সুপার এইটে একটি ম্যাচ না জিতেও সেমিফাইনালের আলোচনায় উঠে আসছে বাংলাদেশ
সুপার এইটে একটি ম্যাচ না জিতেও সেমিফাইনালের আলোচনায় উঠে আসছে বাংলাদেশ

উৎপল শুভ্রর লেখা

আশায় বাংলাদেশ দল: একটা কিছু হয়েও যেতে পারে

যে দল এখন পর্যন্ত সুপার এইটে একটা ম্যাচও জেতেনি, সেই দলের সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলাটাই তো কেমন! অথচ কথা হচ্ছে। 

সুপার এইটের শুরুতে মনে হয় না কেউ ভেবেছিলেন, একটি মাত্র জয় নিয়েই সেমিফাইনালে উঠে যাওয়া সম্ভব। এখন যা মোটেই অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে না।

সুপার এইটের শেষ ম্যাচ দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে অভাবনীয় এসব বাস্তবতার সামনে। এখন পর্যন্ত একটি জয় না পাওয়া বাংলাদেশেরও সুযোগ আছে সেমিফাইনাল খেলার। তা যতই কঠিন হোক না কেন, কাগজে-কলমে সুযোগ তো আছেই। একটি ম্যাচে জয় নিয়েই অস্ট্রেলিয়াও আশায় আছে সেমিফাইনালের।

সুপার এইটের ২ নম্বর গ্রুপ থেকে এরই মধ্যে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের। মহানাটকীয় ওই অবস্থা ১ নম্বর গ্রুপে। তিন ম্যাচ জিতে ভারত সেমিফাইনালে উঠে গেছে। কোথায় কোন দলের সঙ্গে সেই সেমিফাইনাল, চূড়ান্ত হয়ে গেছে সেটিও। আগামী ২৭ জুন গায়ানায় দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ভারত মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ডের। দুই বছর আগে অ্যাডিলেডে সর্বশেষ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও দেখা হয়েছিল এই দুই দলের।

২৬ জুন ত্রিনিদাদে অন্য সেমিফাইনালের একটি দলও ঠিক হয়ে আছে। কিন্তু তাতে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিপক্ষ কারা–এটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ—সুপার এইটের ১ নম্বর গ্রুপের বাকি তিন দলই আছে সেমিফাইনালের দৌড়ে। দল তিনটির নাম ভেবেচিন্তেই এই ক্রমানুসারে লেখা হয়েছে। শুরুতেই আফগানিস্তান, কারণ তিন দলের মধ্যে শুধু আফগানিস্তানের ভাগ্যই নিজেদের হাতে। বাংলাদেশকে হারালেই প্রথমবারের মতো কোনো বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। বৃষ্টি বা অন্য কোনো কারণে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়ে গেলেও।

শুধু আফগানিস্তানের ভাগ্যই নিজেদের হাতে

অস্ট্রেলিয়ার হাতে যেখানে কিছুই নেই, তারপরও নামটা বাংলাদেশের আগে লেখার কারণ কী? কারণ বাংলাদেশের ভাগ্যও তাদের হাতে বলতেই পারেন, তবে কাজটা খুব কঠিন। অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের বিপক্ষে বড় পরাজয়ে নেট রানরেটের অবস্থা বড় করুণ (মাইনাস ২.৪৮৯)। আফগানিস্তানের যেখানে তা মাইনাস দশমিক ৬৫০, অস্ট্রেলিয়ার মাইনাস দশমিক ৩৩১। যার অর্থ আফগানিস্তান হেরে গেলে তাদের আর কোনো সুযোগ থাকবে না। এখনই নেট রানরেটে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে পিছিয়ে, তখন তো তা আরও খারাপ হবে।

বাংলাদেশকে শুধু জিতলেই হবে না, নেট রানরেটে পেছনে ফেলতে হবে দুই দলকেই। আরও নির্দিষ্ট করে বললে অস্ট্রেলিয়াকে। অস্ট্রেলিয়াকে পেছনে ফেললে আফগানিস্তান এমনিতেই পেছনে পড়ে যাবে। সেজন্য জিততে হবে কমপক্ষে ৬২ রানের ব্যবধানে। বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাটিং করে ১৪০ রান করলে ওই ৬২ রানের হিসাব। আর আফগানিস্তান যদি প্রথমে ব্যাটিং করে ১৪০ করে, তাহলে বাংলাদেশকে তা তাড়া করতে হবে ১২ ওভারের মধ্যে। রান একটু এদিক-ওদিক হলেই হিসাবটা বদলে যাবে। তবে ৬২ রান বা ১২.৪ ওভারের হিসাব থেকে কাজটা কত কঠিন, সেই ধারণা তো পাওয়াই যাচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আফগানিস্তানের জয় যে বিসর্জন দিয়ে ফেলা সেমিফাইনাল-স্বপ্নকে আবার জাগিয়ে তুলেছে, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা তো সেদিনই জেনেছেন। সেন্ট ভিনসেন্টের হোটেলে ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের প্রায় সবাই দেখেছেন। সোমবারের সকাল-দুপুরে এটাই ছিল দলের মধ্যে একমাত্র আলোচনা। ভারত ২০৫ করে ফেলার পর আরও বেশি গতি পায়। 

এত বড় স্কোর তাড়া করতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বড় ব্যবধানে হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা তো ছিলই। সেটি হলে বাংলাদেশের কাজটা এর চেয়ে সহজ হতো। তা যখন হয়নি, কী আর করা! শেষ পর্যন্ত হবে কি হবে না, এটা না ভেবে নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করাটাকেই লক্ষ্য হিসাবে নিয়েছে বাংলাদেশ দল।

ভারতের কাছে হেরে সেমিফাইনাল নিয়ে শঙ্কা অস্ট্রেলিয়ার

আফগানিস্তানের সঙ্গে খেলা হবে সেন্ট ভিনসেন্টে। দুদিন আগে এখানেই আফগানিস্তান অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে। আর্নস ভেলে তারা খেলতে নামছে টানা দ্বিতীয় ম্যাচ। বাংলাদেশও গ্রুপ পর্বের শেষ দুটি ম্যাচ এখানেই খেলেছে। একটা ম্যাচ বেশি খেলায় সেন্ট ভিনসেন্টের উইকেট সম্পর্কে আফগানিস্তানের চেয়ে একটু বেশিই ধারণা থাকার কথা বাংলাদেশের। সেই ধারণা থেকেই দলের মধ্যে এমন একটা আলোচনাও আছে, ব্যাটিং করাটা এখানে এমনই কঠিন যে, যেকোনো কিছুই হয়ে যেতে পারে। আফগানিস্তান খুব কম রানেই গুটিয়ে যেতে পারে। আবার উল্টোটাও তো হতে পারে। হলে হবে। তাতে কী আসে যায়!

এই 'কী আসে যায়' ভাবার সুবিধাটা আজকের ম্যাচে শুধুই বাংলাদেশের। আফগানিস্তান খেলতে নামবে কখনো যা করতে পারেনি, সেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে। বাংলাদেশের জন্য যেখানে এটা পড়ে পাওয়া একটা সুযোগ, যাতে কাজে লাগানো সম্ভব নয় বলেই ধরে নিয়েছেন বেশিরভাগ মানুষ। এই ম্যাচে বাংলাদেশের হারানোর কিছু নেই। চাপ যা, তার সবই আফগানিস্তানের ওপর।

এমনিতে আগামী ২৬ জুন প্রথম সেমিফাইনালের দিন বাংলাদেশ দলের দেশে ফেরার ফ্লাইট ঠিক হয়ে আছে। সেন্ট ভিনসেন্ট থেকে মায়ামি। সেখান থেকে দুবাই হয়ে ঢাকা। সেই ফ্লাইটে ওঠার বদলে ত্রিনিদাদে আসার বিমানে উঠতে হলে একরকম অসম্ভবকে সম্ভব করতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ার কথাটা একবার ভেবে দেখুন। ত্রিনিদাদ, না দেশে ফেরার ফ্লাইট–এই প্রশ্ন তো ঘুরপাক খাচ্ছে যেকোনো বিশ্বকাপে ফেবারিট হিসেবে শুরু করা এই দলেও। সেন্ট লুসিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে জেতার পর ভারতের সেদিন বিকালেই সেমিফাইনাল খেলতে গায়ানা চলে গেছে। আর অস্ট্রেলিয়া বসে আছে সেন্ট লুসিয়াতেই। যে ম্যাচ নিয়ে এমনিতে হয়তো তাদের কোনো আগ্রহই থাকত না, সেই বাংলাদেশ-আফগানিস্তান দেখতে টেলিভিশনের সামনে থাকবেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের সবাই। 

ত্রিনিদাদের বিমান না দেশে ফেরার–এই প্রশ্নের উত্তরও যে দেবে ওই ম্যাচ!