বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে দৌড়াচ্ছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে দৌড়াচ্ছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা

দৌড়ে দৌড়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের অতীতে নাজমুল-রানারা

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের একটা আলাদা মায়া আছে। ফুটবল, ক্রিকেট, অ্যাথলেটিকস—বাংলাদেশের অনেক খেলার অতীত এখানে। আজ সকালে সেই অতীতেই যেন ফিরে গেলেন বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের একঝাঁক ক্রিকেটার। দেশের ক্রিকেটে একসময়ের তীর্থস্থান ছিল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। ২০০৬ সাল এই মাঠ ফুটবলের জন্য বরাদ্দ পায় এবং মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম হয়ে যায় ক্রিকেটের নতুন ঠিকানা। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের একটা প্রজন্মের ক্রিকেটারদের কাছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম স্মৃতিময় অতীত।

এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন, এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে শুধু মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিমের এ মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ঘরোয়া ক্রিকেটের একটি টুর্নামেন্টে খেলেছিলেন তরুণ মাহমুদউল্লাহ। আজ সকালে সেই মাঠে গিয়ে গ্যালারির দিকে আঙুল তুলে মাহমুদউল্লাহ হয়তো সেই টুর্নামেন্টে মারা একটি ছক্কার কথাই বলছিলেন বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমামকে।

জাতীয় দলের ম্যানেজার নাফিস ইকবালের খেলোয়াড়ি জীবনের অনেক অভিজ্ঞতার সাক্ষী এই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। আজ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে গিয়ে এদিক-ওদিক তাকিয়ে স্মৃতিচারণা করছিলেন তিনিও, ‘সবকিছুই দেখি বদলে গেছে।’

ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ইনচার্জ শাহরিয়ার নাফীস

ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ইনচার্জ শাহরিয়ার নাফীস এক প্রবীণ সাংবাদিকের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে নিজের স্মৃতি ভাগাভাগি করতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে উঠলেন, ‘কী স্টেডিয়াম রে ভাই! এই গেটটা তো বন্ধ করে রাখতে হতো খেলার সময়। কী মনে নাই ভাই, কী মনে নাই?’

পরে সংবাদমাধ্যমেও বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে নিজের স্মৃতি ভাগাভাগি করে নিলেন সাবেক ক্রিকেটার নাফীস, ‘১৯৯৪ সালে প্রথম এই মাঠে আসি আমি। অনেক আইকন ক্রিকেটার এখানে খেলতেন। তাঁদের দেখতে মাঠে আসতাম। ২০০৪ সালে আমার ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস এ মাঠে খেলেছি, ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলাম। তখন হয়তো বুঝিনি। কিন্তু এখন বুঝি সেই ইনিংসটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের প্রত্যেকটা ইঞ্চি ইতিহাস বহন করে। আমাদের প্রজন্মের খেলোয়াড়, শুধু ক্রিকেটার নয়, অন্য খেলার খেলোয়াড়েরাও এ কথা বলবে।’

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে ক্রিকেটারদের দৌড়ের একটি মুহূর্ত

সাবেকদের মুখে শোনা গল্পের সৌজন্যে নাজমুল–মাহমুদুলদের মতো এ প্রজন্মের খেলোয়াড়দের কাছেও বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের অন্য রকম মাহাত্ম্য যোগ হয়েছে।

নাফীসই জানালেন, ‘যারা একদম নতুন প্রজন্ম, তারা হয়তো এখানে খেলেনি। কিন্তু এই স্টেডিয়ামের কথা নিশ্চয়ই শুনেছে। অনেকের জন্ম ২০০০ সালের আশপাশে। তাদের খেলার কথাও নয়। তবে আইকনিক স্টেডিয়াম যেহেতু, এটার গল্প নিশ্চয়ই শুনেছে। দেখুন, সাধারণত সকাল ছয়টায় ফিটনেস টেস্ট দেখতে এত মানুষের আশার কথা নয়। যেহেতু বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম, তাই এসেছে। সবার জন্যই দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল।’

কঠিন অভিজ্ঞতাও বলা যায়। ক্রিকেটারদের ফিটনেসের পরীক্ষা সাধারণত মিরপুরের সবুজ মাঠেই হয়ে এসেছে। এবার পরীক্ষাটা হলো অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে। বিসিবির নতুন ট্রেনার ন্যাথান কিলি চাচ্ছিলেন, জাতীয় দলের আশপাশে থাকা খেলোয়াড়রা যে কেমন অবস্থায় আছেন, তা দেখতে। অস্ট্রেলীয় এই ট্রেনারের চাওয়ায় জিপিএস ট্র্যাকার পরে আজ ৩৫ জন ক্রিকেটার অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে ১৬০০ মিটার দৌড় ও ৪০ মিটার স্প্রিন্ট দিয়েছেন। চোটের কারণে আসেননি সৌম্য সরকার ও তাইজুল ইসলাম।

বিসিবির ট্রেনার ন্যাথান কিলি

কিলির এই ফিটনেসের পরীক্ষায় ছিলেন বিসিবির অন্য ট্রেনাররাও। মীর ইফতি খায়রুল ইসলাম তাঁদের একজন। রানিং সেশন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক বেছে নেওয়ার কারণ আসলে টাইমিংয়ের একটা বিষয় আছে। আমরা যদি আন্তর্জাতিকভাবে অনুসরণ করি, তাহলে বেশ কিছু টেস্টিং মেথড আছে, আমরা আজ ১৬০০ মিটার টাইম ট্রায়াল নিলাম। অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে যদি নিই, তাহলে প্রপার টাইমিংটা হয়। কারণ, ওই ভাবেই হিসাব করা হয়। এটা ওদের কাছে নতুন মনে হয়েছে। সব মিলিয়ে ভালো।’

মুশফিকুর রহিমের অবশ্য অন্য রকম চাহিদা ছিল। অ্যাথলেটদের মতো যেহেতু রানিং করবেন, তাঁদের মতো পুরস্কারের ব্যবস্থাও থাকা উচিত ছিল বলে মনে করেন এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। বিসিবির এক কর্মকর্তাকে তিনি মজা করে জিজ্ঞেস করছিলেন, ‘পতাকা কই? পতাকা আনবেন না!’ জিতলে সোনা নাকি ব্রোঞ্জ দেওয়া হবে, তা নিয়েও এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার খুনসুটি করছিলেন, ‘ব্রোঞ্জ কেন হবে? আপনাদের লক্ষ্যই ছোট। সোনা জিতব ইনশা আল্লাহ (হাসি)।’

দৌড় শেষে কিংবদন্তি স্প্রিন্টার উসাইন বোল্টের ভঙ্গিতে উদ্‌যাপন পেসার নাহিদ রানার

সে রকম পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকলে আজ দৌড়ে সোনা জিততেন তানজিম হাসান ও নাহিদ রানা। দুই দলে ভাগ হয়ে ১৬০০ মিটার দৌড়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন এই দুই ফাস্ট বোলার। রানা তো ফিনিশিং লাইন পার করার পর একদম উসাইন বোল্টের মতো পোজ দিলেন। খেলোয়াড়দের ফিটনেসের এই মূল্যায়ন এখানেই শেষ হচ্ছে না। আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়ামে নতুন ট্রেনারের সঙ্গে বিশেষ সেশন আছে খেলোয়াড়দের। বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখেই খেলোয়াড়দের নিয়ে কেলির এই কর্মযজ্ঞ।