৮৪ বলে ১৩১ রান করেছেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা
৮৪ বলে ১৩১ রান করেছেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা

রোহিতের রেকর্ড সেঞ্চুরিতে চুরমার আফগানিস্তান

রোহিত ‘রেকর্ড’ শর্মা!

ভারত অধিনায়কের নামের মাঝে ‘রেকর্ড’ শব্দটা জুড়ে দিলে কারও আপত্তি করার কথা নয়। ব্যাটিংয়ে, বিশেষ করে রোহিতের ওয়ানডে ক্যারিয়ারটা যে পুরোপুরিই রেকর্ডময়। সেই রোহিত আজ দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে নিজের করে নিলেন আরও একগুচ্ছ রেকর্ড। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ছক্কা, বিশ্বকাপে ভারতের দ্রুততম সেঞ্চুরি—সেই রেকর্ডগুলোর মহিমাও তো কত বিশাল!

ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ইনিংসের মালিকের রেকর্ডের দিনে স্রেফ উড়ে গেছে প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। প্রথমে ব্যাটিং নিয়ে ৮ উইকেটে ২৭২ রান করেছিল আফগানরা। রোহিত-ঝড়ে রানটা ১৫ ওভার ও ৮ উইকেট হাতে রেখে টপকে গিয়ে এবারের বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় জয় পেয়েছে স্বাগতিক ভারত।

২০১৯ বিশ্বকাপে পাঁচটি সেঞ্চুরি করে এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন রোহিত। সেই রোহিত এবারের বিশ্বকাপটা শুরু করেছিলেন শূন্য রানে আউট হয়ে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চেন্নাইয়ের সেই ম্যাচের ব্যর্থতার ঝালটা যেন আফগান বোলারদের ওপর ঝাড়লেন রোহিত। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শূন্যে ফেরা আরেক ওপেনার ঈশান কিষানকে নিয়ে আজ ১৮.৪ ওভারেই ১৫৬ রান এনে দেন রোহিত। ৪৭ বলে ৪৭ রান করেও সেই জুটিতে যেন ‘নীরব’ দর্শক কিষান। রশিদ খানের বলে কাভারে ইব্রাহিম জাদরানের সহজ ক্যাচের শিকার হয়ে কিষান ফেরার পর উইকেটে যাওয়া কোহলিও ‘দর্শক’ ছিলেন রোহিতের ইনিংসের।

পাঁচটি ছক্কা মেরেছেন রোহিত শর্মা

কোহলি উইকেটে যাওয়ার আগেই অবশ্য রেকর্ড করে ফেলেছেন রোহিত। অষ্টম ওভারে নাভিন-উল-হককে নিজের প্রিয় পুল শটে ছক্কা মেরেই ক্রিস গেইলকে ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ছক্কার মালিক হয়ে যান রোহিত। তিন সংস্করণের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেটি ছিল ভারত অধিনায়কের ৫৫৪তম ছক্কা। গেইলের চেয়ে ৭৮ ইনিংস কম খেলেই রেকর্ড গড়া রোহিত পরে মেরেছেন আরও ২টি ছক্কা।

রোহিত অন্য দুটি রেকর্ড ভেঙেছেন এক শটেই। ইনিংসের ১৮তম ওভারের প্রথম বলে মোহাম্মদ নবীকে চার মেরে ৯৯–এ পৌঁছানো রোহিত পরের বলেই অন সাইডে বল পাঠিয়ে ১ রান নিয়েই দুই ভারতীয় কিংবদন্তি কপিল দেব ও শচীন টেন্ডুলকারের বিশ্বকাপ রেকর্ড কেড়ে নেন। ১৯৮৩ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মহাকাব্যিক ১৭৫ রানের ইনিংস খেলা পথে ৭২ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন কপিল। ৩০ বলে ফিফটি পাওয়া রোহিত আজ তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন ৬৩ বলে।

বিশ্বকাপে এটি রোহিতের সপ্তম সেঞ্চুরি। মাত্র তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলা রোহিত ১৯ ম্যাচ আর ১৯ ইনিংস খেলেই টেন্ডুলকারের ছয় সেঞ্চুরির রেকর্ডকে পেছনে ফেলে দিলেন। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক টেন্ডুলকার ছয় বিশ্বকাপে ৪৫টি ম্যাচ খেলেছেন।

টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ফিফটি পেয়েছেন বিরাট কোহলি

৮৪ বলে ১৬ চার ও ৫ ছক্কায় ১৩১ রান করার পথে বিশ্বকাপে ১ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়ে আরেকটি রেকর্ডও ছুঁয়েছেন রোহিত। বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম ১৯ ইনিংস খেলে ১ হাজার রান করার রেকর্ডটা এ বিশ্বকাপেই করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার। সেই রেকর্ডে ভাগ বসালেন রোহিত।

রোহিত যেভাবে এগোচ্ছিলেন, তাতে মাত্র ২৭৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমেই ডাবল সেঞ্চুরি পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছিল। তবে সেই সম্ভাবনার অপমৃত্যু ২৬তম ওভারে। রশিদকে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান রোহিত। ভারতের স্কোর তখন ২০৫/২। বাকি ৬৮ রান শ্রেয়াস আইয়ারকে নিয়ে ধীরেসুস্থে তুলেই বিশ্বকাপে ভারতকে টানা দ্বিতীয় জয় এনে দেন কোহলি। কোহলি ৫৬ বলে ৫৫ ও আইয়ার ২৩ বলে ২৩ রান করে অপরাজিত ছিলেন।

এর আগে আফগানিস্তানের ইনিংসটা যে ২৭০ ছাড়িয়েছে, তাতে বড় অবদান হাশমতউল্লাহ শহীদি ও আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের। ১৪তম ওভারে তাঁরা যখন জুটি বাঁধলেন, আফগানরা ৬৩ রান তুলতে হারিয়ে ফেলেছে ৩ উইকেট। ৩৫তম ওভারে রানটাকে ১৮৪-তে নিয়ে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে চতুর্থ উইকেটে ১২১ রান যোগ করেন দুজন।

ফিফটির পর আফগানিস্তান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদি (বাঁয়ে), সঙ্গী আজমতউল্লাহ ওমরজাইও পেয়েছেন ফিফটি

পান্ডিয়ার করা স্লো বলে বিভ্রান্ত হয়ে বোল্ড হওয়ার আগে ৬৯ বলে ৬২ রান করেন ওমরজাই। তাঁর বিদায়ের পর মন্থর হয়ে পড়ে আফগানদের রান তোলার গতি। ৩৫ থেকে ৪৩তম ওভারের মধ্যে মাত্র ৪১ রান তুলতে পারেন শহীদি ও নবী।
৩০০ রানের স্বপ্নটা হাতছাড়া হতে যাচ্ছে দেখেই কিনা রানের গতি বাড়াতে ৪৩তম ওভারে কুলদীপ যাদবকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়েছিলেন শহীদি। বলের লাইন মিস করে শুধু এলবিডব্লুই হয়েছেন আফগান অধিনায়ক। তবে যাওয়ার আগে করেন ৮৮ বলে ৮০ রান।

অধিনায়কের বিদায়ের পর শেষ ৪৪ বলে ৪৮ রান যোগ করলেও আরও ৩ উইকেট হারায় আফগানিস্তান। ওই ৩টি উইকেটই নিয়েছেন যশপ্রীত বুমরা। ৪৫তম ওভারে নজিবউল্লাহ জাদরান ও নবীকে ফেরানো বুমরা প্রথম স্পেলে নিয়েছিলেন ইব্রাহিম জাদরানের উইকেটটিও। ১০ ওভারে ৩৯ রানে ৪ উইকেট নেওয়া বুমরার পর ভারতের দ্বিতীয় সেরা বোলার হার্দিক পান্ডিয়া (২/৪৩)। অফ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বদলে একাদশে ঢোকা আরেক পেসার শার্দূল ঠাকুর নিয়েছেন ১ উইকেট।

আগের ম্যাচে বাংলাদেশের স্পিনারদের ঘূর্ণিতে জেরবার হওয়া আফগান ব্যাটসম্যানরা আজ ভারতীয় স্পিনারদের ভালোই সামলেছেন। দুই স্পিনার কুলদীপ ও রবীন্দ্র জাদেজার ১৮ ওভারে ৭৮ রান তুললেও তারা উইকেট হারায় মাত্র ১টি। তবে তাতেও ৮ উইকেটে ২৭২ রানের বেশি করতে পারেনি আফগানিস্তান। আর সেই স্কোরটা রোহিত শর্মার ঝোড়ো সেঞ্চুরিতে এক ফুৎকারেই পেরিয়ে গেছে ভারত।