চন্ডিকা হাথুরুসিংহের হাতে আবারও বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি। কিন্তু প্রথমবার যেভাবে তিনি চুক্তির মাঝপথে দায়িত্ব ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, তাতে তাঁকে ফিরিয়ে আনাটা ভালো হলো নাকি খারাপ, সে প্রশ্ন ওঠেই। এ নিয়েই কথা বলেছেন সাবেক ক্রিকেটার, নির্বাচক ও কোচরা—
গাজী আশরাফ হোসেন
একজন প্রধান কোচ যে দল হাতে পাবেন, সেই দল নিয়েই কাজ করবেন। কিন্তু চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এর আগে বাংলাদেশের কোচ থাকার সময় যাঁরা সেরা ক্রিকেটার ছিলেন, তাঁরা এখন বিদায়ের পথে। নতুন দল নিয়ে তিনি কতটুকু সাফল্য এনে দিতে পারবেন, সে প্রশ্ন থাকেই। আমার দৃষ্টিতে, যে কোচই আসুক, কাজটা কঠিন। এখানে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, দেশের ক্রিকেটটা ঠিকভাবে চলছে কি না। সেখানে সমস্যা থাকলে কোচের জন্যও কঠিন হবে সাফল্য পাওয়া।
তাঁকে তাই বাংলাদেশের ক্রিকেটের এখনকার অবস্থাটা ভালো করে বুঝতে হবে। অন্যদিকে বিসিবির জন্য চ্যালেঞ্জ হবে হাথুরুর কাছ থেকে সর্বোচ্চটা আদায় করা। কারণ, এর আগে আমরা দেখেছি, তিনি অন্যের কথায় চলার লোক নন। তাঁকে কোচ হিসেবে এনে বিসিবি হয়তো আপাতত স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে যে তারা একজন কোচ পেয়েছে, কিন্তু আমরা তো জানি, বিতর্কিতভাবে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব ছেড়ে চলে যাওয়ার পর হাথুরুসিংহে কোথাও ভালো কিছু করতে পারেননি। এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশকে তিনি যেখানে রেখে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে আরও ভালো জায়গায় নিতে পারেন কি না।
গাজী আশরাফ হোসেন, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক বিসিবি পরিচালক
ফারুক আহমেদ
আমার ধারণা, অনেক বড় কোনো প্রত্যাশা থেকেই চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে আবার জাতীয় দলের কোচ করে ফিরিয়ে আনছে বিসিবি। তবে বোর্ড সম্ভবত ভুলে গেছে, তিনি আমাদের কীভাবে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। এ রকম কাউকে ফিরিয়ে আনা হলে তাঁরা কিন্তু কখনো ভালো কিছু দিতে পারেন না। কারণ, অবচেতনে দুই পক্ষের মধ্যেই আগের ঘটনাগুলো থেকে যায়।
দল যখন একটু খারাপ করবে, তখন বিসিবিরই মনে হবে, কেন তাঁকে আবার ফিরিয়ে আনলাম! আবার কোচও বড় গলায় কিছু বলতে পারবেন না। কারণ, যেভাবে তিনি চলে গিয়েছিলেন, সেটা তাঁরও অবচেতন মনে থেকে যাবে। এমন যদি হতো হাথুরুসিংহের যাওয়াটা স্বাভাবিক ছিল, কোনো বিতর্ক ছিল না; তাহলে তাঁকে আবার ফেরানো নিয়ে কোনো কথা হতো না।
কিন্তু যেভাবে চলে গিয়েছিলেন, তাঁকে আবার ফেরানো কতটা কাজে দেবে, আমি সন্দিহান। তা ছাড়া ওভাবে চলে যাওয়ার পরও বিসিবি যে আবার তাঁর কাছে ফিরে গেছে, এতে হাথুরুসিংহের জবাবদিহির জায়গাটাও কম থাকবে। হাথুরুই হয়তো এখন উল্টো আমাদের শাসন করবেন। আমি মনে করি, মিলেমিশে কাজ করাটা খুব জরুরি। কিন্তু হাথুরুসিংহে যে মানসিকতার, তিনি সব সময় একাই সবকিছু করতে চান। তবু আশা, এবার হয়তো তিনি সবাইকে নিয়ে কাজ করবেন।
ফারুক আহমেদ, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক প্রধান নির্বাচক
নাজমূল আবেদীন
এটা সত্যি যে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের যুগে এখন ভালো কোচ পাওয়া খুব একটা সহজ নয়। যারা ভালো, একনামে জানি-চিনি বা যাদের চাই—তারা হয়তো খুব ব্যয়বহুল হবেন বা রাজিই হবেন না দীর্ঘমেয়াদে কাজ করতে। বিসিবির হাতে হয়তো বেছে নেওয়ার তেমন সুযোগ ছিল না।
সেদিক দিয়ে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে সহজ পছন্দ। কারণ, তিনি আমাদের এখানে কাজ করে গেছেন, তাঁর সময়ে আমরা কিছু সাফল্যও পেয়েছি। তবে একটা কথা প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে দেখি, হাথুরুসিংহে নাকি ‘হার্ড টাস্ক মাস্টার’। তাহলে এ কারণেই কি তাঁকে নেওয়া হচ্ছে?
আমার মনে হয় না এটি যোগ্যতার মাপকাঠি হতে পারে। এটা একটা জাতীয় দল, এখানে সবাই পরিণত। তবে হাথুরুসিংহে অভিজ্ঞ, উপমহাদেশের ক্রিকেট সম্পর্কে তাঁর ধারণা আছে। বাংলাদেশ সম্পর্কেও পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় এখন নিশ্চয়ই তিনি কোচ হিসেবে আরও পরিণত হবেন। নতুন কিছুই তাঁর কাছ থেকে আশা করব। আমি নিশ্চিত, চলে যাওয়ার পরও হাথুরুসিংহে আমাদের ক্রিকেট অনুসরণ করেছেন। তিনি এসেই এমন একটা জায়গা থেকে শুরু করতে পারবেন, অন্যদের যেখানে সময় লাগত। তবে আমাদের প্রত্যাশা কিন্তু আগের মতো নেই। এটা অনেক বেশি এখন। সেটির সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে নেবেন, সেটিই চ্যালেঞ্জ হবে হাথুরুসিংহের জন্য।
নাজমূল আবেদীন, ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক