বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের হারের পর থেকেই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল, রাহুল দ্রাবিড় আর রোহিত শর্মাদের কোচ হিসেবে থাকতে রাজি নন। জাতীয় দলের দায়িত্ব ছেড়ে আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের পরামর্শক হবেন দ্রাবিড়—এমন গুঞ্জনও শোনা গেছে। রাজস্থান রয়্যালস নাকি তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চলমান টি–টোয়েন্টি সিরিজে ভিভিএস লক্ষ্ণণকে কোচের দায়িত্বে দেখে অনেকে ধরেই নিয়েছেন দ্রাবিড় হয়তো আর ভারতের ড্রেসিংরুমে ফিরবেন না।
প্রধান কোচ ঘিরে যখন শুরু হয়েছে রহস্য, তখন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) নিজেদের কাজ ঠিকই এগিয়ে রেখেছে। চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে দ্রাবিড়কে থেকে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিসিসিআই। শুধু তাই নয়, আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য দ্রাবিড়–লক্ষ্ণণ দুজনেরই সাপোর্ট স্টাফের ভিসা করানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইএসপিএনক্রিকইনফো।
২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর রবি শাস্ত্রী সরে দাঁড়ালে ওই বছরের নভেম্বরে ভারতীয় দলের প্রধান কোচ হন দ্রাবিড়। বিসিসিআইয়ের সঙ্গে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ ছিল ৫০ বছর বয়সী এই কিংবদন্তির। তাঁর অধীনে ভারত বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালে হারলেও জিতেছে এশিয়া কাপ। তিন সংস্করণেই দলকে তিনি আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষেও তুলেছেন।
ক্রিকইনফো জানতে পেরেছে যে দ্রাবিড়ের ভবিষ্যৎ ঠিক করতে গত সপ্তাহে তাঁর সঙ্গে আলোচনা সেরেছেন বিসিসিআইয়ের শীর্ষ কর্তারা। এ সময় তাঁকে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গত দুই বছরে তিনি ও তাঁর সহকারীরা দলটাকে যেভাবে গুছিয়ে তুলেছেন, তাতে বোর্ড কর্তারা বেশ সন্তুষ্ট। তাঁদের চাওয়া দ্রাবিড় দায়িত্ব চালিয়ে যান। দ্রাবিড় যদি রোহিত–কোহলিদের সঙ্গে থেকে যেতে রাজি হন, তাহলে ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠোর, বোলিং কোচ পরশ মামব্রে ও ফিল্ডিং কোচ টি দিলিপও দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন। তবে দ্রাবিড় বিসিসিআইয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন কি না, সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
শেষ পর্যন্ত যদি ইতিবাচক সাড়া দিয়ে থাকেন, তাহলে নতুন মেয়াদে দ্রাবিড়ের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট হবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকায় পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলবে ভারত। জুন–জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আছে টেস্ট সিরিজ।
র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দল হয়েও ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ ফাইনালে হেরে যাওয়ায় কষ্ট পেয়েছেন দ্রাবিড়। বৈশ্বিক শিরোপা জিততে না পারার আক্ষেপ সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি লুকাননি। ভারতের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, ‘বিশ্বকাপ নিয়ে ব্যস্ততার কারণে এ নিয়ে ভাবার সময় পাইনি। সময় পেলে ভেবে দেখব।’
তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, বিসিসিআই কর্মকর্তাদের একাংশ নাকি দলের নতুন কোচিং স্টাফ চাইছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের প্রথম পছন্দ ভিভিএস লক্ষ্ণণই। বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে (এনসিএ) দীর্ঘদিন কাটানো লক্ষ্ণণ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চলমান টি–টোয়েন্টি সিরিজ ছাড়াও বেশ কয়েকবার কোচের দায়িত্ব সামলেছেন। বিশেষ করে, যখন সাংঘর্ষিক বা কাছাকাছি দুটি সূচির বিষয় মাথায় রেখে বিসিসিআই আলাদা দুটি জাতীয় দল ঘোষণা করত, তখন একটি দলের দায়িত্বে থাকতেন দ্রাবিড়, অন্যটির লক্ষ্ণণ। গত মাসে হাংজু এশিয়ান গেমসে লক্ষ্ণণের তত্ত্বাবধানে সোনাও জিতেছে ভারত।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও দ্রাবিড়–লক্ষ্ণণকে দায়িত্ব ভাগ–বাঁটোয়ারা করে দিতে চাচ্ছে বিসিসিআই। শুরুতেই টি–টোয়েন্টি সিরিজ থাকায় লক্ষ্ণণের অধীন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে থাকা দলকেই পাঠাতে চাইছে ভারতীয় বোর্ড। আর ওয়ানডে ও টেস্ট সিরিজে রোহিত–কোহলিদের সঙ্গে পাঠাতে চাইছে দ্রাবিড়কে। তবে সবকিছু ঝুলে আছে দ্রাবিড়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর ওপর।