অ্যাশেজে লড়াইটা শুধু ব্যাটে-বলে নয়, মুখেও তো হয় বেশ জোরালোই
অ্যাশেজে লড়াইটা শুধু ব্যাটে-বলে নয়, মুখেও তো হয় বেশ জোরালোই

অস্ট্রেলিয়ানদের সঙ্গে ‘বন্ধুত্বে’ আগ্রহী নন অ্যান্ডারসন

২০০৫ সালের অ্যাশেজে একটি টেস্টই খেলেছিলেন পল কলিংউড। ওভালে শেষ ম্যাচে ২ ইনিংস মিলিয়ে করেছিলেন ১৭ রান, বোলিংয়েও উইকেট পাননি কোনো। ইংল্যান্ডের স্মরণীয় অ্যাশেজ জয়ের পর ব্রিটিশ রাজপরিবারের সম্মানসূচক এমবিই খেতাব পেয়েছিলেন দলটির সব সদস্য। কলিংউডও সে সম্মান পেয়েছিলেন। তেমন কিছু না করেও কলিংউডের ওই এমবিই পাওয়া নিয়ে আজীবনই তাঁকে খোঁচা দিয়ে গেছেন শেন ওয়ার্ন।

অ্যাশেজে লড়াইটা শুধু ব্যাটে-বলে নয়, মুখেও তো হয় বেশ জোরালোই! জেমস অ্যান্ডারসন এবার বললেন, অস্ট্রেলিয়ানদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে তেমন আগ্রহ পান না তিনি। প্রতিপক্ষকে ক্রিকেটের বাইরে যতটা কম জানেন, ততই নাকি তাঁর জন্য ভালো। অ্যান্ডারসনের এই কথার রেশ কত দূর ছড়ায়, সেটিই এখন দেখার বিষয়। তবে এ ইংলিশ পেসারই বলছেন, এবারের অ্যাশেজটি হতে পারে ‘সবচেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ’!

এমনিতে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ক্রিকেটের কারণে ক্রিকেটারদের মধ্যে দূরত্ব কমে আসছে। লম্বা সময় ধরে সীমিত ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেই দূরে থাকা অ্যান্ডারসনের কাছে অবশ্য ব্যাপারটি আলাদা। দ্য টেলিগ্রাফকে দেওয়া এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে ক্রিকেটের বাইরে প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়ে ইতিহাসের সফলতম পেসার অ্যান্ডারসন বলেছেন, ‘জানি না কোনো পার্থক্য গড়ে কি না। তবে তাদের ক্রিকেটের বাইরে না জানাটাই আমার ভালো লাগে। হ্যাঁ (আমি তাদের বন্ধু হতে চাই না)। তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবেই দেখতে চাই, লড়াইয়ে নামতে চাই।’

লম্বা সময় ধরে সীমিত ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে অ্যান্ডারসন

তবে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ক্রিকেট লিগগুলোর প্রভাব অ্যাশেজের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমিয়ে দিতে পারে, অ্যান্ডারসনের মনে হচ্ছে এমন, ‘এখনো হয়তো হয়নি, তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে যত ক্রিকেট হচ্ছে, নানা জাতীয়তার ক্রিকেটাররা একসঙ্গে খেলছে, হয়তো অ্যাশেজের সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যাপারটি একটু কমিয়ে দেবে। এখনই হবে বলে মনে হয় না। তবে ভবিষ্যতে হবে।’

ইংল্যান্ডের প্রধান কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম যখন নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়ক ছিলেন, তখন নাকি তিনি প্রতিপক্ষকে স্লেজিং করতে না করতেন। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্সও ঠিক কথার লড়াইয়ে তেমন ‘আগ্রহী’ নন। সব মিলিয়ে ব্যতিক্রমী এক অ্যাশেজ হতে পারে বলেও ধারণা অ্যান্ডারসনের, ‘সবচেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ অ্যাশেজ? হতে পারে। তবে অ্যাশেজে কিছু না কিছু বেরিয়ে আসে—খেলোয়াড়দের মধ্যে দ্বৈরথের মতো। ২০১৯ সালে (জফরা) আর্চারের সঙ্গে (স্টিভেন) স্মিথের যেমন হয়েছিল। অমন কিছু। তবে নিজেদের দিকেই মনোযোগ আমাদের—আমরা মাঠে কীভাবে বোলিং করতে চাই, ফিল্ডিং সেট করতে চাই। প্রতিপক্ষকে এসব হিসাবের বাইরে রাখতে চাই তাই। আর স্লেজিংয়ের ব্যাপারে—এমন না যে বাজ (ম্যাককালাম) আমাদের করতে বারণ বলেছে, তবে আমার মনে হয় না এ দলটি (এমন করবে)।’

