সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অদ্ভুত এক জায়গা। সেখানে ট্রেন্ড ধরতে পারলে আপনি আছেন, নইলে নিজ ‘দেশে’ থাকতে হবে পরবাসী হয়ে। এই মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশের কমিউনিটিতে দুটো ট্রেন্ড চলছে—সদ্য নির্বাচিত হওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সদ্য আফগানিস্তানের বিপক্ষে চট করে অলআউট হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়া বাংলাদেশে ট্রেন্ডিং থাকার কারণটা ভিন্ন। সেখানেও অবশ্য চট করে শব্দটার অবদান আছে। তবে তার কোনো বাস্তব প্রয়োগ নেই। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট দল দেখিয়েছে, কীভাবে চট করে কিছু করা যায়!
কাল শারজায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল মাত্র ২৩৫। জবাবে ২ উইকেটে বাংলাদেশ করে ১২০ রান। যেকোনো বিচারে ভালো শুরু বলতে হবে। তবে সেই ভালো আর পর ভালো রইল কই!
সেখান থেকে ৫৩ বলের ব্যবধানে ২৩ রানে পড়ে বাংলাদেশের শেষ ৮ উইকেট। এর মধ্যে শেষ ৭ উইকেট পড়েছে ২৫ বলের মধ্যে। ফলাফল বাংলাদেশের ৯২ রানের হার, প্রিয় সংস্করণ ওয়ানডেতেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে বড় হার। সেটাও মাত্র ২৩৫ রানের নিরীহ লক্ষ্যে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো তো এমন কিছুই চায়। ট্রল, মিম বানানোর জন্যই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এ যে দুর্দান্ত উপহার! এর পর থেকেই সেই রঙিন দুনিয়ায় জীবন যাপন করা অনেক মানুষ লিখছেন এভাবে, ‘৩ উইকেটে ১৩২ রান নিয়ে গেলাম প্রক্ষালনকক্ষে, ফিরে দেখি খেলা শেষ।’ শুধুই এটাই নয়; আছে আরও মজার মজার মিম। কেউ বলছেন, বাংলাদেশ দল আর যা–ই হোক, বিনোদন দিতে ভুল করে না।
তবে এতে কিন্তু এই দলটার কোনো দোষ নেই। বিনোদন দিতে দলটি বরাবরই ধারাবাহিক। দোষ যা দেখি, তা প্রক্ষালনকক্ষে যাওয়া ওই ব্যক্তিরই। কারণ, ব্যাটিং–ধস তো এই দলটির জন্য নতুন কিছু নয়। এই যে সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে বাংলাদেশ দুই টেস্টেই বিশাল ব্যবধানে হারল।
দুই টেস্টের ৩ ইনিংসেই তো বাংলাদেশ ১৬০ রানের বেশি করতে পারেনি। মিরপুরে প্রথম টেস্টে ১০৬, চট্টগ্রাম টেস্টের দুই ইনিংসে যথাক্রমে ১৫৯, ১৪৩। এর আগে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও তো বাংলাদেশ দুবার ১৫০ রানের নিচে অলআউট হয়েছে। তাহলে এসব আর নতুন কি! প্রক্ষালনকক্ষে না গেলেও পারতেন!
সেই ব্যক্তিও চাইলে যুক্তিও দিতে পারেন। ওসব ইনিংসে তো ধস হয়েছে শুরু থেকে। আশা নিয়ে আর প্রক্ষালনকক্ষে যেতে হয়নি। আগে থেকেই জানতাম, এই ম্যাচে বাংলাদেশে হারাদের দলে। ইনিংসজুড়ে চট করে উইকেট পড়তেই থাকবে।
টাইগারদের কাছেও আরও যুক্তি আছে। ধস শুধু কি বাংলাদেশের হয় নাকি! চট করে উইকেট পড়ে অন্য দলেরও। গতকালই বাংলাদেশের মতো চট করে অলআউট হয়ে গেছে সিঙ্গাপুর ক্রিকেট দলও।
উগান্ডার বিপক্ষে আইসিসি চ্যালেঞ্জ লিগে কাল ৮২ রানে অলআউট হয়ে গেছে সিঙ্গাপুর। ওপেনিং জুটিতে ৪৬ রান করা দলটি পরের ৩৬ রানে হারিয়েছে ১০ উইকেট, যার ৬টি নিয়েছেন মিডিয়াম পেসার দীনেশ নাকরানি। বাংলাদেশ অবশ্য কোনো মিডিয়াম পেসারের কাছে উইকেট হারায়নি। হারিয়েছে একজন রহস্য–স্পিনারের কাছে। বয়স, অভিজ্ঞতা তাঁর যতই কম হোক, সেটা বিষয় না।
ওয়ানডে স্ট্যাটাস না থাকা দলটির সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা দেওয়া কি ঠিক হলো? দোষের কি! একটা জায়গায় তো মিলই আছে। বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর দুই দলেরই তো ট্রফি নেই।