শ্রীলঙ্কার ষষ্ঠ নাকি পাকিস্তানের তৃতীয়? আজ দুবাইয়ে এশিয়া কাপের শিরোপা শেষ পর্যন্ত জিতবে কারা! আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে উড়ে যাওয়ার পর শ্রীলঙ্কা ঘুরে দাঁড়িয়েছে দারুণভাবে। প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে হারের ধাক্কাও সামলে নিয়েছে পাকিস্তান।
আজ ফাইনালের নির্ধারক হয়ে যেতে পারে যা কিছু—
টস জিতলেই ম্যাচ জয়?
ফাইনালের আগে কি এ অনুশীলনটা করেছেন বাবর আজম ও দাসুন শানাকা? সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাম্প্রতিক ম্যাচের ফল, এবার এশিয়া কাপের ফলও বলছে, ম্যাচের ভাগ্যের অনেকটাই নির্ভর করতে পারে টসের ওপর। টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্তটাও যেন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফাইনালের আগে ১২ ম্যাচে টসে জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শুধু একটি দল। শারজায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে আগে ব্যাটিং করে অবশ্য ওই ম্যাচ হেরেছিল বাংলাদেশ। ১২টি ম্যাচের মধ্যে এবার আগে ব্যাটিং করে জেতার ঘটনা আছে তিনটি, এর মধ্যে দুটিই হংকংয়ের বিপক্ষে।
ফাইনালের ভেন্যু দুবাইয়েও শিশিরের প্রভাব ও পরে ব্যাটিং করা তুলনামূলক সহজ বলে টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার দিকেই ঝোঁক বেশি দলগুলোর। গত বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এ মাঠে ২১ ম্যাচে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঘটনা আছে মাত্র একটি। আর আগে ব্যাটিং করে জিতেছে তিনটি দল। তবে তিনবারই দলগুলোকে গড়তে হয়েছে বড় স্কোর—২১২, ১৯২ ও ১৭২ রান। এই তিন ম্যাচে অসম প্রতিপক্ষের কথাটাও মাথায় রাখা উচিত। দুটিতে জয়ী ভারতের প্রতিপক্ষ ছিল হংকং ও আফগানিস্তান, অন্যটিতে নিউজিল্যান্ডের প্রতিপক্ষ ছিল স্কটল্যান্ড।
ওপেনিং জুটি
বাবর আজমের সঙ্গে মোহাম্মদ রিজওয়ানের ওপেনিং জুটি যেন পাকিস্তানের ভালো ব্যাটিংয়ের অন্যতম পূর্বশর্ত। গত বছরের শুরু থেকেই দারুণ ফর্মে ছিল এ জুটি। এশিয়া কাপের আগ পর্যন্ত পাকিস্তানের তাঁদের ওপেনিং জুটির গড় ছিল ৫৬। তবে এ টুর্নামেন্টে সেটি নেমে এসেছে ১৫.৮০-তে। ওভারে তাদের রান তোলার হার ৬.০৭।
শ্রীলঙ্কার ওপেনিং জুটির অবস্থা অবশ্য পাকিস্তানের ঠিক বিপরীত। এশিয়া কাপের আগেও এ বছর তাদের ওপেনিং জুটির গড় ছিল মাত্র ১৯.৮০, স্ট্রাইক রেট ছিল ১১৭। তবে দানুশকা গুনাতিলাকার জায়গায় কুশল মেন্ডিসকে আনার পর থেকেই যেন বদলে গেছে চিত্রটা। পাতুম নিশাঙ্কা ও মেন্ডিসের ওপেনিং জুটি ফাইনালের আগপর্যন্ত ব্যাটিং করেছে ১৪৩ স্ট্রাইক রেট ও ৪১.৬ গড়ে। মেন্ডিসের স্পিন খেলার সামর্থ্যের সঙ্গে নিশাঙ্কার পেসের বিপক্ষে শক্তিমত্তাও ভয়ঙ্কর করে তুলেছে এ জুটিকে। দুজনের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে পাওয়ারপ্লেতেও এশিয়া কাপের সবচেয়ে সফল দল তারাই—১২৭.৭ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছে শ্রীলঙ্কা, বাউন্ডারি এসেছে প্রতি ৫.৫ বলে। দলের প্রায় ৪৫ শতাংশ রানও করেছেন ওপেনাররাই।
