সেঞ্চুরির পর নাজমুল হোসেন। তাঁর দল আবাহনী জিতেছে টানা ১০ ম্যাচ
সেঞ্চুরির পর নাজমুল হোসেন। তাঁর দল আবাহনী জিতেছে টানা ১০ ম্যাচ

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ

নাজমুল-নাঈম-মুশফিক-তৌফিকের সেঞ্চুরি দিনে আবাহনীর ১০-এ ১০

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের প্রথম নয় রাউন্ড সেঞ্চুরি দেখেছিল ১১টি। কিন্তু আজ দশম রাউন্ডের প্রথম তিন ম্যাচেই সেঞ্চুরি হয়েছে ৪টি! এর মধ্যে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আবাহনী ও প্রাইম ব্যাংকের ম্যাচেই হলো তিন ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি পেয়েছেন। ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম ও নাজমুল হোসেনের সেঞ্চুরিতে আবাহনী ৪ উইকেটে করে ৩৪১ রান। জবাবে মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরিতে প্রাইম ব্যাংক করেছে ২৮৩। বিকেএসপিতে গাজী টায়ার্সকে ১৫০ রানে অলআউট করার পর লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে ১০ উইকেট জয় এনে দিয়েছেন তৌফিক খান। ফতুল্লায় পারটেক্সকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে শেখ জামাল ধানমন্ডি।

আবাহনীর ১০-এ ১০

বরাবরের মতো আজও ব্যাটিংয়ে আবাহনীর শুরুটা হয় দারুণ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ব্যাটিং উইকেটে মোহাম্মদ নাঈম-এনামুল হকের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ১১০ রান। এনামুল ৪৫ রানে আউট হলেও নাজমুল হোসেনের সঙ্গে ৮৯ রানের জুটি গড়েন নাঈম। এবারের ঢাকা লিগে নিজের প্রথম সেঞ্চুরিও তুলে নেন এই বাঁহাতি। ৯৭ বলে তিন অঙ্ক স্পর্শ করে শেষ পর্যন্ত আউট হন ১০৪ বলে ১০৫ রান করে। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে নাঈমের অষ্টম সেঞ্চুরিতে ছিল ১০টি চার ও ২টি ছক্কা।

আবাহনীর আরেক সেঞ্চুরিয়ান মোহাম্মদ নাঈম

নাঈমের ইনিংসটি অবশ্য বিতর্কমুক্ত ছিল না। ব্যক্তিগত ৬৯ রানের সময় মোহাম্মদ মিঠুনের রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে আসা আর্ম বল ব্যাকফুট থেকে খেলার চেষ্টা করেন নাঈম। কিন্তু জোরের ওপর করা বলটি খুঁজে নেয় নাঈমের প্যাড। কিন্তু প্রাইম ব্যাংকের ফিল্ডারদের এলবিডব্লুর জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার আসাদুল ইসলাম। পরে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে খেলোয়াড়দের একত্র করেন প্রাইম ব্যাংকের অধিনায়ক তামিম। ওদিকে প্রাইম ব্যাংকের ড্রেসিংরুমের সামনে দলটি কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন চতুর্থ আম্পায়ারের সঙ্গে কথার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন।

এই ঘটনায় মিনিট পাঁচেক খেলা বন্ধ ছিল। এরপর অবশ্য দুই আম্পায়ার আসাদুল ও সাজেদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার পর খেলায় ফেরেন প্রাইম ব্যাংকের খেলোয়াড়রা। তাতে অবশ্য আবাহনীর ব্যাটিংয়ের ছন্দপতন ঘটেনি। তাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন নাজমুল। ব্যক্তিগত ১৫ রানের সময় নাজমুলকে আউট করার সুযোগ ছিল প্রাইম ব্যাংকের। কিন্তু নিজের বোলিংয়ে ক্যাচ ধরতে পারেননি হাসান মাহমুদ। এরপর মাত্র ৭৭ বলে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক। অন্য প্রান্তে থাকা তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাট থেকে আসে ঝোড়ো ফিফটি। দুজনে তৃতীয় উইকেটের জুটিতে যোগ করেন ১২৩ রান। নাজমুল ৪৮.৩ ওভারে ৮৫ বলে ১৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১১৮ রান করে আউট হন। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এটি নাজমুলের ১১তম সেঞ্চুরি। হৃদয় অপরাজিত ছিলেন ৩৫ বলে ৬৫ রান করে। ২টি চার ও ৪টি ছক্কার ইনিংসে হৃদয় আবাহনীর ইনিংসটাকে নিয়ে যান ৩৪১ রানে।

