দুর্দান্ত ব্যাট করছিলেন লিটন দাস
দুর্দান্ত ব্যাট করছিলেন লিটন দাস

বেরসিক বৃষ্টিতে ‘লিটন–শো’তে বিরতি

লিটন দাস একটু এগিয়ে এসেছিলেন। মোহাম্মদ শামি তা দেখে শরীর তাক করে খাটো লেংথ থেকে বল তুললেন। লিটনের পা তখন ক্রিজের বাইরে জমে গেলেও শরীরটা ঘোরানোর সঙ্গে ব্যাটটাও ঘোরালেন। যেন সবুজ ক্যানভাসে কোনো চিত্রকরের তুলির আঁচড়! বলটা ডিপ স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে ভাসতে ভাসতে ছক্কা এবং ২১ বলে ফিফটি!

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আজ সুপার টুয়েলভে ভারতের বিপক্ষে সেই লিটনকে খুঁজে পাওয়া গেল। ক্রিজে দাঁড়িয়ে ব্যাটকে তুলি বানিয়ে যিনি রানের ‘ছবি’ আঁকেন। সেটি কি নিজের পুরোনো জায়গা ওপেনিংয়ে ফেরার জন্য? এই প্রশ্নের উত্তর শুধু লিটনই দিতে পারেন, দর্শকদের কাজ তো তাঁর ব্যাটিং উপভোগ করা। অ্যাডিলেড ওভালে আজ ভারতের ৬ উইকেটে ১৮৬ রান তাড়া করতে নেমে তেমন উপভোগ্য ব্যাটিং-ই করছিলেন লিটন। বেরসিক বৃষ্টি এসে ‘ছবি’টা ভিজিয়ে দিল! তার আগে ৩ ছক্কা ও ৭ চারে ২৬ বলে ৫৯ রানে অপরাজিত ছিলেন লিটন।

মাঠের চারপাশেই দারুণ কিছু স্ট্রোক খেলেন লিটন

বৃষ্টি নামার আগে ৭ ওভারে ৬৬ রান তুলে ফেলেছিল বাংলাদেশ। ডি/এল নিয়মে ১৭ রান এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। অর্থাৎ, ম্যাচ পরিত্যক্ত হলে জিতবে বাংলাদেশই। দলকে এই সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছেন লিটনই। পাওয়ার প্লে-তে (৬ ওভার শেষে) ৬০ রান তুলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে লিটনের একার অবদানই ২৪ বলে ৫৬! নাজমুল হোসেন ১২ বলে ৪ রান নিয়ে অন্য প্রান্তে যেন দর্শকের ভূমিকায়!

লিটনের আজকের ব্যাটিংকে বাংলাদেশের ইনিংসের শুরু থেকে ব্যাখ্যা করা যায়। ভুবনেশ্বর কুমারের করা প্রথম ওভারটা দেখেশুনে খেলেছেন। পরের ওভারে অর্শদীপ সিংকে ৩ চারে বুঝিয়ে দেন, আজ দিনটা ভারতের ভালো নাও যেতে পারে। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট, স্ট্রেট ও এক্সট্রা কাভার দিয়ে তিনটি চার মারেন লিটন। জাত ওপেনাররা যেমন হয়ে থাকেন।

তৃতীয় ওভারে লিটন আরও দুর্দান্ত। ভুবেনশ্বরকে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে উড়িয়ে ছক্কা, পরের দুটি ডেলিভারিতে আরও দুই চার! একটি মিড অফের ওপর দিয়ে, আরেকটি স্লিপ ও গালির মাঝ দিয়ে নমনীয় কবজির ব্যবহারে। এই তিনটি শটের পর ধারাভাষ্যকার বলছিলেন, ‘লিটন যেন আজ শটের পসরা খুলে বসেছেন!’

লিটনের সঙ্গে উইকেটে আছেন নাজমুলও

আসলেও তাই। পঞ্চম ওভারে ভুবনেশ্বরকে স্কুপ করে যে ছক্কাটি মারলেন, সেটি অনেকটাই টেবিল চামচে আইসক্রীম তোলার মতো! এই শটটি খেলার সময় অনেকেই শুয়ে পড়েন, ভারসাম্য থাকে না। কিন্তু লিটনের স্কুপ দেখে মনে হয়েছে, ক্রিকেটে এটাই সবচেয়ে সহজ শট! এভাবে ব্যাট করে ফিফটিও তুলে নিলেন পাওয়ার প্লে-র শেষ ওভারে।

শামির প্রথম বলটি ভিভিএস লক্ষ্মণের মতো কবজির ব্যবহারে স্কয়ার লেগ দিয়ে সীমানাছাড়া করার পর দ্বিতীয় বলেই সেই ছক্কা ও ফিফটি। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এটি দ্বিতীয় দ্রুততম ফিফটি। পার্থে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৭ বলে ফিফটি করেন মার্কাস স্টয়নিস।

বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে এটি দ্বিতীয় দ্রুততম ফিফটি। ২০০৭ সালে এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০ বলে ফিফটি করেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। ক্যামেরন গ্রিন ও জনসন চার্লসের পর ভারতের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টিতে যুগ্মভাবে তৃতীয় দ্রুততম ফিফটি তুলে নিয়েছেন লিটন।

ভারতের বিপক্ষে এই সংস্করণে ২১ বলে ফিফটি আছে কুমার সাঙ্গাকারারও। এ বছর হায়দরাবাদে ১৯ বলে ফিফটি করেছিলেন গ্রিন, আর ২০১৬ সালে লডারহিলে ২০ বলে ফিফটি করেন জনসন চার্লস।