পাকিস্তানের দুশ্চিন্তা বাবর আজম
বিরাট কোহলিকে শুভকামনা জানিয়ে টুইট করেছিলেন বাবর আজম, যা প্রশংসিতও হয়েছিল বেশ। কোহলি অবশেষে এশিয়া কাপে এসেই ছন্দে ফিরেছেন, আফগানিস্তানের বিপক্ষে পেয়েছেন প্রায় ভুলে যেতে বসা সেঞ্চুরির স্বাদও। কিন্তু দুর্দান্ত সময় কাটানো বাবর এ টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত নিজেকে হারিয়েই খুঁজছেন।
ফাইনালের আগে ৫ ইনিংসে বাবরের স্কোর—১০, ৯, ১৪, ০, ৩০। বাবরের ওপেনিং সঙ্গী মোহাম্মদ রিজওয়ান ওদিকে খেলেছেন ম্যাচ জেতানো ইনিংস। এশিয়া কাপের মধ্যেই টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানদের র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানও রিজওয়ানের কাছে হারিয়ে ফেলেছেন বাবর। ফাইনালে রিজওয়ানের সঙ্গে নিশ্চয়ই বাবরকেও জ্বলে উঠতে দেখতে চায় পাকিস্তান। তিনিও কি ছন্দে ফিরতে বেছে নেবেন এ মঞ্চটিই?
ঘূর্ণিতে কাবু কে?
দুই দলের স্পিন আক্রমণ যেমন ভালো, দুই দলের ব্যাটিং লাইন-আপও আবার দুর্বল ওই স্পিনের বিপক্ষেই। মোহাম্মদ রিজওয়ান ও মোহাম্মদ নেওয়াজ ছাড়া স্পিনে ভুগেছেন পাকিস্তানের বেশিরভাগ ব্যাটসম্যানই। এবারের এশিয়া কাপে ফখর জামান, ইফতিখার আহমেদ, বাবর আজম, খুশদিল শাহদের সবার স্পিনের বিপক্ষে স্ট্রাইক রেট ১০০-এর নিচে। অবশ্য এর আগে স্পিন সামলাতে মোহাম্মদ নেওয়াজ ও শাদাব খানকে ওপরের দিকে পাঠিয়ে সফল হয়েছে তারা।
শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেও পরিস্থিতিটা একই। কুশল মেন্ডিসের স্পিনের বিপক্ষে স্ট্রাইক রেট ১৮৬.৯, মেরেছেন ৮টি ছক্কা। তবে দাসুন শানাকা ৩৩ বল খেলে করেছেন মাত্র ৩০ রান, চারিত আসালাঙ্কা ৭ রান করেছেন ১৫ বল খেলে। পাতুম নিশাঙ্কার গড় শানাকা-আসালাঙ্কার তুলনায় ভালো, তবে তিনিও ৬৫ রান করতে খেলেছেন ৫৫ বল। মেন্ডিসকে আগেভাগে আউট করতে পারলে পাকিস্তান স্পিনাররা চেপে বসতেই পারেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের ওপর।
অন্যদিকে পাকিস্তানের বড় হুমকি হতে যাচ্ছেন শ্রীলঙ্কার লেগ স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। এমনিতেই পাকিস্তান তাঁর প্রিয় প্রতিপক্ষ, এখন পর্যন্ত মাত্র ৯.০৯ গড়ে নিয়েছেন ১১ উইকেট, ওভারপ্রতি দিয়েছেন মাত্র ৬.২৫ রান। হাসারাঙ্গার অন্যতম বড় অস্ত্র গুগলিও সামাল দিতে হিমশিম খায় পাকিস্তান। এশিয়া কাপে ৭২টি গুগলিতে এখন পর্যন্ত ৬৩ রান করতে ৪ উইকেট হারিয়েছে তারা।