শারজার ভূত তাড়ানো গেছে। টানা নয় ম্যাচ হারার পর এ মাসেই অবশেষে শারজা ‘জয়’ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সেই জয় পাওয়ার পরও অবশ্য একই ভেন্যুতে শেষ ম্যাচে হেরে সিরিজ হারতে হয়েছে।
শারজায় সংক্ষিপ্ত সফর শেষে বাংলাদেশ দল এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে। বাংলাদেশ দলের ভূত তাড়ানোর আছে সেখানেও। যে ‘ভূত’কে সংখ্যায় প্রকাশ করলে তা হয় ৪৩। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন রান। সেই দুঃস্বপ্ন অ্যান্টিগার স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে, যেখানে এবার বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট।
ক্যারিবিয়ানে পূর্ণাঙ্গ এক সফরই করছে বাংলাদেশ। যে সফরে আছে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ। অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টটি শুরু হবে আগামী শুক্রবার। ম্যাচটি ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে বলেই শঙ্কা! ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কিংবদন্তির নামাঙ্কিত এই মাঠে ছয় ম্যাচ খেলে ছয়টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। আর সেই হারগুলোও কী বিশাল ব্যবধানে! বাংলাদেশ দলের জন্য তাই আতঙ্কের প্রতিশব্দই বলতে হবে অ্যান্টিগাকে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল প্রথমবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েছিল ২০০৪ সালে। এরপর গত ২০ বছরে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ এবং ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিলিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ৪৯টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। ক্যারিবিয়ানে তিন সংস্করণ মিলিয়ে বাংলাদেশ ১৭টি ম্যাচ জিতলেও সেই জয়গুলোর একটিও অ্যান্টিগাতে নয়। সেখানে আর কোনো মাঠে চারটির বেশি ম্যাচ খেলে জয়হীন নেই বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচ খেলে ২০০৭ বিশ্বকাপের সুপার এইটে। ভারতকে বিদায় করে সুপার এইটে ওঠা বাংলাদেশ বড় ধাক্কাই খায় অ্যান্টিগায় গিয়ে। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের কাছে পরপর দুই ম্যাচে হারে ১০ ও ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে।
বৃষ্টির কারণে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২২ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ৬ উইকেটে ১০৪ রান করেছিল বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (৪৪ বলে ৫৯) ও ম্যাথু হেইডেন (৩৯ বলে ৪৭) ১৩.৫ ওভারেই যা টপকে যান।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পরের ম্যাচে এর চেয়ে একটু ভালো করে বাংলাদেশ। সেই ভালোও অবশ্য ৪৮.৩ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে মাত্র ১৭৪ রান। অধিনায়ক স্টিভেন ফ্লেমিংয়ের সেঞ্চুরিতে (৯২ বলে ১০২) যা ২৯.২ ওভারেই পেরিয়ে যায় কিউইরা।
ওই দুই ম্যাচ খেলার ১১ বছর পর ২০১৮ সালে এবারের মতোই বাংলাদেশের ক্যারিবীয় সফর শুরু হয়েছিল অ্যান্টিগা টেস্ট দিয়ে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য যা হয়ে আছে ভয়ানক এক দুঃস্বপ্ন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসারদের দাপটে প্রথম ইনিংসে ১৮.৪ ওভারে মাত্র ৪৩ রানে অলআউট হয়ে যায় সাকিব আল হাসানের দল। ৪৩ রানের ২৫-ই এসেছিল এক লিটন দাসের ব্যাট থেকে। টেস্টে তো বটেই, তিন সংস্করণ মিলিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন ইনিংসের রেকর্ড হয়ে আছে এটি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ একমাত্র ইনিংসে ৪০৬ রান করার পর বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৪ রানে অলআউট হয়ে হারে ইনিংস ও ২১৯ রানে।
চার বছর পর বাংলাদেশের পরের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরও শুরু অ্যান্টিগা টেস্ট দিয়ে। এবারও ক্যারিবীয় পেস–তোপে ধ্বংস বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ১০৩ রানে অলআউট হলেও বোলাররা ভালো করায় চার বছর আগের মতো ইনিংস ব্যবধানে হারতে হয়নি। সাকিবরা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দিতে পেরেছিলেন ৮৪ রানের লক্ষ্য। ৯ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারালেও স্বাগতিকেরা আর কোনো উইকেট না হারিয়েই যাতে পৌঁছে যায়।
এবারের সফরের আগে বাংলাদেশ তিন সংস্করণেই দুটি করে ম্যাচ খেলেছে অ্যান্টিগাতে। ওয়ানডে ও টেস্টের পর দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচই গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। প্রথম ম্যাচে প্রথমে ব্যাটিং করেও ডাকওয়ার্থ–লুইস পদ্ধতিতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ২৮ রানে হারে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ১৪০ রানের জবাবে অস্ট্রেলিয়া ১১.২ ওভারেই ১০০ রান তুলে ফেলার পর বৃষ্টি এসে থামিয়ে দেয় খেলা। দুই দিন পর ভারতের ১৯৬ রানের জবাবে ১৪৬ রানে থেমে ৫০ রানে হারে বাংলাদেশ।
যে মাঠে সুখস্মৃতি বলে কিছু নেই, বরং শোচনীয় সব পরাজয়ের দুঃস্মৃতি, সেখানে কি এবার নতুন কিছু হবে? স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামকে মনে রাখার মতো কিছু করতে পারবে বাংলাদেশ দল? আশা করতে পারেন, তবে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স আর ভাঙাচোরা দল সেই আশার পালে খুব একটা বাতাস লাগাতে পারছে বলে মনে হয় না।