এ রকম বিষ চাপের মুহূর্তে আগেও কয়েকবার পড়তে হয়েছিল অর্শদীপ সিংকে। বড় মঞ্চের প্রসঙ্গ তুললে ২০২২ এশিয়া কাপের সুপার ফোর পর্বে ভারতের ম্যাচ দুটির শেষ ওভারের দৃশ্যগুলো মনে করিয়ে দেওয়াই যায়।
এক দিনের ব্যবধানে ‘ডেজা ভ্যু’ এসেছিল অর্শদীপের জীবনে। দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে জিততে হলে পাকিস্তান–শ্রীলঙ্কা দুই দলকেই ৬ বলে করতে হতো ৭ রান। দুই ম্যাচেই শেষ ওভারে অর্শদীপের হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। দুইবারই ওই রান ডিফেন্ড করতে ব্যর্থ হন বাঁহাতি পেসার। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা ম্যাচ জিতে নেয় ১ বল বাকি থাকতে।
বেঙ্গালুরুতে আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ টি–টোয়েন্টটিতে আবারও সেই কঠিন পরিস্থিতির সামনে দাঁড়াতে হয়েছে অর্শদীপকে। শুধু ডিফেন্ড করার মতো কিছু রান বেশি ছিল। জেতার জন্য শেষ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ১০। আগের ৩ ওভারে ৩৭ রান দিলেও অর্শদীপের ওপরই আস্থা রাখেন এই সিরিজে ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। তবে পাঞ্জাবের এই পেসার আগের ব্যর্থতাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার কী দারুণভাবেই না আস্থার প্রতিদান দিলেন।
অর্শদীপের প্রথম তিন বলে কোনো রানই নিতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড। তৃতীয় বলে ওয়েড তুলে মারতে গিয়ে আউটও হয়েছেন। শেষ তিন বলে তিনটি সিঙ্গেল নিতে পারেন নাথান এলিস আর জেসন বেহরেনডর্ফ। সব মিলিয়ে ওভারের চারটিই দিয়েছেন ইয়র্কার। তাতেই ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে রোমাঞ্চকর ম্যাচটা ৬ রানে জিতে নিয়েছে ভারত। আগেই সিরিজ নিশ্চিত করা ভারত এ জয়ে ব্যবধানটা ৪–১ করে ফেলেছে।
পাঁচ ম্যাচ টি–টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম তিনটিতে রান উৎসব দেখা গেছে। চতুর্থ ম্যাচেও ভারতের করা ১৭৪ রান একেবারে মন্দ ছিল না। সেই তুলনায় আজ রান একটু কমই হয়েছে। ভারতের তোলা আজকের ১৬০ রান যে এই সিরিজে আগে ব্যাট করা দলের সর্বনিম্ন।
এর একটা জুতসই কারণও আছে। এই সিরিজের পাঁচ ভেন্যুর মধ্যে শুধু বেঙ্গালুরুতেই সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপ হয়েছে। বিশ্বকাপের শেষ দিকে বেঙ্গালুরুতে পাঁচটি ম্যাচ হওয়ায় মাঠকর্মীরা পিচগুলো পরিচর্যা করার জন্য খুব বেশি সময় পাননি। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে আজ খেলাও হয়েছে বিশ্বকাপে ব্যবহৃত একটি পিচে। বরাবর রানপ্রসবা হিসেবে পরিচিত চিন্নাস্বামীর ২২ গজ তাই আজ কিছুটা মন্থর ছিল।
এমন চ্যালেঞ্জিং পিচে ৫৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ভারত। তবে পঞ্চম উইকেট জিতেশ শর্মা সঙ্গে ৪২ রানের জুটি গড়ে বিপর্যয় সামাল দেন শ্রেয়াস আইয়ার। এরপর অক্ষর প্যাটেলকে নিয়ে গড়েন ম্যাচেরই সবচেয়ে বড় ৪৬ রানের জুটি। এতে ভারত পেয়ে যায় লড়াই করার মতো সংগ্রহ। দায়িত্বশীল ইনিংস খেলার পথে আইয়ার তুলে নেন টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের অষ্টম অর্ধশত। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দুটি করে উইকেট নেন বেন ডরশুইস ও জেসন বেহরেনডর্ফ।
লক্ষ্য তাড়ায় তৃতীয় ওভারে জশ ফিলিপে আউট হলেও বিশ্বকাপ ফাইনালের নায়ক ট্রাভিস হেড স্বভাবসুলভ ব্যাটিং করতে থাকেন। তবে নিজের প্রথম দুই ওভারে হেড ও অ্যারন হার্ডিকে ফিরিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে চাপে ফেলে দেন লেগ স্পিনার রবি বিষ্ণই।
এরপর টিম ডেভিডকে নিয়ে বেন ম্যাকডারমট ৪৭ রানের জুটি গড়লে অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচে ফেরান। ১৪তম ওভারে অক্ষর প্যাটেল এই জুটি ভাঙেন। ব্যক্তিগত ১৭ রানে আউট হন ডেভিড। কিছুক্ষণ পর ম্যাকডারমটকে (৫৪) ফেরান অর্শদীপ।
১৭তম ওভারে টানা দুই বলে মুকেশ কুমার ম্যাথু শট আর ডরশুইসের উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। কিন্তু অধিনায়ক ওয়েড আবেশ খানের ওভারে টানা তিন বাউন্ডারি মেরে ম্যাচের পাল্লা আবারও অস্ট্রেলিয়ার দিকে হেলে দেন।
তবে ফিনিশারের কাজটা করতে পারেননি। শেষ ২ ওভারে জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল ১৭ রান। ১৯তম ওভারে মুকেশ দেন ৭। শেষ ওভারে অর্শদীপের জন্য রেখে দেন ১০। চারটি দুর্দান্ত ইয়র্কারে সেটাকেই যথেষ্ট বানিয়ে ফেলেন অর্শদীপ।
ভারত : ২০ ওভারে ১৬০/৮
(আইয়ার ৫৩, অক্ষর ৩১, জিতেশ ২৪; ডরশুইস ২/৩০, বেহরেনডর্ফ ২/৩৮, হার্ডি ১/২১)
অস্ট্রেলিয়া : ২০ ওভারে ১৫৪/৮
(ম্যাকডারমট ৫৪, হেড ২৮, ওয়েড ২২; মুকেশ ৩/৩২, বিষ্ণই ২/২৯, আর্শদীপ ২/৪০)
ফল : ভারত ৬ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : অক্ষর প্যাটেল।
ম্যান অব দ্য সিরিজ : রবি বিষ্ণই।
সিরিজ : ভারত ৪–১ ব্যবধানে জয়ী।