হাথুরুসিংহের কাছে সফল নিউজিল্যান্ড সফর
হাথুরুসিংহের কাছে সফল নিউজিল্যান্ড সফর

নিউজিল্যান্ড সফর কেমন হলো—হাথুরুসিংহে বলছেন ‘সফল’

নিউজিল্যান্ডকে তাদের আঙিনায় সিরিজে হারানো যায়নি। কিউইদের বিপক্ষে আজ তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে হেরে গেছে বাংলাদেশ। তাতে সিরিজটি শেষ হয়েছে ১-১-এ। বাংলাদেশের জন্য এটাও অবশ্য নতুন ঘটনা। তাসমান পাড়ের দেশটায় যেকোনো সংস্করণের খেলায় এবারই প্রথম কোনো সিরিজ ড্র করল বাংলাদেশ। এর আগে ওয়ানডে সিরিজ হারলেও শেষ ম্যাচটা জেতায় খরা কাটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের মাটিতে ওয়ানডে জয়ের।

সব মিলিয়ে নিউজিল্যান্ড সিরিজটাকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন? আজ মাউন্ট মঙ্গানুইতে ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে এ প্রশ্ন করা হয়। তাঁর উত্তরটা ছিল এমন, ‘আমরা এখানে আগে কী করেছি, তা নিয়ে আমরা সিরিজের শুরুতে কথা বলেছি। আমরা আগের চেয়ে ভালো কিছু করতে চেয়েছিলাম। সেই দিক থেকে যদি চিন্তা করি, তাহলে এই সফরকে খুবই সফল বলব।’

২০ বছরের বেশি সময় ধরে নিউজিল্যান্ড সফর করছে বাংলাদেশ। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ২০২২ সাল পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২টি ম্যাচ খেলেও জয়ের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। যেখানে গত দুই বছরের মধ্যেই জয় এসেছে সব সংস্করণেই। নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের ভাগ্য বদলে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে হাথুরুসিংহে বলেছেন, ‘খেলোয়াড়দের মানসিকতা। দলটা তরুণ। ওদের কোনো ভয়ডর নেই। ওরা প্রতিযোগিতা করতে মুখিয়ে ছিল।’

নাজমুল হোসেনের অধিনায়কত্বের বিষয়টি তো আছেই, ‘আরেকটা ব্যাপার হলো, শান্তর নেতৃত্ব। সে খুব ভালো করেছে। কৌশলগতভাবে সে বেশির ভাগ সময় সঠিক ছিল। খেলোয়াড়দের বার্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে সে একদম পরিষ্কার ছিল, সে দলের কাছ থেকে কী চায়, কী প্রত্যাশা করে। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, আমরা এবার মৌলিক বিষয়গুলো লম্বা সময় ধরে করতে পেরেছি, আগের বারের তুলনায়।

সংবাদ সম্মেলনে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে

নিউজিল্যান্ডে সাফল্যের কৌশলগত একটা ব্যাখ্যাও আছে হাথুরুসিংহের। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ দল স্পিন নয়, গতিময় উইকেটেই বরং ভালো খেলে থাকে। তাঁর মুখেই শুনুন সে কথা, ‘বেশি কিছু বলতে চাই না। তবে আমরা কিন্তু স্পিনের বিপক্ষে খুব ভালো নয়। আমরা বাউন্সি উইকেটে বরং ভালো খেলি। যখন বাউন্স থাকে, তখন আপনি ৩৬০ ডিগ্রিতে রান করতে পারেন। ব্যাটসম্যানরা ভালোই করেছে। বিশেষ করে বোলাররা। শরীফুল, সাকিব, মোস্তাফিজ এ ধরনের উইকেটে বোলিং উপভোগ করে। আমার মনে হয়, আমরা কন্ডিশনের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিয়েছি, আগের বারের তুলনায়।’

সেদিক থেকে সামগ্রিকভাবে নিউজিল্যান্ড সফরকে সফল বলা যায়। তবে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিততে না পারার হতাশা কিছুটা হলেও থেকে যাচ্ছে। হাথুরুসিংহের কথায় আছে সে সুর, ‘হ্যাঁ, হতাশ তো অবশ্যই। আমরা সবাই জিততে চাই। এ জন্যই খেলাটা খেলি। একপর্যায়ে আমাদের সুযোগও এসেছিল ম্যাচ জেতার। কিন্তু আমরা যথেষ্ট রান করিনি।’

আজ আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ দল রান করেছে মাত্র ১১০। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা তুলে ধরে অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘দুই ওভার পর আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছিলাম। তখন মনে হচ্ছিল এই উইকেটটা ১৬০ রানের নয়, হয়তো ১৪০ থেকে ১৫০ রানের। আমরা সে জায়গায় পৌঁছাতে পারিনি। আমরা ভালো ব্যাটিং করিনি। আমাদের রান কম হয়েছে।’

তবে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার পরও বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতায় রেখেছেন বোলাররা। রান তাড়ায় ৪৯ রানে নিউজিল্যান্ডের ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন শরীফুল-মেহেদীরা। স্বাভাবিকভাবেই বোলারদের লড়াইয়ের প্রশংসা করেছেন প্রধান কোচ, ‘বোলাররা আমাদের প্রতিযোগিতায় রেখেছে। সিরিজ জুড়ে আমরা যেভাবে বোলিং করেছি, সেটা অসাধারণ ছিল।’

সিরিজের সেরা খেলোয়াড় শরীফুলের কথাটা আলাদা করেই বললেন হাথুরুসিংহে, ‘আমরা ড্রেসিংরুমে ওকে নিয়ে কথা বলেছি। ওর বোলিং আমাদের জন্য ইতিবাচক ছিল। তিন সংস্করণের ক্রিকেটে সম্প্রতি ও অসাধারণ বোলিং করছে। আট মাস আগেও শরীফুল দলে ছিল না। কোনো সংস্করণেই খেলছিল না। এখন ও আমাদের মূল বোলার। অসাধারণ।’ যোগ করেছেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের বোলিংও, ‘আরেকটি ইতিবাচক হচ্ছে রিশাদের বোলিং। আমরা একজন লেগ স্পিনারের অভাব বোধ করছিলাম। ও খুব ভালো করেছে।’