২০১৫ সালে বিপিএলে এসে এখন পর্যন্ত ছয়টা আসর খেলেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। এবার নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে চারবার। কীভাবে কুমিল্লার এই সাফল্য? অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর চেয়ে কুমিল্লা কোথায় আলাদা?
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বিপিএলে চতুর্থ শিরোপা জয়ের পর গতকাল রাতে অধিনায়ক ইমরুল কায়েস ও কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে আসেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের চেয়ারপারসন নাফিসা কামালও। প্রশ্নটা রাখা হয়েছিল তাঁর কাছেই।
নাফিসা বলেছেন, অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে অনেক পার্থক্যই দেখেন তিনি কুমিল্লার, বিশেষ করে বিপিএলের সাম্প্রতিক আসরগুলোতে। বিপিএলে কুমিল্লার উপস্থিতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিদেশি খেলোয়াড় আনার কথা যদি বলি, শুধু টাকা থাকলেই যে বিদেশি খেলোয়াড় পাওয়া যাবে, তা নয়। আমরা বিদেশি খেলোয়াড়দের কাছ থেকে অনেক সাড়া পাই। তারা বিপিএলে আসতে চায়। অন্য দলের তুলনায় অনেক আগে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমি অক্টোবর মাসে খেলোয়াড় সাইন করেছি, এটা অন্য দলগুলো হয়তো ভাবতেও পারবে না। আমরা অনেক লম্বা চিন্তা করি এবং আমাদের নেটওয়ার্ক এখন অনেক শক্ত। আজকেই যেমন আমি আগামীবারের জন্য দুজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলেছি।’
আমাদের বিশ্বাস ছিল চ্যাম্পিয়ন হব। তবে কীভাবে হব, সেটা নিয়ে নতুন করে পরিকল্পনা করতে হয়েছে। চট্টগ্রামে সবাই বসলাম। কী করলে লক্ষ্য পূরণ হবে, সেটা নিয়ে কাজ করেছি।নাফিসা কামাল, চেয়ারপারসন, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস
এ ক্ষেত্রে অধিনায়ক ইমরুল কায়েস এবং কোচ সালাউদ্দিনকেও কৃতিত্ব দিয়েছেন তিনি, ‘আমি একা নই। কোচ, অধিনায়ক দুজনই আমাদের সঙ্গে ২০১৫ সাল থেকে আছেন। সুনীল নারাইনও ২০১৫ সাল থেকে আছে। শুধু দেশি-বিদেশি খেলোয়াড় নয়; কোচিং স্টাফ, টিম স্টাফ সবাই অনেক দিন থেকে এক সঙ্গে আছে। এটা ব্যতিক্রম। টিম ব্র্যান্ডিং, বিপিএলে আমাদের উপস্থিতি অনেক শক্ত।’
এবারের বিপিএলে কোনো দলেই বিদেশি খেলোয়াড়েরা নিয়মিত ছিলেন না। ব্যতিক্রম নয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসও। তার মধ্যেই কুমিল্লা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছে। ‘এবার ধারাবাহিকভাবে সব দল বিদেশি খেলোয়াড় নিয়ে সংগ্রাম করছে। বিদেশি খেলোয়াড়েরা প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেছে। কিন্তু আমরা প্রথম থেকে জানি কোন সময় আমাদের কোন খেলোয়াড় আসবে, যাবে। সে জন্য আমাদের চিন্তাটা অন্য দিকে যায়নি। খেলার মধ্যেই ছিল। আমাদের অ্যাজেন্ডা একটাই ছিল, কাপ জিততে হবে’—বলেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের মালিক।
