গতকাল স্যাম কারেন আর আজ বাস ডি লিডি—প্রথম দুই দিনে দুজন ‘বাপ কা বেটা’ পেয়ে গেছেন এবারের বিশ্বকাপ। উদ্বোধনী ম্যাচে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা স্যাম কারেন ১৯৮৩ ও ১৯৮৭ বিশ্বকাপে খেলা কেভিন কারেনের ছেলে। আর আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসের হয়ে খেলা বাস ডি লিডি ডাচদের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপ খেলা টিম ডি লিডির ছেলে।
একসময় বাবা বিশ্বকাপে খেলেছেন, এরপর ছেলেও নেমেছেন একই মঞ্চে, এমন কিছু বিশ্বকাপ দেখল এ নিয়ে সপ্তমবার।
দ্বিতীয় প্রজন্মের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের ঘটনা অবশ্য বেশ পুরোনো। ১৯৭৫ সালে বিশ্বকাপ শুরুর এক যুগ পরই ‘বাপ কা বেটা’র দেখা পাওয়া গিয়েছিল। ১৯৮৭ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছিলেন ডেরেক প্রিঙ্গল। ডানহাতি এ পেসার ১৯৭৫ বিশ্বকাপে পূর্ব আফ্রিকার হয়ে খেলা ডন প্রিঙ্গলের ছেলে। মজার বিষয় হচ্ছে, ডনের জন্ম ইংল্যান্ডে, কিন্তু ডেরেকের জন্ম কেনিয়ায়। ১৯৭৫ সালে বিশ্বকাপ খেলার বছরই কেনিয়ায় একটি ম্যাচ খেলে ফেরার পথে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান ডন। ইংল্যান্ডে বেড়ে ওঠা ডেরেক এক যুগ পর খেলেন বাবার জন্মভূমির হয়ে।
বাবার পর বিশ্বকাপ খেলা দ্বিতীয় ছেলে ক্রিস কেয়ার্নস। নিউজিল্যান্ডের এই অলরাউন্ডার ১৯৯৬, ১৯৯৯ ও ২০০৩ বিশ্বকাপে খেলেছিলেন। ক্রিসের বাবা ল্যান্স কেয়ার্নসও খেলেছিলেন তিনটি বিশ্বকাপ। যথাক্রমে ১৯৭৫, ১৯৭৯ ও ১৯৮৩ সালে।
নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটে বিশ্বকাপ খেলা বাপ–বেটা জুটি আছে আরও একটি। ১৯৯২ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন রড ল্যাথাম। নামের দ্বিতীয় অংশ পড়েই বুঝে যাওয়ার কথা তাঁর ছেলের নাম। রডের ছেলে টম ল্যাথাম ২০১৯ বিশ্বকাপের পর ২০২৩ বিশ্বকাপেও খেলছেন। এমনকি এবারের আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে কেইন উইলিয়ামসনের অনুপস্থিতিতে অধিনায়কত্বও করেছেন।
বাবার পর ছেলের বিশ্বকাপ খেলার অনুভূতিটা পরিবারের জন্য সব সময়ই বিশেষ। তবে বিশেষের চেয়ে বেশি কিছু অস্ট্রেলিয়ার মার্শ পরিবারের জন্য। অস্ট্রেলিয়ার ১৯৮৭ বিশ্বকাপজয়ী দলের ওপেনার ছিলেন জিওফ মার্শ। সেটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফি।
২৮ বছর পর যে দল অস্ট্রেলিয়াকে পঞ্চম বিশ্বকাপ ট্রফি এনে দেয়, সেই দলে ছিলেন মিচেল মার্শ, জিওফের ছেলে। বাপ–বেটা দুজনই বিশ্বকাপজয়ী। সেখানেই শেষ নয়। ২০১৯ বিশ্বকাপে যোগ হয় মার্শ পরিবারের আরেক সদস্য—শন। এবারের আসরে শন না থাকলেও মিচেল আছেন।
এক পরিবারের তিন সদস্যের বিশ্বকাপ খেলার ঘটনা অবশ্য আরও একটি আছে। যদিও মাঠে নামার অভিজ্ঞতা হয়েছে দুজনের। ১৯৮৩ ও ১৯৮৭ সালে জিম্বাবুয়ের হয়ে বিশ্বকাপ খেলেছিলেন কেভিন কারেন। এবার তাঁর ছেলে স্যাম কারেন খেলছেন ইংল্যান্ডের হয়ে। চার বছর আগে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী দলে ছিলেন কারেন পরিবারের আরেক সদস্য—টম। তবে এউইন মরগানদের হয়ে কোনো ম্যাচে একাদশে ছিলেন না টম কারেন।
এদিক থেকে ভারতের বিনি পরিবারও অবশ্য দুই প্রজন্মে বিশ্বকাপ অনুভূতি নেওয়ার আনন্দ বোধ করতে পারে। ভারতের ২০১৫ বিশ্বকাপের দলে ছিলেন স্টুয়ার্ট বিনি, যিনি ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য রজার বিনির ছেলে। রজার এখন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআইয়ের সভাপতি। আট বছর আগে স্টুয়ার্ট বিশ্বকাপে সুযোগ পেলেও একাদশে জায়গা পাননি। এখন অবশ্য বয়স চল্লিশের কাছাকাছি হওয়ায় জাতীয় দলের রাডারেই নেই।
দুই প্রজন্মের বিশ্বকাপে সর্বশেষ সংযোজন হয়েছে বাস ডি লিডির মাধ্যমে। নেদারল্যান্ডসের হয়ে ১৯৯৬, ১৯৯৯ এবং ২০০৭ বিশ্বকাপে খেলেছিলেন টিম ডি লিডি। ২০০৩ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ৩৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন ম্যাচসেরাও। যে চার উইকেটের মধ্যে একটি ছিল শচীন টেন্ডুলকারের, আরেকটি ভারতের বর্তমান কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের। এবার সেই ভারতেই বিশ্বকাপ অভিষেক হয়েছে টিমের ছেলে বাসের, পাকিস্তানের বিপক্ষে হায়দরাবাদে। এই ম্যাচে বাস ডি লিডি নিয়েছেন ৬২ রানে ৪ উইকেট।