বল টেম্পারিং–কাণ্ডে আলোচিত কেপটাউন টেস্টে খেলা অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের সঙ্গে তাঁর কোনো ঝামেলা নেই, এমন জানিয়েছেন ক্যামেরন ব্যানক্রফট। এর আগে এক সাক্ষাৎকারে ব্যানক্রফট বলেছিলেন, বোলাররা বল টেম্পারিংয়ের ‘কৌশল’-এর ব্যাপারে জানতেন না, এমন হতে পারে না। এরপর পাল্টাবিবৃতিও দিয়েছিলেন বোলাররা।
বোলারদের সঙ্গে ব্যানক্রফটের সম্পর্ক নিয়ে এ আলোচনা মূলত দুটি কারণে। ডেভিড ওয়ার্নার অবসরে যাওয়ার পর সম্ভাব্য টেস্ট ওপেনার হিসেবে যে কজনের নাম আলোচনায় আছে, ব্যানক্রফট তাঁদের একজন। অন্যদিকে কেপটাউন টেস্টের পেসার প্যাট কামিন্স এখন নিজেই অধিনায়ক।
২০১৮ সালে বল টেম্পারিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে স্টিভেন স্মিথ ও ওয়ার্নারের সঙ্গে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ব্যানক্রফটকেও। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ২০১৯ সালের অ্যাশেজে দুটি টেস্টের জন্য দলেও ফিরেছিলেন ব্যানক্রফট। তবে এরপর আর সুযোগ পাননি।
কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্ট শেফিল্ড শিল্ডের সর্বশেষ দুটি মৌসুমে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ব্যানক্রফট। ওয়ার্নার অবসরে যাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই তাঁর নাম সামনে আসছে। এমনিতে অধিনায়ক কামিন্স নিজে নির্বাচক না হলেও ব্যানক্রফটের অমন মন্তব্যের পর সম্পর্কটা তাঁদের মধ্যে কেমন, সেটিও স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহের ব্যাপার।
কামিন্স ছাড়া কেপটাউন টেস্টের অন্য তিন বোলার নাথান লায়ন, মিচেল স্টার্ক ও জশ হ্যাজলউড এখনো অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ সারির বোলার। ২০২১ সালে ব্যানক্রফট যে সাক্ষাৎকারে তাঁরা ‘না জেনে পারেন না’—এমন বলেছিলেন, সেটি অস্বীকার করে কামিন্সরা বিবৃতিও দিয়েছিলেন।
এখন তাঁর দলে ফেরার ক্ষেত্রে কামিন্সদের সঙ্গে সম্পর্ক কোনো বাধা নয়, ব্যানক্রফট আত্মবিশ্বাসী সে ব্যাপারে। বিগ ব্যাশের ম্যাচের আগে সিডনিতে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এটা তারই (কামিন্সের) ক্রিকেট দল, সে অধিনায়ক। তারও অনুভূতি আছে এবং মতামত বা এমন ব্যাপার আছে, এ নিয়ে সংশয় নেই। (তবে) প্যাটকে যা জানি, সে পেশাদারও। সে যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে খুবই যুক্তিসংগত এবং পেশাদার হবে, তা নিয়ে আমার কোনো কথা নেই।’
আগের ঘটনা অনেক পেছনে ফেলে এসেছেন, ব্যানক্রফটের কথায় আছে সে সুর, ‘এখনো অনেকবারই সেসব খেলোয়াড়ের সঙ্গে দেখা হয়, স্বাভাবিকভাবে আপনি লোকের সঙ্গে যেভাবে মেলামেশা করেন, তার চেয়ে ব্যতিক্রম কিছু মনে হয়নি। অতীতে যা ঘটেছে, তা শেষ। আমার মনে হয়, তারাও এটিই মনে করে।’
এরপর ব্যানক্রফট বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দল সামনে এগিয়েছে, তারা সত্যিই অনেক সফলও হয়েছে। আমিও নিজের ক্রিকেট ও ক্যারিয়ারে এগিয়েছি, নিজের খেলার উন্নতির চেষ্টা করছি ক্রিকেটার হিসেবে এবং মানুষ হিসেবে নিজেকে নিয়ে কাজ করছি। তারাও একই ঘরানার ক্রিকেট খেলে। আমার মনে হয় না এমন আবহে আমি এলে কোনো ঝামেলা হবে।’
অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েছেন, ব্যানক্রফট তা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা সবাই ভুল করি। আমিও অবশ্যই নিজের ক্যারিয়ারে তা করেছি। আমার কাছে এটিই সুনিশ্চিত। সময়ের সঙ্গে আমি যা শিখেছি, নিজের কর্মকাণ্ডের দায় নিজে নেওয়া।’
মৌসুমের মাঝপথে ওয়ার্নার অবসর নেওয়ায় তাঁর জায়গায় কে আসবেন, সে আলোচনা স্বাভাবিকভাবেই বেশি হচ্ছে। ১০ দিন পরই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে সিরিজ শুরু হবে অস্ট্রেলিয়ার। সেখানে ওপেনিংয়ে স্টিভেন স্মিথের মতো কেউ উঠে আসতে পারেন কি না, এমন আলোচনাও চলছে।
তেমন কিছু হলে যে হতাশ হবেন তিনি, ব্যানক্রফট তা লুকাননি, ‘ক্রিকেট আমার কাছে পুরো দুনিয়া, ওপেনিং ব্যাটার হিসেবে নিজের খেলার উন্নতি করতে আমি সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছি। দিন শেষে এটা আমার সিদ্ধান্ত নয়। কিন্তু সেই পজিশনে ভালো করার চেষ্টা করতেই সব নজর ছিল আমার। আর নির্বাচকেরা আমাকে সব সময়ই বলে এসেছেন, টপ অর্ডার ব্যাটার হিসেবে ভালো করলে সে পজিশনেই তাঁরা আমাকে দেখেন। আমি সে পরামর্শ মেনেই এগিয়েছি। নিজের যথাসম্ভব সেরাটি দিয়ে যতটা সম্ভব রান করেছি শিল্ড ক্রিকেটে।’
বিশেষজ্ঞ ওপেনার হলেও ওয়ার্নারের সঙ্গে ব্যানক্রফটের খেলার ধরনের পার্থক্য আছে স্পষ্টই। শিল্ডের এ মৌসুমে ব্যানক্রফট যেমন খেলেছেন মাত্র ৩৮.৮১ স্ট্রাইক রেটে। সেখানে সদ্য বিদায়ী ওয়ার্নারের টেস্ট স্ট্রাইক রেটই ছিল ৭০-এর ওপরে। তবে এটিও কোনো ঝামেলা হবে না বলেই মনে করেন ব্যানক্রফট, ‘আমরা যে আলাদা উপায়ে খেলি, তা নিয়ে সংশয় নেই। কিন্তু বরাবরই আমরা দেখে এসেছি, একটা কাজের বিভিন্ন উপায় থাকে। ডেভিড একজনই, উসমান খাজা একজনই। কীভাবে ক্রিকেট খেলা হবে, সে ব্যাপারে সবাই অনন্য।’