প্রথম ছয় ওভারে ট্রাভিস হেড আর ডেভিড ওয়ার্নারের ব্যাটিংই কি তবে ব্যবধানে গড়ে দিল!
লক্ষ্য হিসেবে ২১৩ রান অনেক বড় সংগ্রহ নয়। কিন্তু বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে রান তাড়ার চাপ আর দক্ষিণ আফ্রিকার বৈচিত্র্যময় বোলিং আক্রমণ লক্ষ্যটাকে বড় করে তুলতে কতক্ষণ!
ইডেন গার্ডেনে আজ তাই হেড আর ওয়ার্নার আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে প্রথম ছয় ওভারেই তুলে নেন ৬০ রান। কিন্তু পরের দিকে ৬০ রান তুলতে রীতিমতো ঘাম ঝরেছে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের, উঁকি দিয়েছিল হারের শঙ্কাও। তবে শুরুর পুঁজি ভালো থাকায় শেষ পর্যন্ত ৪৭.২ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩ উইকেটে হারিয়ে অষ্টমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে অস্ট্রেলিয়া। ১৯ নভেম্বর আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ভারতের মুখোমুখি হবেন প্যাট কামিন্সরা। বিশ বছর পর বিশ্বকাপের ফাইনাল আবারও দেখবে ভারত–অস্ট্রেলিয়া লড়াই।
রান তাড়ায় নামা অস্ট্রেলিয়া বিনা উইকেটে ৬০ তুললেও একপর্যায়ে ১৩৭ রানে হারিয়ে ফেলে ৫ উইকেট। কেশব মহারাজ আর তাব্রেইজ শামসিদের স্পিন ঘূর্ণিতে তাল মেলাতে না পেরে এ সময়ের মধ্যেই ফিরে যান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (১), মার্নাস লাবুশেন (১৮), হেডরা (৬২)। তবে অস্ট্রেলিয়ার হাতে ছিল থিতু হয়ে খেলার মতো প্রচুর বল। সেটি মাথায় রেখেই উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান জশ ইংলিসকে নিয়ে দলের হাল ধরেন স্টিভেন স্মিথ। দুজনের ষষ্ঠ উইকেট জুটি জমে যাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার জয় যখন মনে হচ্ছিল নাগালে, তখনই স্মিথের উচ্চাভিলাসী এক শটে আবারও বিপদ।
জেরাল্ড কোয়েৎজিকে তুলে মারতে গিয়ে বল আকাশে তুলে ডি ককের ক্যাচ হন স্মিথ। তাঁর ৬১ বলে ৩০ রান দলকে যতটা স্বস্তি দিয়েছিল, ততটাই অস্বস্তিতে ফেলে দেয় অস্বাভাবিক প্রবণতার ওই শট। তবে হার না মানা মানসিকতা আর স্নায়ুচাপ সামলে ওঠার সক্ষমতা অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচে ধরে রাখে। কোয়েৎজির ইংলিসকে তুলে নেওয়ার পর স্টার্ক–কামিন্স জুটি বেঁধে দলকে নিয়ে নিয়ে যান জয়ের কাছে। দুজনের অবিচ্ছিন্ন অষ্টম উইকেট জুটিতে ২৩ রান উঠলে অস্ট্রেলিয়া পেয়ে যায় অষ্টম ফাইনালের দেখা।
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস প্রায় একাই টেনেছেন ডেভিড মিলার। টস হেরে বল হাতে নেওয়া অস্ট্রেলিয়ান পেসাররা শুরু থেকেই পেয়েছেন বাউন্স ও সুইং। সঙ্গে গতি কাজে লাগিয়ে প্রথম ছয় ওভারের মধ্যেই বাভুমা ও ডি কককে তুলে নেন স্টার্ক ও হ্যাজলউড। তিনে নামা রেসি ফন ডার ডুসেন ও চারে নামা এইডেন মার্করামের লক্ষ্য ছিল রানের দিকে না তাকিয়ে উইকেটে টিকে থাকা। প্রথম আট ওভারে ১০ রান ওঠা দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসে প্রথম চার আসে নবম ওভারে।
তবে স্টার্ক–হ্যাজলউডের আরেকটি যৌথ–শিকারে ১২ ওভারের মধ্যে ফেরেন এ দুজনও। ২৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা তখন বড় বিপর্যয়ের শঙ্কায় ধুঁকছে। ওই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে প্রোটিয়া ইনিংস মেরামতে হাত লাগান এমন দুজন, যারা সাধারণত আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলেই অভ্যস্ত। হাইনরিখ ক্লাসেন–মিলারের পঞ্চম উইকেটজুটি দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে যায় এক শর ওপারে। এ দুজনের ৯৫ রানের জুটি থামে ট্রাভিস হেডের বলে ক্লাসেন বোল্ড হলে। ৪৮ বলে ৪৭ রান তোলার পথে ৪টি চার ও ২টি ছয় মারেন ক্লাসেন।
পরের বলে মার্কো ইয়ানসেন এলবিডব্লু হওয়ার পরে কোয়েৎজিকে নিয়ে আরেকটি জুটি গড়েন মিলার। কোয়েৎজিকে ফিরিয়ে কামিন্স ৫৩ রানের জুটিটা ভেঙে দেওয়ার পর বাকি পথটা মিলারই টেনে নেন দলকে।
৪৮তম ওভারে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ককে ছয় মেরে দক্ষিণ আফ্রিকাকে দুই শর ঘরে নিয়ে যান মিলার, নিজেও পৌঁছান তিন অঙ্কের মাইলফলকে। বিশ্বকাপের নকআউট ইতিহাসে ছয় বা এর পরে নেমে এটিই কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম শতক। তবে মিলারের একার এই লড়াই দলকে মোটামুটি অবস্থানে নিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত জয়ের জন্য সেটা যথেষ্ট হয়নি। এ নিয়ে পঞ্চমবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৯.৪ ওভারে ২১২ (মিলার ১০১, ক্লাসেন ৪৭, কোয়েৎজি ১৯; স্টার্ক ৩/৩৪, কামিন্স ৩/৫১, হ্যাজলউড ২/১২, হেড ২/২১)।
অস্ট্রেলিয়া: ৪৭.২ ওভারে ২১৫/৭ (হেড ৬২, স্মিথ ৩০, ওয়ার্নার ২৯; শামসি ২/৪২, কোয়েৎজি ২/৪৭)।
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: ট্রাভিস হেড।