বিশ্বকাপে কী চাই বাংলাদেশ দলের কাছে? কেউ বলেছেন প্রত্যাশা সুপার ফোরে খেলা, কেউ বলেছেন আগে ধরে রাখতে হবে পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা। সাকিব আল হাসানের দলের কাছে নিজেদের আশার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক চার ক্রিকেটার—
শেষ বল পর্যন্ত লড়ুক
আতহার আলী খান
জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার
জয় বা পরাজয়ের কথা বলব না, আমি বাংলাদেশের খেলায় একটা জিনিসই ধারাবাহিকভাবে দেখতে চাই। সেটা হচ্ছে, শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করার মানসিকতা। বিশ্বকাপের প্রতিটা ম্যাচে এই জিনিসই আমি দেখতে চাইব। শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করতে পারা মানে আমরা বেশির ভাগ ম্যাচেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারব। এমনকি জিততেও পারব।
বিশ্বকাপের আগে অনেক ধরনের কথা হয়েছে আমাদের দল নিয়ে। ওপেনিং নিয়ে একটা দুশ্চিন্তা ছিল। আমার মনে হয়, লিটন দাসের সঙ্গে তানজিদ হাসানের জুটিটা জমে যাবে। বাঁহাতি-ডানহাতি সমন্বয়ও কাজে দেবে। আশা করি, ওরা ভালো করবে। আমরা দল হিসেবে খুবই ভালো ফিল্ডিং করছি। বিশ্বকাপে ফিল্ডিংটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে।
একটা জিনিস সবাইকে মনে রাখতে হবে, ভারতে যে ধরনের উইকেটে খেলা হবে, সেখানে ৩০০-৩৫০ রান তাড়া করা সম্ভব। যদি আমাদের ওপেনিং জুটি ভালো করে, তাহলে দেখবেন যেকোনো কিছুই হতে পারে। নাজমুল হোসেন খুব ভালো করছেন। সাকিব, মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকের অভিজ্ঞতাও আমাদের বিরাট শক্তি।
বাংলাদেশ দলে মেহেদী হাসান মিরাজের মতো বৈচিত্র্যময় ক্রিকেটার আছেন, যিনি সব জায়গায় ব্যাটিং করতে পারেন। শেখ মেহেদী হাসানের সংযোজনটা খুব কাজে দেবে। ম্যানেজমেন্টের জন্য এটা মধুর চ্যালেঞ্জ। কাকে রেখে কাকে নেওয়া উচিত, নিশ্চিত করে বলা কঠিন। পেস বোলারদের কথা আলাদা করে বলতেই হয়। তাসকিন, হাসানরা সবাই ভালো করছেন। সব বিভাগ একসঙ্গে জ্বলে উঠলে যেকোনো কিছুই সম্ভব। আর সেটা হলে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা চারে জায়গা করে নেওয়া সম্ভব।
আমি চাই ধারাবাহিকতা
আকরাম খান
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক
বাংলাদেশ দল এখন পর্যন্ত এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ তিনটি ম্যাচ জিতেছে। যখন আমাদের কোনো এক্সপোজার ছিল না, ভালো অবকাঠামো ছিল না, তখনো কিন্তু আমরা প্রথমবার বিশ্বকাপে গিয়ে দুটি ম্যাচ জিতেছি! আমি তাই বাংলাদেশ কয়টা ম্যাচ জিতবে, কয়টা ম্যাচ জেতা উচিত, সে আলাপে যেতে চাই না। আমি চাই ছেলেরা ধারাবাহিকতা ধরে রাখুক, টুর্নামেন্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। সেটা ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং—তিন বিভাগেই।
আমি যখন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান ছিলাম, তখনই ২০২৩ বিশ্বকাপ নিয়ে একটা পরিকল্পনা হয়েছিল। খেলাটা যেহেতু ভারতে, কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সহজ হবে বাংলাদেশ দলের জন্য। আমরা তখন ভেবেছিলাম, দলের মধ্যে তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার মিশ্রণ থাকবে। সে জন্য মাঝের সিরিজগুলোতে অভিজ্ঞদের বিশ্রাম দিয়ে তরুণদের খেলাব। যে দলটা বিশ্বকাপে গেল, সেখানে দু-একজন বাদে সেই প্রত্যাশিত সমন্বয়টাই পেয়েছি।
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের ফিল্ডিং খুব উন্নত হয়েছে। বোলিংয়েও ভালো করছে। ব্যাটসম্যান নতুন যারা এসেছে, তারা কমবেশি ভালো করছে। অভিজ্ঞরা তো আছেই।
এবার ব্যাটিংয়ের দিকেই চোখ থাকবে বেশি। কারণ, বিশ্বকাপে ৩০০ রানের খেলা হবে। কিন্তু আমাদের ব্যাটিং অতটা ধারাবাহিক নয়। আমাদের শুরুর দিকের চার ব্যাটসম্যানের মধ্যে দুজনকে বড় ইনিংস খেলতে হবে। তাহলেই আমরা বোলিং ও ফিল্ডিং দিয়ে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে পারব।
