ভারত বলেছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে পাকিস্তানে দল পাঠানো হবে না। পাকিস্তান বলেছে, তাহলে ভবিষ্যতে পাকিস্তানও ভারতে দল পাঠাবে না। আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ঘিরে ভারত ও পাকিস্তানের এই অচলাবস্থার অবসান ঘটেছে। আইসিসি বলেছে ২০২৭ পর্যন্ত দুই প্রতিবেশী দেশ একে অপরের দেশে খেলতে যাবে না। নিজেদের ম্যাচ খেলবে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে ভারত, পাকিস্তান দুই দেশই জিতেছে। পাকিস্তানে দল না পাঠানোর বিষয়ে ভারতের অনড় অবস্থান বজায় থাকছে। আবার পাকিস্তান শুরুতে হাইব্রিড মডেলে রাজি না হলেও শেষ পর্যন্ত মানতে বাধ্য হয়েছে। উল্টো দিকে পাকিস্তানও সামনের টুর্নামেন্টগুলোতে ভারতে দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। এমনকি আইসিসি থেকে বাড়তি একটি টুর্নামেন্ট আয়োজনের স্বত্বও পেয়েছে। কিন্তু আইসিসির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর দুই দেশের ক্রিকেট মহলে জয়ের অনুভূতি কোথায় বেশি?
ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআই পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটারদের মন্তব্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তিনজন সাবেক ক্রিকেটারের এই বক্তব্যে একটি বিষয় কমন—চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিয়ে অচলাবস্থার মধ্যে বিসিসিআইয়ের সঙ্গে লড়াইয়ে পিসিবিই জিতেছে। কীভাবে জিতেছে, সেটা বোঝাতে গিয়ে পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক জাভেদ মিয়াঁদাদ বলেছেন, ‘আমি মনে করি পিসিবি বুদ্ধিমানের মতো কাজ করেছে। তাড়াহুড়ো করে কিছু করার পরিবর্তে এবং আইসিসি ও অন্যান্য দেশের কাছ থেকে বিচ্ছিন্নতার মুখোমুখি হওয়ার পরিবর্তে একটি সমাধান বেছে নিয়েছিল। যেখানে আমি বিশ্বাস করি যে পিসিবি বিসিসিআইয়ের চেয়ে বেশি লাভ করেছে।’
বিসিসিআই খুবই শক্তিশালী ও আর্থিকভাবে প্রভাবশালী। তবে গত বছরের এশিয়া কাপের মতো এ বছর কঠোর অবস্থান নিতে পারেনি তারা। এখানে মূল অর্জন হচ্ছে আমরাই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আয়োজক এবং সামনের আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারতে যেতে হবে না।ইকবাল কাশিম, পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার
আইসিসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাকিস্তান ও ভারতের টুর্নামেন্টগুলোতে হাইব্রিড মডেল কার্যকর থাকবে সামনের চারটি আসরে। এর মধ্যে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ও ২০২৮ নারী টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজক। আর বিসিসিআই আয়োজক ২০২৫ নারী বিশ্বকাপ ও ২০২৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের। তবে ২০২৮ নারী টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নতুন করে যুক্ত হয়েছে, যা চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হাইব্রিড মডেলে রাজি হওয়ার বিনিময়ে দেওয়া হয়েছে।
মিয়াঁদাদ এটিকে জয় উল্লেখ করে বলেছেন, ‘পাকিস্তান অনেক দিন পর বড় টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চলেছে। ভারতকে এই বার্তাটা দিতে পেরেছে যে আমাদের দেশে না এলে আমরাও যাব না।’
পাকিস্তানের আরেক সাবেক অধিনায়ক মঈন খানও আইসিসির সিদ্ধান্ত পিসিবির জন্য ভালো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন, ‘পাকিস্তান (চ্যাম্পিয়নস ট্রফির বাইরেও) আরও একটি আইসিসি টুর্নামেন্ট আয়োজনের স্বত্ব পেয়েছে। এটাও পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য ভালো খবর।’
পাকিস্তানের হাতেই আয়োজক স্বত্ব থাকছে। তারা শুরুতে হাইব্রিড মডেলের বিরুদ্ধে বললেও শেষ পর্যন্ত মানতে হয়েছে। তবে পাকিস্তান খালি হাতে ফেরেনি।আকাশ চোপড়া, ভারতের সাবেক ক্রিকেটার
২০২৩ সালে ভারতের চাওয়ায় এশিয়া কাপ হয়েছিল হাইব্রিড মডেলে। তবে ওই বছরই পাকিস্তান দল ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল বিনা শর্তে। এবার তেমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটায় খুশি পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার ইকবাল কাশিমও, ‘বিসিসিআই খুবই শক্তিশালী ও আর্থিকভাবে প্রভাবশালী। তবে গত বছরের এশিয়া কাপের মতো এ বছর কঠোর অবস্থান নিতে পারেনি তারা। এখানে মূল অর্জন হচ্ছে আমরাই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আয়োজক এবং সামনের আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারতে যেতে হবে না।’
ভারতের সাবেক ক্রিকেটার আকাশ চোপড়াও পাকিস্তানের ক্ষতি হয়নি বলে মনে করেন। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে তিনি বলেছেন, ‘পাকিস্তানের হাতেই আয়োজক স্বত্ব থাকছে। তারা শুরুতে হাইব্রিড মডেলের বিরুদ্ধে বললেও শেষ পর্যন্ত মানতে হয়েছে। তবে পাকিস্তান খালি হাতে ফেরেনি।’
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি–মার্চে হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিরপেক্ষ ভেন্যু কোনটি হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আইসিসি জানিয়েছে, হাইব্রিড মডেলের বেলায় আয়োজক বোর্ড নিরপেক্ষ ভেন্যু প্রস্তাব করবে, আইসিসি অনুমোদন করবে। পাকিস্তান চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য দুবাইয়ের পাশাপাশি কলম্বোর কথা ভাবছে।