধু হারের ব্যবধানটাই কমেছে। শেষ পর্যন্ত ১৮ রানে ৩ উইকেট নেন মোস্তাফিজুর।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা কুমিল্লাকে ভালো শুরু এনে দেন রিজওয়ান ও লিটন দাস। ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের দায়িত্বটা নেন লিটনই, রিজওয়ান সেখানে খেলছিলেন ‘অ্যাঙ্কর’-এর ভূমিকায়। প্রথমে ফেরেন পাকিস্তানি উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানই, ওমরজাইয়ের বলে কট-বিহাইন্ড হন ২১ বলে ২৪ রান করে। রিজওয়ান অবশ্য আউট হতে পারতেন আগেই, তবে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ নিয়েও সেটি রাখতে গিয়ে গড়বড় করে ফেলেন নাঈম।
নারাইনকে তিনে পাঠায় কুমিল্লা, রিপন মণ্ডলের বলে বোল্ড হওয়ার আগে দুটি চার মারতে পারেন শুধু। তবে একদিকে লিটন বেশ ছন্দেই ছিলেন, এক সময় ফিফটি পেরিয়ে আরও বড় স্কোরের সম্ভাবনাও উঁকি দিচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত রকিবুলের বলে তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন ৩৩ বলে ৪৬ রান করে, যে ইনিংসে ছিল ৩টি করে চার ও ছক্কা।
লিটনের পর অধিনায়ক ইমরুল কায়েস—দুজন আউট হন পরপর ২ ওভারে, সে সময় একটু চাপেই পড়ে কুমিল্লা। যদিও বেশ লম্বা ব্যাটিং লাইন-আপে তখনো বড় স্কোরের সম্ভাবনা ছিল ভালোভাবেই। সেটির জন্য অবশ্য রাসেল বা মোসাদ্দকেরও প্রয়োজন পড়েনি। সে দায়িত্ব নেন জাকের আলী ও খুশদিল শাহই।
শুরুতে একবার ক্যাচ তুলেও ফাঁকায় পড়ায় বেঁচে যাওয়া জাকের তিনটি ছক্কা মারেন দারুণ তিনটি শটে—ইনসাইড-আউটে ডিপ এক্সট্রা কাভার, আপার-কাটে থার্ডম্যানের পর লং অনের ওপর দিয়ে। ২৩ বলে ৩৪ রান করে ইনিংসের ১ বল বাকি থাকতে আউট হন হাসান মাহমুদের বলে। অন্যপ্রান্তে অপরাজিতই থাকেন ২০ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪০ রান করা খুশদিল।
খুশদিল ও জাকেরের জুটিতে ৩৯ বলে ৭২ রান তোলে কুমিল্লা। ১৮ ও ২০তম ওভারে এসে মাত্র ১৩ রান দেন হাসান, তবে তাতেও কুমিল্লার বড় স্কোর পেতে তেমন সমস্যা হয়নি। শেষ পর্যন্ত সেটি হয়েছে তো রংপুরের জন্য অনেক বড়ই।