নাজমুল হোসেন, অধিনায়ক…প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন এরপর দ্বিতীয় নামটাই বললেন তাসকিন আহমেদের। অবাক কাণ্ড!
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণার এক দিন আগেও চোটের কারণে যার বিশ্বকাপে যাওয়া নিয়েই অনিশ্চয়তা ছিল, শেষ পর্যন্ত যাঁকে দলে নেওয়া হয়েছে ২৫ মে চূড়ান্ত দল দেওয়ার আগে পুরো ফিট হওয়া সাপেক্ষে, যিনি আবার টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানও নন, একজন পেসার; বিশ্বকাপের খেলোয়াড় তালিকার ক্রমে তিনি কী করে দুই নম্বরে থাকেন!
ধাঁধা কেটে গেল প্রধান নির্বাচকের বলা পরের কথায়, ‘…ভাইস ক্যাপ্টেন।’ গাজী আশরাফ এরপর দলের বাকি সদস্যদের নাম পড়ে গেলেন। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের জন্য সেই নামগুলোতে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হলো তাসকিন বিশ্বকাপ দলের ‘সহ-অধিনায়ক’ শুনে।
এমন নয় যে এই পদটার জন্য তাসকিন যোগ্য নন। বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বেশি ত্যাগী এবং নিবেদিতপ্রাণ ক্রিকেটারদের তালিকা করলে সেখানে এই পেসার ওপরের দিকেই থাকবেন। দলে তাঁর গ্রহণযোগ্যতাও যথেষ্ট। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে তাঁর নাজমুল হোসেনের ডেপুটি হওয়া নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তবু বিস্ময়টা এই কারণে যে তাসকিন এই ভূমিকায়ও আসতে পারেন, সেটি কারও ভাবনায় ছিল না। তার ওপর চোটের কারণে তাঁকে নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে যে আলোচনা; সেটিও ও রকম কিছু ভাবার সুযোগ রাখেনি।
তা জাতীয় দলের সহ-অধিনায়ক, মানে নেতৃত্বের পরিধিতে এসে কেমন লাগছে তাসকিনের? আজ দল ঘোষণার পর মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হয়েছিল তাঁর প্রতিক্রিয়া। তাসকিন একটা কথাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বললেন, ‘ভালো লাগছে। অসম্ভব ভালো লাগছে।’ আর বললেন, তাঁর চেয়েও বেশি খুশি তাঁর মা–বাবা, ‘আব্বা-আম্মা অনেক বেশি খুশি হয়েছেন। এটাই বেশি ভালো লাগছে।’
এমন উপলক্ষগুলোতে কেন্দ্রীয় চরিত্র যত বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠেন, ততই লোভ জাগে আরেকটু গভীর, আরেকটু বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া যদি পাওয়া যায়। বিশ্বকাপ দলে থাকবেন কি থাকবেন না, সেই অনিশ্চয়তার ধোঁয়াশার মধ্যে দুম করে একেবারে সহ-অধিনায়ক হয়ে যাওয়া তাসকিনও নিশ্চয়ই এমন দায়িত্বে অনেক অনেক বেশি রোমাঞ্চিত। সেই রোমাঞ্চের খোঁজ নিতে গেলে কপট রাগই করে বসলেন যেন, ‘কেন ভাই, আমি কি এটা ডিজার্ভ করি না?’
—অবশ্যই ডিজার্ভ করেন। কিন্তু ভেবেছিলেন কি এবারই দায়িত্বটা পেতে যাচ্ছেন?
তাসকিন: এটা ভাবিনি ঠিক। দল ঘোষণা যখন হলো, তখনই প্রথম জেনেছি আমি সহ-অধিনায়ক। তবে আমি মনে করি, এটা আমি ডিজার্ভ করি।
বিসিবিও সেটা মনে করে বলেই বিশ্বকাপের মতো আসরে তাসকিনকে সহ-অধিনায়ক করেছে। দল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে বিসিবির হয়ে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা দিলেন তাঁকে সহ-অধিনায়ক করার, ‘এটা বিসিবির সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে আমাদের অবহিত করা হয়েছে যে তারা ভাইস ক্যাপ্টেন হিসেবে তাসকিন আহমেদকে বিবেচনা করেছে। উনি (তাসকিন) পরের জেনারেশনের একজন সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়। একটা ডিপার্টমেন্টকে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলের হয়ে বিভিন্ন ফরম্যাটে খেলছে। সে জন্যই হয়তো তাকে ডিজার্ভিং ক্যান্ডিডেট মনে করছে বিসিবি।’
কিন্তু চোটের কারণে যাঁর বিশ্বকাপে খেলাই এখনো কিছুটা অনিশ্চিত, তাঁকে সহ-অধিনায়ক করে পাঠানোয় কি একটা ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে না! তাসকিনের দুর্ভাগ্য না কাটলে হয়তো হাসান মাহমুদ পেস বোলিংয়ে তাঁর বিকল্প হবেন, কিন্তু এখন তো সেই পরিস্থিতিতে সহ-অধিনায়কও খুঁজতে হতে পারে নতুন করে!
গাজী আশরাফ আশাবাদী, সে রকম পরিস্থিতিতে হয়তো পড়তে হবে না দলকে, ‘যতটুকু তথ্য আমাদের জানা আছে, ওই তথ্যের আলোকে আমরা আশা রাখছি, তিনি হয়তো বিশ্বকাপ চলার কোনো একটা পর্যায়ে সুস্থ হয়ে যাবেন। সেই আলোকেই তাঁকে দলভুক্ত করা হয়েছে।’