তাতে অবশ্য অ্যাশেজের রোমাঞ্চ এতটুকু কমবে না বলেই মনে করেন ক্যারিয়ারের দশম অ্যাশেজ সিরিজ খেলতে চলা অ্যান্ডারসন, ‘আমার মনে হয়, স্লেজিং ছাড়াই আপনি সেই নাটক, রোমাঞ্চ পাবেন। অ্যাশেজের ইতিহাসে এমন অনেক ঘটনা আছে—মুখে কিছু না বলেই লড়াই হয়েছে ব্যাটসম্যান ও বোলারদের মধ্যে, যাতে লোকে আনন্দও পেয়েছে।’

অ্যান্ডারসন ভাবছেন নিজেদের নিয়েই

ইংল্যান্ডের নতুন ধারার টেস্ট ক্রিকেটেরও মূলনীতি আনন্দ দেওয়াই। স্টোকসের অধীনে ১৩ টেস্টের ১১টি জেতা ইংল্যান্ডের কেমন চ্যালেঞ্জ অস্ট্রেলিয়া নেবে, সেটি প্রশ্ন। তবে অ্যান্ডারসন বোঝাতে চাইলেন, তাঁরা প্রস্তুত, ‘তারা কীভাবে খেলবে এ ব্যাপারে আগে থেকে বলা কঠিন। অবশ্যই তারা দেখেছে গত এক বছর আমরা কীভাবে খেলেছি। যে স্টাইলের ক্রিকেট খেলেছি। আমি নিশ্চিত তারা এর প্রতি-আক্রমণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেছে। তবে আমি যখনই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলেছি, তারা আগুনের সঙ্গে আগুন দিয়েই লড়াই করেছে। আরও কঠিন জবাব দিয়েছে। আমি নিশ্চিত, তারা ব্যাটিংয়ে হয়তো তেমন তেড়েফুঁড়ে না এলেও বোলিংয়ে আসবে। আর তাদের মানসম্পন্ন ব্যাটসম্যান তো আছেই। হয়তো মাঝে মাঝে তারাও ভাববে। তবে আমরা কীভাবে এ অবস্থানে এসেছি, আমাদের সেটি মনে রাখতে হবে।’

অ্যান্ডারসন তাই ভাবছেন নিজেদের নিয়েই, ‘তারা কীভাবে নেয়, সেটি দেখাটা একটা ব্যাপার। তবে নিজেদের দিকে মনোযোগী হলেই আমরা সেরাটা খেলি। তবে আমি নিশ্চিত, বেন (স্টোকস) আরও আগ্রাসী হতে চাইবে। আমরা যা অর্জন করেছি এত দিন, তার ওপর ভিত্তি করে।’

আরেকটি অ্যাশেজ জিততে অ্যান্ডারসন তাই মুখিয়ে আছেন, ‘আমার কিছু প্রমাণের নেই। আমি শুধু জিততে চাই। মনে হয় অনেক দিন ধরে অ্যাশেজ জিতি না। আমি শুধু সম্পৃক্ত থাকতে চাই। ফিট থাকতে চাই। সাফল্যের অংশ হতে চাই। গত ১২ মাসে সাফল্য পেয়েছি, আশা করি অ্যাশেজেও পাব।’

২০১৫ সালে সবশেষ অ্যাশেজ সিরিজ জিতেছিল ইংল্যান্ড। এর পরের তিনটি সিরিজের দুটিতে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া, একটি হয়েছে ড্র। তবে অ্যাশেজ সিরিজের নিয়ম অনুযায়ী, ভস্মাধারটি আছে অস্ট্রেলিয়ার কাছেই। সে ভস্মাধারের লড়াই শুরু ১৬ জুন, এজবাস্টনে প্রথম টেস্ট দিয়ে।