বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ৪ ম্যাচ খেলে ৭ উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান
বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ৪ ম্যাচ খেলে ৭ উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান

ঘরের বাইরে ঘর পেলেন মোস্তাফিজ

পাওয়ারপ্লেতে এক ওভার, মাঝের ওভারে আরও একটি। বাকি দুটি ওভার ডেথ ওভারের জন্য বরাদ্দ। মোস্তাফিজুর রহমানের চার ওভার এভাবেই ভাগাভাগি করে ব্যবহার করেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন। এই সহজ সমীকরণটি প্রতিপক্ষেরও জানা। তবু রহস্যভেদ করতে পারছে না কেউই।

মোস্তাফিজ এবারের বিশ্বকাপে ৪ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। উইকেট নিয়েছেন ৭টি, ১০.২৮ গড়ে বোলিং করে যাওয়া মোস্তাফিজের ইকোনমিও অবিশ্বাস্য (৩.৩৭)। এখন পর্যন্ত মোস্তাফিজ ডেথ ওভারে বল করেছেন ৬টি ওভার, রান দিয়েছেন মাত্র ১০। গতকাল তো নেপালের বিপক্ষে ১৯তম ওভারে কোনো রান না দিয়েই উইকেট নিয়েছেন এই বাঁহাতি পেসার। চূড়ান্ত আধিপত্য বলতে যা বোঝায়, এবারের বিশ্বকাপে মোস্তাফিজ যেন ঠিক তা-ই করে দেখাচ্ছেন।

আজ নেপালের বিপক্ষে ৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান।

অথচ মোস্তাফিজকে কদিন আগে ঘরের মাঠের বাইরের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। কন্ডিশন পক্ষে থাকলেই তাঁর সেরাটা বেরিয়ে আসে, আলোচনাটা ছিল এমনই। উইকেট মন্থর ও অসম বাউন্সের না হলে এই মোস্তাফিজের বলেই তরতরিয়ে রান উঠতে থাকে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের কন্ডিশনে তেমন কিছুই হচ্ছে না; বরং কাটার ও গতির বৈচিত্র্য মেশানো মোস্তাফিজের ‘ট্রেডমার্ক’ ডেলিভারিগুলোতে ব্যাট ছোঁয়াতে পারছেন না ব্যাটসম্যানরা। মাঝ উইকেট থেকে বাঁক খেয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলগুলোতে চার-ছক্কা তো দূরের কথা, অনেকের ব্যাট বলেই হচ্ছে না!

বাংলাদেশের মন্থর উইকেটে মোস্তাফিজের এমন একচ্ছত্র আধিপত্য দেখা যায়। ঘরের মাঠে ৪৬ টি-টোয়েন্টি খেলা মোস্তাফিজের ১৯.৭০ গড় ও ৬.৮ ইকোনমি রেটে ৫৭টি উইকেট তার প্রমাণ। কাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেন্ট ভিনসেন্টে নেপালের বিপক্ষে ঘরের মাঠের সেই দাপুটে বোলিংয়ের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি!

৪ ওভার বল করে ৩ উইকেট নিয়েছেন মাত্র ৭ রানে, ডট বল ২০টি। ওয়েস্ট ইন্ডিজে তাঁর সামগ্রিক রেকর্ড খারাপ নয়। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে ৬ ম্যাচ খেলে ৫ ম্যাচে বল করে ৬ উইকেট নিয়েছেন, গড় ১৬.৮৩ এবং ইকোনমিও ভালো (৬.৩১)। পরিসংখ্যান দেখলে মনে হবে, মোস্তাফিজ যেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে ঘরের বাইরে আরও একটি ঘর খুঁজে পেয়েছেন। মোস্তাফিজের জন্য এর চাইতেও বড় ঘর যুক্তরাষ্ট্র। এবারের বিশ্বকাপের ২টি ম্যাচসহ যুক্তরাষ্ট্রে মোস্তাফিজ খেলেছেন ৭টি টি-টোয়েন্টি, উইকেট নিয়েছেন দেশের বাইরে নিজের সর্বোচ্চ ১৯টি, গড় ১০.৪২ ও ইকোনমি ৭.২৮।

ঠিক সময়ে ফর্ম খুঁজে পেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান।

কাল দলের জয়ের পর মোস্তাফিজের ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের প্রশংসা করছিলেন আরেক পেসার তানজিম হাসান, ‘আমরা কখনো আশা হারাইনি। কারণ আমরা জানতাম, শেষে মোস্তাফিজ ভাই আছেন, আমরা সবাই ওনার ওপর ভরসা রাখি। আমাদের ওনার প্রতি অগাধ বিশ্বাস আছে। উনি সেটা করেও দেখিয়েছে। ৪ ওভারে মাত্র ৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন, ১৯তম ওভারে মেডেন উইকেট নিয়েছে। আমাদের বিশ্বাস ছিল, আমরা শেষ পর্যন্ত খেলে ম্যাচটা বের করে নিয়ে আসব।’

ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোর ম্যাচ বিশ্লেষণী অনুষ্ঠানে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার তামিম ইকবালও এই বাঁহাতি পেসারের পারফরম্যান্স নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, ‘১৯তম ওভার, উইকেট মেডেন, এমন কীর্তি সাধারণত দেখা যায় না। বিশেষ করে যখন আপনি মাত্র ১০৬ রান ডিফেন্ড করছেন। দেখুন, মোস্তাফিজ এ কাজ বছরের পর বছর ধরে করে যাচ্ছে। এই বিশ্বকাপে তো সে অবিশ্বাস্য পারফর্ম করছে। আশা করছি সুপার এইটেও সে এটা ধরে রাখবে।’

এই মোস্তাফিজকে নাকি তামিমের ‘ভিন্ন বোলার’ মনে হচ্ছে, ‘আইপিএলে সে ভালো করেছে, এখনো ভালো করছে। ভিন্ন বোলার মনে হচ্ছে তাকে, বিশেষ করে মানসিকতার ক্ষেত্রে। দেখে মনে হচ্ছে সে যা করতে চাচ্ছে সেটাই করতে পারছে।’