ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও উত্তর আয়ারল্যান্ড—এই চার ভূখণ্ড মিলেই যুক্তরাজ্য বা গ্রেট ব্রিটেন। এক দেশ হলেও অলিম্পিক ছাড়া যে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে গ্রেট ব্রিটেন বা যুক্তরাজ্য নামে কোনো দল থাকে না, সেটির কথা কে না জানে! ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও উত্তর আয়ারল্যান্ড বেশির ভাগ খেলাতে পরস্পরের প্রতিপক্ষ হিসেবেই মুখোমুখি হয়।
ফুটবল ও অন্যান্য বেশির ভাগ খেলায় এই চার দল অনেক আগে থেকেই পরস্পরের প্রতিপক্ষ। তবে ক্রিকেটে ব্যাপারটা একটু অন্য রকম। ওয়েলস কিংবা উত্তর আয়ারল্যান্ড নামে কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দল নেই। ওয়েলস তো ক্রিকেটে ইংল্যান্ডেরই অংশ। ইংল্যান্ডের ক্রিকেটের পুরো নামটাই এর প্রমাণ—ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড, সংক্ষেপে ইসিবি।
উত্তর আয়ারল্যান্ডের বিষয়টি আবার একটু অন্য রকম। এই ভূখণ্ডের ক্রিকেট সংযুক্ত আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে। প্রতিবেশীরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে আয়ারল্যান্ড নামেই। ব্রিটিশ ভূখণ্ডে তাই স্বতন্ত্র ক্রিকেট জাতি একটিই—স্কটল্যান্ড। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত অবশ্য ইংলিশ ক্রিকেটের সঙ্গেই সংযুক্ত ছিল স্কটিশরা। ১৯৯২ সালে সম্পর্ক ছিন্ন করে আলাদা ক্রিকেট জাতি হিসেবে আবির্ভূত হয় স্কটল্যান্ড। সেই পথচলায় স্কটিশরা আইসিসির সহযোগী সদস্যপদ পায় ১৯৯৪ সালে।
এরপর ওয়ানডে ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মর্যাদাহীন অনেক ম্যাচেই মুখোমুখি হয়েছে ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড। তবে আজকের দিনটা এই দুই দলের জন্য আরেকটি মনে রাখার মতো দিনই হতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে আজই যে প্রথম দেখা হচ্ছে দুই প্রতিবেশীর। সেটিও কিনা বিশ্বকাপে!
আজ বার্বাডোজের ব্রিজটাউনের কেনসিংটন ওভালে ২০ ওভারের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে আটটায় শুরু ম্যাচটি দিয়েই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ধরে রাখার অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। স্কটল্যান্ডেরও এবারের বিশ্বকাপের এটি প্রথম ম্যাচ।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এখনো মুখোমুখি না হলেও ইংল্যান্ড-স্কটল্যান্ড ওয়ানডে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছে পাঁচবার। যার সর্বশেষটি ২০১৮ সালে। এডিনবরায় অনুষ্ঠিত সেই মাচটিই অনন্ত অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে রিচি বেরিংটনের স্কটল্যান্ডের জন্য। ম্যাচটি জিতেছিল স্কটল্যান্ড। ইংলিশদের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওই একটিই জয় স্কটিশদের।
সেই ম্যাচে স্কটল্যান্ডের একাদশে থাকা সাতজন আছেন এবারের বিশ্বকাপ দলেও। আর স্কটল্যান্ডের কাছে অঘটনের শিকার ইংল্যান্ডের সেই দলের চারজন আছেন এবারের বিশ্বকাপে। সেই ম্যাচে ক্যালাম ম্যাকলাউডের ৯৪ বলের ১৪০ রানের ইনিংসে ৩৭১ রান তুলেছিল স্কটল্যান্ড। রান তাড়ায় জনি বেয়ারস্টো ৫৯ বলে ১০৫ রান করলেও ইংল্যান্ড হারে ৬ রানে। বেয়ারস্টো এবারও ইংল্যান্ড দলে থাকলেও স্কটল্যান্ড দলে নেই ম্যাকলাউড।
ইংল্যান্ডের সেবারের দলে ছিলেন না এবারের অধিনায়ক জস বাটলার। গতবার যাঁর নেতৃত্বে বিশ্বকাপ জিতেছে ইংল্যান্ড, সেই বাটলার নিশ্চিতভাবেই মনের কোণে কোনো অঘটনের শঙ্কা জায়গা দিচ্ছেন না। পাঁচ দলের প্রতিটি গ্রুপ থেকে দুটি দল উঠবে সুপার এইটে—এই তথ্যটাই বলে দিচ্ছে পা হড়কানোর কোনো সুযোগ নেই বড় দলগুলোর জন্য। প্রথম দল হিসেবে টানা দ্বিতীয় ও সব মিলিয়ে তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগ ইংল্যান্ডের সামনে। সেই সুযোগ লুফে নেওয়ার প্রথম পদক্ষেপটা ইংল্যান্ড আজ ফেলতে চাইবে স্কটল্যান্ডকে হারিয়েই।
২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে বাংলাদেশকে হারানো স্কটল্যান্ড উঠে গিয়েছিল সুপার টুয়েলভে। এবার স্কটিশরা সে রকম কিছু করতে পারবে কি না, তা নির্ভর করছে দলটাতে থাকা ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেট খেলে বেড়ে ওঠা খেলোয়াড়দের ওপরই।