মাশরাফি বিন মুর্তজা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ছেড়েছেন ২০১৭ সালে। এ বছর বিদায় বলেছেন তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমও। বুধবার ঘোষিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে জায়গা হয়নি মাহমুদউল্লাহর। কদিন পর ৩৭ পূর্ণ করতে যাওয়া এ ক্রিকেটারেরও ভবিষ্যৎ তাই এ সংস্করণে অনিশ্চিত।
টি-টোয়েন্টিতে একটা পালাবদল হয়েই যাচ্ছে বাংলাদেশ দলের। ‘সিনিয়র’ ক্রিকেটাররা একটা অবস্থানে নিয়ে গেছেন, এবার তরুণ প্রজন্মের দায়িত্ব সামনে নিয়ে যাওয়া—এমন মনে করছেন নতুন সহ-অধিনায়ক নুরুল হাসানও।
সর্বশেষ জিম্বাবুয়ে সফরেই তখনকার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহকে বিশ্রাম দিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল নুরুলকে। তবে শেষ ম্যাচের আগেই আঙুলের চোটের কারণে ছিটকে যান, এরপর খেলতে পারেননি এশিয়া কাপেও।
নিউজিল্যান্ডে হতে যাওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজ দিয়েই মাঠে ফেরার কথা ছিল। এখন অবশ্য সংযুক্ত আরব আমিরাতে হতে যাওয়া দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে একটু আগেভাগেই হয়তো ফিরছেন।
সহ-অধিনায়ক যখন, সিপিএলে খেলতে যাওয়া সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে এ সিরিজে অধিনায়কত্বের দায়িত্বও পালন করার কথা নুরুলেরই। যদিও এসব নিয়ে চিন্তাই করছেন না বলে দাবি নুরুলের।
দলের পারফরম্যান্সই প্রাধান্য পাচ্ছে তাঁর কাছে, ‘বেশ কিছুদিন ধরে টি-টোয়েন্টিতে ভালো করতে পারছি না আমরা। দল হিসেবে ভালো করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য আমরা যে খুব খারাপ খেলেছি, এমনও নয়। কিন্তু যেসব “ক্লোজ”ম্যাচ আমাদের দিকে আসতে পারে, সেখানে হেরে যাচ্ছি। ৫০-৫০ বা ৬০-৪০ সুযোগ যে থাকে ম্যাচগুলোতে, সেসব আমাদের দিকে কীভাবে আনা যায়, এ জায়গায় উন্নতি করার জায়গা আছে আমাদের।’
নুরুলের কথা মূলত গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলা টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরামের কথারই প্রতিধ্বনি। শ্রীরামের মতোই ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের চেয়ে ‘ইমপ্যাক্ট’কে এগিয়ে রাখছেন সহ–অধিনায়কও, ‘(কোচের কথা) ভালো বুঝি বা খারাপ বুঝি, তাতে লাভ নেই। মাঠে পারফর্ম করতে হবে। খুব বেশি কথা হয়নি, স্বাভাবিক কথাবার্তা। কোচের সঙ্গে আমি একমত, আমাদের পারফর্ম করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে ইমপ্যাক্ট ফেলা গুরুত্বপূর্ণ। বড় বড় রান করার চেয়ে ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী ইমপ্যাক্ট ইনিংসগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে।’
মুশফিক-মাহমুদউল্লাহদের অনুপস্থিতিতে তাঁদের দায়িত্ব বেড়ে গেছে, সেটিও মানছেন নুরুল, ‘আমাদের সিনিয়র যাঁরা আছেন, তাঁদের অবদান আমাদের ক্রিকেটে অন্য রকম। ওনারা আমাদের একটা জায়গায় নিয়ে গেছেন। এখন পরের প্রজন্মে আমরা যারা আছি, তাদের কাজ হলো এ অবস্থা থেকে আরও এগিয়ে যাওয়া। কীভাবে সামনে নিয়ে যেতে পারব, সেটিই তরুণ প্রজন্মের দায়িত্ব।’
তরুণ বলা হলেও নিজেদের অবশ্য ‘পরিণত’ও মনে করছেন এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান, ‘আমরা অনেকেই হয়তো পাঁচ-ছয় বছর ধরে খেলেছি, অনেক বেশি পরিণত সবাই। ঘরোয়াতে অনেক ম্যাচ খেলেছি। বিশ্বকাপ হয়তো অনেকের জন্য প্রথম। তবে বাংলাদেশের হয়ে খেলা সবার জন্যই গর্বের ব্যাপার। বাংলাদেশের হয়ে জেতার জন্যই নামে সবাই। দল হিসেবে আমরা যদি খেলতে পারি, আগে থেকে ফল নিয়ে না ভেবে যদি প্রক্রিয়াটা করতে পারি, তাহলে ভালো কিছু আসবে। সবাই নিজের দায়িত্বটা পালন করতে পারলে সাকিব ভাইয়ের জন্যও ভালো হবে।’
সেই ভালো যে ম্যাচ জয়, তা আলাদা করে না বললেও চলছে আপাতত। এ বছর ১০টি টি-টোয়েন্টি খেলে মাত্র দুটিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। টানা হারতে থাকা দলের আত্মবিশ্বাস কোন তলানিতে নেমে যায়, সেটিও বুঝিয়ে বললেন নুরুল, ‘যখন একটা দল জেতার অবস্থায় থাকে, তখন দলের পরিবেশ বদলে যায়। আমরা ক্লোজ কিছু ম্যাচ হেরেছি, যেহেতু পরাজিত দলে ছিলাম, এটি অনেক সময় আতঙ্কিত করে তোলে। আমরা এক-দুইটা ম্যাচ জিতলে এ জায়গা থেকে উন্নতি হবে। অবশ্যই আমরা বিশ্বাস করি, আমরা দল হিসেবে ভালো। কিন্তু সেরাটা হয়তো দিতে পারছি না, তবে জয়ের পথে ফিরলেই আমরা উন্নতি করতে পারব।’
বাংলাদেশের জন্য তাই যেকোনো দলের বিপক্ষে জেতাটাই এখন আত্মবিশ্বাস ফেরানোর উপলক্ষ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজ নিশ্চিত হওয়ার পর নুরুলের কণ্ঠেও যেন শোনা গেল অমন সুরই, ‘ম্যাচ আপনি যার সাথেই খেলেন না কেন, অভিজ্ঞতা তো হয়, টেম্পারামেন্ট বাড়ে। কোনো দলকেই তো টি-টোয়েন্টিতে ছোট করে দেখতে পারবেন না। যেদিন যারা ভালো খেলবে, তারাই জিতবে। ম্যাচ খেলাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমার কাছে মনে হয়, বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে, নিউজিল্যান্ডে যাওয়ার আগে খুব ভালো সুযোগ যে ম্যাচ খেলতে পারছি।’