‘আপু প্লিজ, আপু প্লিজ।’
নিগার সুলতানাকে ঘিরে ধরেছে স্কুলপড়ুয়া মেয়েরা। কেউ খাতা, কেউ নোটবুক, কেউবা আবার বাড়িয়ে দিয়েছে একটা পৃষ্ঠা। সবার উদ্দেশ্য একটাই—বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়কের একটা অটোগ্রাফ নেওয়া। শিক্ষকের বারণ শোনারও সময় নেই তখন তাদের। সিলেটের আম্বরখানা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে নিগার সই দিয়ে যাচ্ছিলেন একের পর এক। সময় বেশি নেই, তবুও নিগারকে অটোগ্রাফের অনুরোধ শুনে যেতে হচ্ছিল।
শেষ পর্যন্ত কয়েকজনকে ‘হতাশ’ হতে হলো। তবে একটু পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মাঠে একটু ক্রিকেটও খেললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। নিজে ব্যাটিং করলেন, পরে এক শিক্ষার্থীকে বোলিং করলেন পেসার মারুফা আক্তার। দুই ক্ষেত্রেই উইকেটকিপিংয়ের দায়িত্বে থাকলেন ফাহিমা খাতুন।
ভারতের বিপক্ষে চলমান টি-টোয়েন্টি সিরিজে শিক্ষার্থীদের মাঠে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানোর পাশাপাশি মেয়েদের ক্রিকেটে উদ্বুদ্ধ করতে আজ সিলেটের তিনটি স্কুলে গিয়েছিলেন অধিনায়ক নিগার, লেগ স্পিনার ফাহিমা ও পেসার মারুফা। সঙ্গে ছিলেন বিসিবির উইমেনস উইংয়ের হেড অব অপারেশনস ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার।
আম্বরখানা গার্লস স্কুলের পর নিগাররা যান ব্লু বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজ, এরপর আনন্দনিকেতনে। সব খানেই শিক্ষার্থীদের সিরিজ দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন হাবিবুল ও নিগার। সঙ্গে মেয়েদের ক্রিকেট খেলতে উৎসাহও দিয়েছেন। স্কুলের প্রধানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে জাতীয় দলের সবার অটোগ্রাফ-সংবলিত জার্সি।
পরে আজকের অভিজ্ঞতা নিয়ে নিগার বললেন, ‘আমার জন্য একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা। আমার অনেক ভালো লেগেছে। যে তিনটি স্কুলে গিয়েছি, বাচ্চাদের যে উৎসাহ দেখেছি এবং আগ্রহ—তারাও খেলতে চায়। পুরো দল আসতে পারলে হয়তো সবারই আরও অনেক ভালো লাগত। ভালো একটা উদ্যোগ। যারই বুদ্ধি, আমি বলব অসাধারণ। মেয়েদের ক্রিকেটের প্রচারণাও হলো, পাশাপাশি এ সিরিজেরও একটা হাইপ তৈরি করা গেল।’
মেয়েদের ক্রিকেটে আনতে গেলে স্কুল অনেক বড় মাধ্যম বলেও মনে করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘তারা অনেক রোমাঞ্চিত ছিল। তারা খেলাটা অনুসরণ করে। আর এটা আমাদের জন্যও ভালো, কারণ বিসিবিও এটাই চায়—মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে প্রচার-প্রসার যত বাড়ানো যায়। এটা স্কুল থেকেই শুরু করতে হবে, আমিও কিন্তু স্কুল ক্রিকেট থেকেই শুরু করেছি। স্কুলের মেয়েরা যত আগ্রহী হবে, ততই মেয়েদের ক্রিকেট সমৃদ্ধ হবে।’
ক্রিকেট খেলায় কে উৎসাহ দিল, ভালো অধিনায়ক হতে গেলে কী করতে হবে, মাঠে কিংবা মাঠের বাইরে অধিনায়কত্বের মূলমন্ত্র কী—আনন্দনিকেতনে শিক্ষার্থীদের এমন কয়েকটি ‘কঠিন’ প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন নিগার। শুধু ক্রিকেট নয়, স্কুলের ক্লাস ক্যাপ্টেন হতে গেলেও যে সবার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখতে হবে—দিয়েছেন সে পরামর্শও।
সিলেটে নিরাপত্তা-সংক্রান্ত ব্যাপারে প্রথম দিন মাঠে দর্শক ছিলেন না খুব একটা। তবে বিসিবি চায়, অন্তত শিক্ষার্থীরা মাঠে আসুক। টিকিট প্রয়োজন নেই, শুধু একটা আইডি কার্ড হলেই চলবে—বলা হয়েছে এমন। দ্বিতীয় ম্যাচের আগে দুপুর থেকে ছিল অনুশীলন, তার আগে নিগাররা গেলেন এ প্রচারণায়।
দেশে এমনিতে ক্রিকেট ঘিরে উন্মাদনার কমতি নেই, তবে সেটির বেশির ভাগই ছেলেদের ক্রিকেটে। মেয়েদের ক্রিকেটে তাই বিসিবিকে এমন উদ্যোগের পথে হাঁটতে হচ্ছে। ভবিষ্যতের নারী খেলোয়াড় তৈরি করতেও এমন উদ্যোগের বিকল্প নেই বলে মনে করেন বাশার, ‘আমরা মেয়েদের ক্রিকেটকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছি। বিশেষ করে সিলেটে খেলা চলছে, আমরা চাই মেয়েরা আসুক খেলা দেখতে। সবাই যেন মাঠে খেলা দেখতে আসে। আশা করি, যে প্রচারণা করলাম, এখান থেকে যদি কিছু খেলোয়াড় উঠে আসে উদ্বুদ্ধ হয়ে, সেটাই আমাদের পাওনা।’
এর আগে বেশ কিছু দিন পুরুষ দলের নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করা বাশারের মতে, মেয়েদের ক্রিকেটে চ্যালেঞ্জটা স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি, ‘মেয়েরা যে খেলতে আসতে পারে, এটা নিরাপদ জায়গা—সেটা বোঝাতে হবে। আরও মেয়ে খেলতে উদ্বুদ্ধ হবে, তখন আমাদের পাইপলাইন সমৃদ্ধ হবে। চ্যালেঞ্জটা অনেক বড়। ছেলেদের ক্রিকেটে তো এসব দরকার হয় না, অনেকেই মাঠে আসে। ফলে খেলোয়াড়ও আমরা বেশি পাই।’
অন্য দেশের উদাহরণ টেনে বাশার এরপর বললেন, ‘আমরা চাই সব সেক্টর থেকে মেয়েরা খেলতে আসুক। ভিতটা যদি আরও একটু শক্ত করতে পারি, তাহলে আমরা এগিয়ে যাব। কারণ, অন্যান্য দেশে মেয়েদের ক্রিকেট এগিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি খেয়াল করলে দেখবেন অনেকটাই এগিয়ে গেছে। তারা সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছে। আমরা ট্রেন্ডটা না ধরলে পিছিয়ে যাব। বাকি দেশগুলো মেয়েদের ক্রিকেট অনেক সিরিয়াসলি খেলে। তারা অনেক পেশাদার। আমি মনে করি আমরা এখনো ততটা পেশাদার হতে পারিনি। আমরা এটা যদি তৈরি করতে পারি—তৈরি করতে হবে—কারণ, মেয়েদের ক্রিকেটও অনেক কঠিন হয়ে উঠছে।’