শেষে একটা কথা না বলে পারছি না—এই প্রথম বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপে গেল ‘খান পরিবার’–এর কোনো খেলোয়াড় ছাড়া। বিশ্বকাপের মতো বড় আসরের আগে দল নিয়ে বাইরে যে আলোচনা–সমালোচনা হয়, সেটা আসলে কখনোই দলকে সাহায্য করে না। দিন শেষে দলের পারফরম্যান্সেই তার প্রভাব পড়ে, দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সুপার ফোরের স্বপ্ন দেখি
খালেদ মাসুদ
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক
বিশ্বকাপ এলে আমরা পুরো দেশ আশাবাদী হয়ে উঠি। আমিও ব্যতিক্রম নই। আর সবার মতো আমিও চাই, বাংলাদেশ সুপার ফোরে উঠুক। কিছু দল আছে যারা বাংলাদেশ থেকে পিছিয়ে আছে। প্রস্তুতি ম্যাচেই দেখেছি, শ্রীলঙ্কাকে কীভাবে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এবারের বিশ্বকাপে ভালো দল বলতে গেলে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও নিউজিল্যান্ডের নাম বলব। এই চার দলকে আমার খুব শক্তিশালী মনে হয়। বাংলাদেশ হয়তো কাগজে–কলমে পাঁচ-ছয় নম্বর দল। কিন্তু বিশ্বকাপে যদি পাঁচ-ছয়েই থাকি, তাহলে তো আর অর্জনের কিছু হলো না। আমি তাই স্বপ্ন দেখি, বাংলাদেশ সুপার ফোরে যাবে।
টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের বিশ্বকাপে ভালো করার সুযোগ থাকবে। অলরাউন্ডাররাও ভালো করবে। আমি নাজমুল হোসেনের ব্যাটে অনেক রান আশা করছি। আমি খুব আশাবাদীও যে সে ভালো কিছু করবে। অনেকে তানজিদ হাসানের কথা বলছেন। তাকে নিয়েও আমার বড় আশা। সে যদি মানিয়ে নেয়, তাহলে বাংলাদেশকে দারুণ কিছু ইনিংস উপহার দিতে পারে।
আমার মনে হয়, মুশফিকেরও এবার বিশ্বকাপটা ভালো যাবে। আর সাকিব দলের পারফরম্যান্সে একটা আলাদা মাত্রা যোগ করবে। সে টপ অর্ডারে ব্যাটিং করবে, বড় রানের সুযোগ থাকবে তাতে। সঙ্গে বোলিংও। সব মিলিয়ে সাকিব আশা করি দারুণ কিছুই করবে বিশ্বকাপে।
বিশ্বকাপে বরাবরের মতোই ব্যাটিং–সহায়ক উইকেট থাকবে। সেটা সব দল খুব ভালোভাবে কাজে লাগাতে চাইবে। বাংলাদেশ কেমন করবে, সেটাই দেখার বিষয়। আমার মনে হয়, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভালো করা নির্ভর করবে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ওপর। আশা করি, সাকিবরা তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সেটা করতে পারবে।
আমি তাকিয়ে প্রথম ম্যাচের দিকে
হাসিবুল হোসেন
জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার
বাংলাদেশ দলকে নিয়ে আগাম কিছু বলা একটু কঠিন। এই যে দেখুন, প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে তাদের দেখে মনে হয়েছে খুবই ভালো দল। কিন্তু পরেরটায় যতটুকুই খেলা হয়েছে, অতটা ভালো মনে হয়নি। তবু খেলার আগে হেরে যেতে চাই না। আশা হারাতে চাই না।
সেমিফাইনাল পর্যন্ত যাওয়ার একটা আশা তো আমাদের সবার আছে। সেটা অনেকটাই নির্ভর করবে বাংলাদেশ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটা কেমন খেলে, সেটার ওপর। আমি ওই ম্যাচটার দিকেই তাকিয়ে এখন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে যদি বাংলাদেশ ভালো করে, তাহলে যেকোনো কিছু হতে পারে। আত্মবিশ্বাস বাংলাদেশকে নয়টা ম্যাচের মধ্যে পাঁচটাতেও জয় এনে দিতে পারে।
ভারত বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে ব্যাটিংয়ে। ব্যাটসম্যানরা দলগতভাবে রানে নেই, এটা দুশ্চিন্তার বিষয়। মূল আসরে যদি ব্যাটসম্যানরা ছন্দে ফিরতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ দলের ভালো করার সম্ভাবনা বাড়বে। কারণ, বোলিংয়ে তাসকিন, শরীফুল, হাসানরা ভালো করছে। শেখ মেহেদীও দারুণ করছে। মেহেদী হাসান মিরাজ ব্যাটে–বলে ভালো ফর্মে আছে। আর সাকিব আল হাসান তো আছেই। বিশ্বকাপে বড় ইতিবাচক দিক বলতে এটাই। সঙ্গে ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিক হয়ে ওঠার অপেক্ষা।
লিটন দাসের ভালো খেলা খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে বাংলাদেশের জন্য। সে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ভালো করলেও পরেরটিতে রান পায়নি। নাজমুল এ বছর ভালো ফর্মে আছে। তানজিদকে ভালো করতে দেখেও ভালো লাগছে। তাওহিদ হৃদয়ও যদি ছন্দটা খুঁজে পায়, তাহলে বিশ্বকাপে চমক দেখাতে পারবে বাংলাদেশ। যাদের কথা বললাম, তারা সবাই তরুণ। আশা করি, অভিজ্ঞরাও তাদের সঙ্গে জ্বলে উঠবে।