দালাই লামার খোঁজে ম্যাকলয়েডগঞ্জে

দালাই লামা মহাশয় কি আছেন, দেখা করা যাবে?

প্রশ্নটা শুনে তিব্বতিয়ান বৌদ্ধ ভিক্ষু বেশ বিরক্ত হলেন। বৌদ্ধ ভিক্ষু বুঝেছি বেশভূষা দেখে। আর তিব্বতিয়ান সাধারণ বুদ্ধিতে। ধর্মশালার উচ্চতম স্থান ম্যাকলয়েডগঞ্জে প্রবাসী তিব্বতিয়ান সরকারের প্রধান কার্যালয়। আসলে বিশাল জায়গা নিয়ে একটা মন্দির। এটার দেখভাল করার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁরা সবাই তো তিব্বতের লোকজনই হবেন।

২০১৬ সালে ধর্মশালায় যখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কাভার করতে এসেছিলাম, সেবারও ঘুরে এসেছি। সেবার গিয়েছিলাম ট্যাক্সিতে। এবার একটু ভিন্ন অভিজ্ঞতা নিতে কেব্‌ল কারে। কেব্‌ল কার যেখানে নামিয়ে দেয়, সেখান থেকে থেকসেন চোলিং মন্দিরে যেতে মিনিট পাঁচেকও হাঁটতে হয় না। সেবার যখন গিয়েছিলাম, দালাই লামা বাইরের কোন একটা দেশে যেন ছিলেন। এখানে গেলেই দালাই লামার সঙ্গে দেখা করা যায় না। অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে হয়। দিনে দিনে দেখা করার কোনো সুযোগই নেই। অপেক্ষমাণ তালিকায় নামটা ওঠে, এই আরকি!

দালাই লামার সঙ্গে দেখা করতে আমি যে খুব উদ্‌গ্রীব হয়ে ছিলাম, ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। আমার ম্যাকলয়েডগঞ্জে যাওয়া মূলত ‘আসল ধর্মশালা’ দেখতে। ধর্মশালায় আমি যে হোটেলে উঠেছি, তা পাহাড়ের অনেক নিচে। চারপাশ খুব নির্জন। এই নির্জনতা আমি উপভোগই করি। কিন্তু কখনো কখনো একটু জনকোলাহলেও কি যেতে ইচ্ছা করে না! সে জন্য ম্যাকলয়েডগঞ্জের চেয়ে আদর্শ জায়গা আর হয় না।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাত হাজার ফুট ওপরে। আর নাম শুনেই আপনার অনুমান করে ফেলার কথা যে এর সঙ্গে ব্রিটিশ কানেকশন আছে। অনুমানটা ঠিক। জায়গাটার নাম ব্রিটিশ ভারতে পাঞ্জাবের গভর্নর ডোনাল্ড ফ্রিয়েল ম্যাকলয়েডের নামে। ধর্মশালায় এসে যেখান থেকে একবার ঘুরে না এলে সফরটাই অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

ধর্মশালার উচ্চতম স্থান ম্যাকলয়েডগঞ্জে প্রবাসী তিব্বতিয়ান সরকারের প্রধান কার্যালয়। আসলে বিশাল জায়গা নিয়ে একটা মন্দির।

শুধু ঘুরে না এসে সেখানে থাকতেও পারেন। ম্যাকলয়েডগঞ্জে হোটেলের অভাব নেই। পর্যটনকেন্দ্রে কখনোই তা থাকে না। হোটেল, রেস্টুরেন্ট, স্যুভেনিরের দোকান তো থাকতেই হবে। রাস্তার পাশে ছোট ছোট দোকানই বেশি ভালো লাগল দেখে। কত বিচিত্র সব জিনিসই না বিক্রি হচ্ছে সেখানে। এক তরুণ কামরাঙা নিয়ে বসেছেন। এটা আলাদাভাবে বলার মতো কিছু মনে হতো না, যদি সেই কামরাঙা বিক্রির ধরনটা এমন বিচিত্র না হতো। চাকু দিয়ে কেটে বিক্রি করছেন—এটা বললে আসলে কিছুই বোঝানো যাচ্ছে না। একটা করে কামরাঙা হাতে নিয়ে অদ্ভুত দক্ষতায় সেটিকে কয়েক পোচ দিয়ে ‘ফুল’ বানিয়ে ফেলছেন।

স্থানীয় খাবারদাবারের রেস্টুরেস্ট যেমন আছে, তেমনি আধুনিক ফুড চেইনের দোকানও। কেএফসি দেখলাম, সাবওয়েও। দোকানের বিক্রেতা ছাড়া রাস্তায় স্থানীয় লোকজন নেই বললেই চলে। প্রায় সবাই পর্যটক। কেব্‌ল কারে যাওয়া-আসায় ওপর থেকে ধর্মশালার সৌন্দর্য তো দেখা হলোই, লাভ হলো আরেকটাও। টিম হোটেলে থাকলে ক্রিকেটারদের সঙ্গে নিয়মিতই দেখা হয়। এবার তা থাকছি না বলে মাঠের বাইরে দেখা হয়নি কারও সঙ্গে। কেব্‌ল কারে ফেরার সময় দেখা হয়ে গেল কয়েকজনের সঙ্গে।

ম্যাচ তো ছিলই না, অনুশীলনও নয়। সেই সুযোগে ধর্মশালার ম্যাকলয়েডগঞ্জে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন তাসকিন, তাওহিদ, তানজিদ ও তানজিম, সঙ্গে টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরামও

নতুন দেশে, নতুন শহরে গেলে আশপাশে একটু ঘুরে দেখতে ইচ্ছা করাটাই স্বাভাবিক। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের এ ব্যাপারে খুব একটা সুনাম নেই। বরং হোটেল রুমে বন্দী হয়ে থাকার দুর্নাম আছে। এই দলের তরুণ ক্রিকেটাররা মনে হয় একটু অন্য রকম। আমি হোটেলে ফেরার জন্য কেব্‌ল কারে উঠতে যাচ্ছি, তখনই দেখি কেব্‌ল কার থেকে নামছেন তাসকিন আহমেদ। একটু খেয়াল করতেই দেখি, শুধু তাসকিন নন, তাঁর সঙ্গে আছেন তাওহিদ হৃদয়, তানজিম সাকিব, তানজিদ তামিমও। কর্তাস্থানীয় তিন–চারজনও। তাসকিন ছাড়া বাকি তিনজনই ২০২০ সালে যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য। এঁরা তাহলে সব দিক থেকেই একটু অন্য রকম।