গত জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা দেওয়ার এক দিন পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছিলেন বাংলাদেশের তখনকার অধিনায়ক তামিম ইকবাল। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, তামিম যেন বিশ্বকাপে খেলেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই মনোভাব প্রকাশের পর তামিমের বিশ্বকাপ দলে থাকা নিয়ে কোনো আলোচনারই প্রয়োজন ছিল না বলে মনে করেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।
বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক ও সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মাশরাফি বলেন, যেটা প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত গড়িয়ে গেল, সেই জিনিসটা নিয়ে আর তামিমকে বিরক্ত করার প্রয়োজন ছিল না যে কোথায় খেলবে, কয় নম্বরে খেলবে। বিশ্বকাপের দল ঘোষণাই ওভাবে হয়ে যাওয়া উচিত ছিল।
মঙ্গলবার রাতে তামিমকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করা হয়। গতকাল এক ভিডিও বার্তায় তামিম জানান, কয়েক দিন আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে ভালোভাবে জড়িত এক ব্যক্তি তাঁকে ফোন করে বলেছিলেন, তামিম যেন বিশ্বকাপে আফগানিস্তান ম্যাচে না খেলেন। আর খেললেও ওপেনিংয়ের বদলে নিচের দিকে ব্যাট করেন। এমন প্রস্তাব ‘মেনে নেওয়া সম্ভব না’ হওয়ায় তামিম উত্তেজিত হয়ে বলেছিলেন, তাঁকে যেন বিশ্বকাপে না রাখা হয়।
আজ সন্ধ্যায় এক ভিডিও বার্তায় মাশরাফি বলেন, তামিমের উত্তেজিত হয়ে বিশ্বকাপে না রাখার মন্তব্যটি সঠিক ছিল না, ‘বোর্ডের কেউ না কেউ তার সঙ্গে কথা বলেছে। এবং কথা বলার পর তামিম কিছুটা উত্তেজিত হয়ে যায়। এবং সে দলে থাকতে চায়নি। আমি মনে করি যে এটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।’
তবে তামিমের উত্তেজিত হয়ে বলা মন্তব্যের চেয়েও তাঁকে বিশ্বকাপে না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে বড় প্রশ্ন মাশরাফির, ‘তামিম হয়তো উত্তেজিত হয়ে তাকে না রাখতে বলেছে। কিন্তু তার ভিত্তিতে তাকে না রাখাটা আসলে কেমন হলো? দ্বিতীয়ত, তামিমকে যেটা বলা হয়েছে যে প্রথম ম্যাচটা খেলো না বা খেললেও নিচে ব্যাটিং করো, এই জিনিসটা ক্রিকেট বোর্ডের কারও বলার বিষয় না। এটা বলবে কোচ, অধিনায়ক এবং দলের সঙ্গে যাওয়া নির্বাচক, মূলত টিম ম্যানেজমেন্ট। টিম ম্যানেজমেন্ট বললে বাংলাদেশ থেকেও বলতে পারে, দল ঘোষণার পর ভারতে গিয়েও বলতে পারে। সেটা এত আগে করার কারণ কী, আমি জানি না।’
তামিম অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন চট্টগ্রামে আফগানিস্তান সিরিজের প্রথম ওয়ানডের পর। এ নিয়ে দেশজুড়ে আলোড়ন উঠলে পরদিন প্রধানমন্ত্রী তামিমকে ডেকে পাঠান। সেদিন গণভবনে তামিমের পাশাপাশি বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান এবং মাশরাফি উপস্থিত ছিলেন। তামিমের অবসর ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে মাশরাফি বলেন, ‘তামিম পরিষ্কারভাবে বুঝেশুনে অবসরে গেছে। তারপরে কী হলো। বোর্ডের কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিল না। একপর্যায়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত জিনিসটা গড়িয়ে গেল। প্রধানমন্ত্রী তামিমকে ডেকে অনেকক্ষণ কথা বলেছেন। প্রায় দেড়–দুই ঘণ্টার মতো। এবং শেষমেশ যে গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চেয়েছেন তামিম যেন বিশ্বকাপে খেলে। তামিমকে যে আদেশটা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী, তামিমও পরে মিডিয়ায় এসে সংবাদ সম্মেলনে বলেছে যে, “প্রধানমন্ত্রী আমাকে খেলতে বলেছেন। এরপরে আর কোনো কথা নেই। আমি অবশ্যই খেলব।”’
প্রধানমন্ত্রীর কথায় বিশ্বকাপ প্রসঙ্গ উঠে আসার পর তামিম কোথায় কত নম্বরে খেলবেন, সেই সিদ্ধান্ত শুধু ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার পরই নেওয়ার ছিল বলে মনে করেন মাশরাফি, ‘যে জিনিসটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত গড়াল, সেই জিনিস নিয়ে আমার কাছে মনে হয় না এরপরে আর আলোচনার প্রয়োজন ছিল। যদি দলের কোনো সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে, টিম ম্যানেজমেন্ট ভারতে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিত, যেটা করার সেটা করত।’
তামিমকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার পর এমন প্রস্তাব দিলে সেটা যদি তিনি না মানতেন বা কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতেন, তাহলে বোর্ড চাইলেই যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারত বলেও মন্তব্য করেন ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া অধিনায়ক।