আর এ কারণেই প্রথম তিন ম্যাচ হারার পরও দলের ওপর থেকে বিশ্বাস হারাননি তিনি। এরপর তো টানা ১১ ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়নই হলো কুমিল্লা। নাফিসাও বলছিলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস ছিল চ্যাম্পিয়ন হব। তবে কীভাবে হব, সেটা নিয়ে নতুন করে পরিকল্পনা করতে হয়েছে। চট্টগ্রামে সবাই বসলাম। কী করলে লক্ষ্য পূরণ হবে, সেটা নিয়ে কাজ করেছি।’
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের মালিক নাফিসার বাড়িও কুমিল্লায়। তাঁর বাবা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল কুমিল্লা-১০ আসনের সংসদ সদস্য। বিসিবির সাবেক সভাপতি মুস্তফা কামাল একসময় ছিলেন আবাহনীর ক্রিকেট কমিটির প্রধান। তাঁর সময়ই ওয়াসিম আকরাম, নেইল ফেয়ারব্রাদাররা খেলে গেছেন আবাহনীতে। নাফিসা জানালেন ক্রিকেট এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস নিয়ে তাঁর যে উৎসাহ, সেটাও বাবার প্রেরণাতেই।
সংবাদ সম্মেলনে নাফিসা বলেন, ‘ওয়াসিম আকরাম, নেইল ফেয়ারব্রাদাররা যেমন আব্বুর দলে খেলে গেছেন; এখন রাসেল, নারাইনদের মতো ক্রিকেটাররা আমাদের দলে খেলেন। আব্বুর কাছ থেকেই উৎসাহটা পেয়েছি। আমার বাবাই ওই সময় প্রথম আবাহনীর জন্য ভালো মানের বিদেশি খেলোয়াড় নিয়ে আসেন। শহীদ আফ্রিদি যেমন আমার বাবার দলে খেলেছেন, আমার দলেও খেলেছেন।’
সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করে নাফিসা বলেন, ‘ওয়াসিম আকরাম, ফেয়ারব্রাদার আমাদের বাসয় থাকতেন। আমরা একসঙ্গে লাঞ্চ, ডিনার করতাম; ওনাদের সঙ্গে গল্প করতাম। আব্বুকে দেখেছি কীভাবে ওনাদের নিয়ে কাজ করেছেন। আমার কাজটা এতে সহজ হয়ে গেছে। নইলে আমি একজন মেয়ে হিসেবে কেন আসব এখানে? অবশ্যই বাবার জন্য আসব। যে কারণে আমি আজ চারটি ট্রফি নিয়ে এখানে আসতে পেরেছি।’
কুমিল্লার জন্য আমার একটা টান কাজ করে। আমি অন্য কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি কিনলে অবশ্যই এটা হতো না।নাফিসা কামাল, চেয়ারপারসন, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস
বিপিএলে সাফল্যের পেছনে কুমিল্লাও তাঁর একটা প্রেরণা বলে উল্লেখ করেছেন নাফিসা, ‘কুমিল্লার জন্য আমার একটা টান কাজ করে। আমি অন্য কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি কিনলে অবশ্যই এটা হতো না। আমার বাবা কুমিল্লার জন্য যে ভূমিকা পালন করেন, যে সম্মানটা উনি কুমিল্লায় পান...আমার বাবার মেয়ে হিসেবে, কুমিল্লার মেয়ে হিসেবে অবশ্যই কুমিল্লার প্রতি আমার অন্য রকম একটা ভালোবাসা কাজ করে।’
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস যে কাঠামো অনুসরণ করে বিপিএলে সফল, বিপিএলকে লাভজনক করতে প্রয়োজনে সেটা নিয়ে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সঙ্গে বসতে চান নাফিসা, ‘ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের বোঝাপড়া ভালো থাকতে হবে। আমরা কিন্তু এখন পর্যন্ত একটা মিটিংয়েও বসিনি। আমরা ১৫-২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করি। আমরা এই টুর্নামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের যদি সে সম্মানটা দেওয়া হয়, আমরা একই টেবিলে বসে বিপিএল কীভাবে ভালো করা যায়, কীভাবে আর্থিকভাবে লাভবান করা যায়, সেটা নিয়ে আলাপ করতে চাই।’