সেঞ্চুরি পেয়েছেন প্রাইম ব্যাংকের মুশফিকুর রহিম

জবাবে পাওয়ার প্লেতেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে প্রাইম ব্যাংক। তাসকিন আহমেদ ও তানজিম হাসানের ওপেনিং স্পেলেই আউট তামিম, জাকির হাসান ও শাহাদাত হোসেন। ৪৩ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর ফর্মে থাকা পারভেজ হোসেন ও মুশফিকুর রহিম জুটি গড়ে ইনিংসটাকে দীর্ঘ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু মোসাদ্দেক হোসেনের বলে ৫৬ রান করে আউট হন পারভেজ। মুশফিক অবশ্য টিকে ছিলেন শেষ পর্যন্ত। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ১০৫ বলে ১১১ রানের ইনিংস। ১৪টি চারে সাজানো ইনিংসটি শুধু পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়ে। প্রাইম ব্যাংক ৪৯.৪ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে অলআউট হয় ২৮৩ রান। আবাহনীর ৫৮ রানের জয়ে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন ও তানজিম। ম্যাচসেরা হয়েছেন নাজমুল।  

সংক্ষিপ্ত স্কোর

আবাহনী: ৫০ ওভারে ৩৪১/৪ (নাজমুল ১১৮, নাঈম ১০৫, হৃদয় ৬৫*, এনামুল ৪৫; হাসান ২/৭৬)।

প্রাইম ব্যাংক: ৪৯.৪ ওভারে ২৮৩ (মুশফিক ১১১*, পারভেজ ৫৬, হাসান ৩৪; তানজিম ৩/৪৪, তাসকিন ৩/৪৬, মোসাদ্দেক ২/৫০)।

ফল: আবাহনী ৫৮ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: নাজমুল হোসেন।

নুরুল–তাইবুরে শেখ জামালের জয়

৩ উইকেট ও ৩৯ রান করে ম্যাচসেরা তাইবুর রহমান

ফতুল্লায় অধিনায়ক নুরুল হাসানের সৌজন্যে পারটেক্সকে সহজেই হারিয়েছে শেখ জামাল ধানমন্ডি। বাঁহাতি পেসার শফিকুল ইসলাম ৪ ও তাইবুর রহমান বাঁহাতি স্পিনে ৩ উইকেট নিলে পারটেক্স ৪৮.২ ওভারে অলআউট হয় ২০৫ রানে। রান তাড়ায় শুরুতেই হোঁচট খায় শেখ জামাল। ১০৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসে শেখ জামাল। এই ৫ উইকেটের ৩টিই নেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলে আসা বাঁহাতি স্পিনার আহরার আমিন।  দলের বিপদে হাল ধরেন নুরুল হাসান। তাইবুর রহমানকে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে ১০৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ৪৬তম ওভারে দলের জয় নিশ্চিত করেন। নুরুল ৭৫ বলে ৭৬ রানে অপরাজিত ছিলেন, তাইবুর ৬৩ বলে ৩৯ রান করেন। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচ সেরা হয়েছেন তাইবুর।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

পারটেক্স: ৪৮.২ ওভারে ২০৮/৫ (আহরার ৩৫, জাহিদুজ্জামান ৩২, তানভীর ৩০; শফিকুল ৪/৩২, তাইবুর ৩/১৯)।

শেখ জামাল: ৪৬ ওভারে ২০৮/৫ (নুরুল ৭৬*, সৈকত ৪১, তাইবুর ৩৯*; আহরার ৩/৪২)।

ফল: শেখ জামাল ৫ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: তাইবুর রহমান।

১৫১ রানের লক্ষ্য ছুঁতে নেমে তৌফিকের সেঞ্চুরি

৬৬ বলে ১১৪ রান করেছেন তৌফিক খান

বিকেএসপিতে গাজী টায়ার্সকে উড়িয়ে দিয়েছে মাশরাফির লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। তিন নম্বর মাঠে গাজী টায়ার্স আগে ব্যাট করে অলআউট হয় ৪৪.২ ওভারে ১৫০ রানে। শুভাগত হোম ৪ উইকেট নিয়েছেন, মাশরাফির শিকার ২ উইকেট। রান তাড়ায় রূপগঞ্জের ইনিংসের শুরুতে প্যাভিলিয়নে বিকট শব্দে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট হলে খেলা ১০ মিনিট বন্ধ ছিল। এরপর রূপগঞ্জের ইনিংসও বিদ্যুৎগতিতে এগিয়ে নিয়েছেন ওপেনার তৌফিক খান। মাত্র ১৫০ রানের ম্যাচে বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি করে দেখালেন সিলেটের এই ক্রিকেটার। তাঁর ৬৬ বলে ১১৪ রানের অপরাজিত ইনিংসে ১৯.২ ওভারে জয় পেয়ে যায় রূপগঞ্জ। তৌফিকের প্রথম লিস্ট ‘এ’ সেঞ্চুরিতে ছিল ১২টি চার ও ৮টি ছক্কা, স্ট্রাইক রেট ১৭২। আরেক ওপেনার সাদমান ইসলাম ৫১ বলে ৩৫ রানে অপরাজিত ছিলেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

গাজী টায়ার্স: ৪৪.২ ওভারে ১৫০ (ইফতেখার ৩০; শুভাগত ৪/৩০, মাশরাফি ২/১৮, হালিম ২/২৬)।

লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ১৯.২ ওভারে ১৫২/০ (তৌফিক ১১৪*, সাদমান ৩৫*)।

ফল: লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ১০ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: তৌফিক খান।