ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাঁচবার, টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুবার। এর আগে সাতবার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। অষ্টমবারের চেষ্টায় সেমিফাইনাল ‘ধাঁধা’ টপকে প্রোটিয়াদের ফাইনালে ওঠাই তো অনেক বড় ব্যাপার। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক এইডেন মার্করামের চোখ আরেকটু দূরে। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপায়!
বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে আজ ভারতের মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ৩০ মিনিটে। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে শিরোপা জয়ের আশার কথাই শোনালেন মার্করাম। সেই সংবাদ সম্মেলনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হলো:
সত্যি বলতে, স্রেফ নতুন একটি ক্রিকেট ম্যাচ হিসেবেই দেখছি। আমরা সবাই জানি ভারত দারুণ দল। আমরা দক্ষিণ আফ্রিকানরা, দল হিসেবে কয়েক বছর ধরে সঠিক পথেই আছি। টুর্নামেন্টগুলোয় আমরা হয়তো নিজেদের প্রত্যাশামতো এগোতে পারিনি। আগামীকাল (আজ) তাই ভারতের মতো ভালো দলের বিপক্ষে লড়াইটা রোমাঞ্চকরই হবে। আমাদের জন্যও এটা ভালো সুযোগ।
শতভাগ নিশ্চিত নই। তবে আমি একমত। বিভিন্ন ম্যাচে এমন কিছু কঠিন মুহূর্ত ছিল, যেগুলো ফলে প্রভাব রাখত এবং সেসব মুহূর্ত সামলেই আমরা জিতেছি। এ কাজ টুর্নামেন্টে দুবার, তিনবার কিংবা চারবার করলে সেটি দলকে আত্মবিশ্বাস দেয়—যেকোনো জায়গা থেকেই জেতা সম্ভব। এটা যেকোনো দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। সাদা বলের স্কোয়াডে বেশ কয়েক বছর ধরে সবাই একসঙ্গে খেলছে। শেষ পর্যন্ত দলে সবাই নিজ নিজ দায়িত্বটা বুঝতে পেরেছে এবং আমার মনে হয়, ব্যাপারটি কঠিন সেসব মুহূর্ত জিততে ভূমিকা রেখেছে।
হ্যাঁ, ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন একটি টুর্নামেন্ট। তবে অধিনায়ক হিসেবে দুই দিকই দেখতে হয়। (পিচ) ব্যাটিং কিংবা বোলিংবান্ধব—যেটিই হোক, দল পারফর্ম করলে এবং খেলোয়াড়েরা নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করতে পারলে অধিনায়ক হিসেবে খুশি লাগে। তবে বিশ্বজুড়েই টি–টোয়েন্টি ক্রিকেট একটু ব্যাটিংবান্ধব। তাই আমার মনে হয়, বোলারদের কিছু পাওয়াটা ভালো বিষয়। তবে ব্যাটিংয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাপারটা চ্যালেঞ্জিং।
দেশ থেকে অনেক সমর্থন পেয়েছি। সাবেকরা সমর্থন জানিয়েছেন, যেটা দল হিসেবে আমাদের জন্য দারুণ ব্যাপার। শৈশবে যাঁরা আমাদের প্রেরণা ছিলেন, তাঁদের এখন গর্বিত করার সুযোগটা পাচ্ছি। আমার মনে হয় না দলকে এ অবস্থানে আমি একাই তুলে এনেছি। এটা দলীয় প্রচেষ্টার ফসল। কয়েক বছরের দলীয় এ অভিযাত্রায় আমরা শেষ পর্যন্ত প্রথম ফাইনালের দেখা পেলাম।
২০১৫ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষের ম্যাচটি। ক্রিকেটের সমর্থক হিসেবে তখন সেটা ছিল আমার জন্য সবচেয়ে হৃদয় ভাঙার ম্যাচ। এটা ভালোভাবেই মনে থাকবে।
ফাইনালে উঠে আমরা সবাই খুব খুশি ছিলাম। সবারই এমন হয়। তবে ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে এ ভাবনা উঠেছে, এখনো একটি ধাপ বাকি আছে। এটা গোটা দলেরই ভাবনা। ক্রীড়াবিদেরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা পছন্দ করে এবং কেউ হারতে পছন্দ করে না, ফাইনালে তো নয়ই। তাই আমার মনে হয় না খেলোয়াড়েরা এতটুকুতেই সন্তুষ্ট হয়েছে। আগামীকালের (আজ) ম্যাচটি জিততে সবাই ভীষণ ক্ষুধার্ত হয়েই আছে।
হ্যাঁ, কিছু সমস্যা তো হয়েছেই। আমার মনে হয় অন্যান্য দলকেও ভুগতে হয়েছে। আমরা এসব নিয়ে মজাও করেছি। এসব তো এই টুর্নামেন্টেরই অংশ। এগুলো সামলেই চলতে হয়। এসব নিয়ে বিভিন্ন বাহানা তুলে পরিস্থিতি আরও জটিল করার কিছু নেই। হ্যাঁ, গতকালের (পরশু) দিনটি লম্বা ছিল। তবে দরকার হলে তো এসব সামলেই চলতে হবে। এর মধ্যেই নিজেকে বিশ্রাম দিয়ে পরদিন সকালে চনমনে মেজাজে ওঠাটা গুরুত্বপূর্ণ।
আজ (কাল) বিকেলে অনুশীলন ছিল। তবে সেটা ঐচ্ছিক। কেউ হয়তো মাঠটি দেখতে চাইতে পারে তাই। সুইমিং পুল ও হোটেলেও সময় কাটানোর সুযোগ ছিল। আমার মনে হয় প্রস্তুতির ব্যাপারটি মানসিক। এখন তো অনেক ক্রিকেট হয়, তাই ব্যাক টু ব্যাক ম্যাচ কারও কাছে নতুন না। তবে এটা গুরুত্বপূর্ণ যে আগামীকাল (আজ) মানসিকভাবে চাঙা থাকতে হবে।
এখনো তেমন মনে হচ্ছে না। তবে আগামীকাল (আজ) ঘুম থেকে ওঠার পর আবেগ ছুঁয়ে যেতে পারে। আমরা দল হিসেবে এভাবে ভেবেছি, আজ (কাল) বিশ্রামের দিন, তাই ঘুমটা যেন ঠিকমতো হয়। বিশ্রামও নিতে হবে। এরপর আগামীকাল (আজ) নিজেদের পুরোটা দিয়ে কী হয়, সেটাই দেখার অপেক্ষা।
এটা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। কোহলি বড় মাপের খেলোয়াড়। আমরা সবাই তা জানি। তাদের ব্যাটিং লাইনআপে আরও বড় মাপের খেলোয়াড়েরা আছেন। আর ক্রিকেট ম্যাচে উত্থান–পতন থাকবেই। কেউ সব সময় ভালো করে না, বিশেষ করে ব্যাটসম্যানরা। আমরা শুধু আমাদের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিয়েই ভাবছি।
হ্যাঁ, দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের জন্য এসএ২০ দারুণ একটা ব্যাপার। ভারতীয় ক্রিকেটে আইপিএল কী করেছে, সেটা আমরা দেখেছি। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটেও এসএ২০ একই ভাবধারায় এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য লিগেও দক্ষিণ আফ্রিকানদের আনাগোনা বেড়েছে। তাই এগিয়ে যাওয়ার পথে এসএ২০ লিগের বড় ভূমিকা রাখবে, এটা ভেবে নেওয়াই স্বাভাবিক। তবে মাত্র দুই বছরে এরই মধ্যে এটি বড় ভূমিকা রেখেছে।