থেমে গেল ব্রায়ান হ্যাস্টিংসের জীবনের ইনিংস। নিউজিল্যান্ডের সাবেক ব্যাটসম্যান থামলেন ৮৪ বছর বয়সে। ঘরোয়া ক্রিকেটে যে দলের হয়ে প্রায় দুই দশক খেলেছেন, সেই ক্যান্টারবেরি ক্রিকেট গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিশ্চিত করেছে ৭ অক্টোবর মারা গেছেন হ্যাস্টিংস। হ্যাস্টিংস ঠিক কী কারণে মারা গেছেন, সেটি জানায়নি ক্যান্টারবেরি।
৩১ টেস্টে ৫৬ বার ব্যাট করে ৩০.২০ গড়ে ১৫১০ রান—এমন সাদামাটা পরিসংখ্যান যাঁর, সেই হ্যাস্টিংসকে ক্রিকেট ইতিহাস মনে রেখেছে একটি জুটির জন্য। ১৯৭৩ সালে অকল্যান্ডে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে দশম উইকেট জুটিতে রিচার্ড কলিঞ্জকে নিয়ে ১৫১ রানের জুটি গড়েছিলেন হ্যাস্টিংস। ২০১৩ সালে পর্যন্ত টেস্টে শেষ উইকেটে এটিই ছিল বিশ্ব রেকর্ড।
১৯৯৭ সালে পাকিস্তানের আজহার মেহমুদ-মুশতাক আহমেদ জুটি হ্যাস্টিংস-কলিঞ্জের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেন। ২০১৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৩ রানের জুটি গড়ে হ্যাস্টিংসদের পেছনে ফেলেন অস্ট্রেলিয়ার ফিলিপ হিউজ-অ্যাশটন অ্যাগার জুটি। এক বছর পর ভারতের বিপক্ষে শেষ উইকেটে ১৯৮ রান যোগ করে রেকর্ডটি নতুন করে লিখেছেন ইংল্যান্ডের জো রুট ও জেমস অ্যান্ডারসন।
১৯৭৭ সালে খেলা ছাড়ার পরও ক্রিকেটে জড়িয়ে ছিলেন হ্যাস্টিংস। ২০০০ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে ১০টি টেস্ট ও ১৮টি ওয়ানডেতে ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করা হ্যাস্টিংস ক্যান্টারবেরি ক্রিকেটের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন।
হ্যাস্টিংস তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত ইনিংসটি যখন খেলতে নেমেছিলেন ১৯৭৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। ১৮০ রানে নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় উইকেট খোয়ানোর পর ব্যাটিংয়ে নামেন এই ডানহাতি। হ্যাস্টিংস ব্যাটিংয়ে নামার পর দ্রুতই বদলে যায় পরিস্থিতি। তাঁকে এক প্রান্তে রেখে ফিরে যান সাত ব্যাটসম্যান। ১৮০/২ থেকে নিউজিল্যান্ড হয়ে যায় ২৫১/৯।
প্রথম ইনিংসে ৪০২ রান করা পাকিস্তানের বড় লিড নেওয়ার স্বপ্ন এরপর ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান কলিঞ্জকে নিয়ে চুরমার করেন হ্যাস্টিংস। ১৫১ রানের জুটি গড়ার পর ওয়াসিম রাজার বলে হ্যাস্টিংস যখন বোল্ড হলেন নিউজিল্যান্ডের রানও ৪০২। চারে নেমে হ্যাস্টিংস সেদিন ২৭৫ মিনিট ব্যাট করে ১১০ রান করেন। তাঁর সঙ্গী কলিঞ্জ ১৫৫ মিনিট ব্যাট করে ৬৮ রানে অপরাজিত ছিলেন।
১৯৫৭-৫৮ মৌসুমে প্রথম শ্রেণির অভিষেক হ্যাস্টিংসের। তবে টেস্ট দলে সুযোগ পেতে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে তাঁকে। অকল্যান্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট অভিষিক্ত হ্যাস্টিংস শেষ টেস্টটি খেলেন ১৯৭৬ সালে। ১৯৭৫ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড দলের এই সদস্য টেস্টে সেঞ্চুরি করেছেন চারবার। ১৯৭৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের প্রথম টেস্ট জয়ের দলেও ছিলেন হ্যাস্টিংস।
ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফো হ্যাস্টিংসের ব্যাটিংয়ের ধরন নিয়ে লিখেছে এভাবে, ‘চোখজুড়ানো টাইমিং, সুযোগ পেলেই কাট কিংবা হুক করতে কিংবা ফাস্ট মিডিয়াম বোলিংয়ে লেগ সাইডে ক্লিপ করতে পারঙ্গম।’
ফিল্ডার হিসেবে অসাধারণ ছিলেন হ্যাস্টিংস। বিশেষ করে গালিতে নিজেকে শূন্যে ছেড়ে দিয়ে দারুণ সব ক্যাচ নিতেন তিনি।