রমিজ রাজা জানেন না, পাকিস্তান ক্রিকেট এখান থেকে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে! আর বাসিত আলীর চোখে গতকাল ৩ সেপ্টেম্বর ছিল পাকিস্তান ক্রিকেটের ‘কালো দিন’।
কেন? সে প্রশ্নের উত্তর নিশ্চয়ই আপনার জানা। তবু যদি অজানা থাকে, তাই জানিয়ে রাখা ভালো, গতকাল রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের শেষ দিনে পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে ২-০ ব্যবধানে ধবলধোলাইও করেছে নাজমুল হোসেনের দল।
রমিজের চোখে অবশ্য বাংলাদেশ শুধু ধবলধোলাই করেনি। তাঁর ভাষায়, ‘পাকিস্তানে পাকিস্তানকে শুইয়ে দিয়েছে।’ নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক ক্রিকেটার রমিজ। আরেক সাবেক ক্রিকেটার বাসিতও নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। বাসিতও কথার শুরুতে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছেন, ‘আজ মন চাচ্ছে শুধু ইশারায় কথা বলি।’
বাসিত অবশ্য ইশারায় কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও চুপ থাকেননি। বলেছেন, ‘৩ সেপ্টেম্বরকে পাকিস্তান ক্রিকেটের কালো দিন বললে ভুল হবে না...চেয়ারম্যান (মহসিন নাকভি) পিসিবি সামলানোর পর এটা দ্বিতীয় হার। বিশ্বকাপে আমরা (সুপার এইটে) উঠতে পারিনি। আর এবার হোয়াইটওয়াশ হতে হলো। আয়ারল্যান্ডের কাছে এক ম্যাচ হেরেছি, ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছি, নিউজিল্যান্ড এসেছে, তাদের কাছেও হেরেছি। কোনো সিরিজই জেতা যাচ্ছে না। কী হলো? কোনো জাদুটাদু নাকি!’
বাংলাদেশের পারফরম্যান্সেরও প্রশংসা করেছেন বাসিত। তাঁর ভাষায়, ‘বাংলাদেশ প্রতিটি জায়গায়, সেটা আচরণ থেকে বোলিং, ফিল্ডিং, ব্যাটিং, চিন্তাভাবনা, কোথায় বল করতে হবে, কী করতে হবে, সব বিষয়েই টক্কর দিয়েছে।’ বাসিত এরপর পাকিস্তান ক্রিকেটের প্রতি প্রশ্ন রেখেছেন, ‘এখন যদি চোখ না খুললে কবে খুলবে?’ পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষা ও অধিনায়কত্বেরও সমালোচনা করেন ১৯ টেস্ট ও ৫০ ওয়ানডে খেলা বাসিত।
টানা দুই বলে অধিনায়ক শান মাসুদের রিভিউ নেওয়া নিয়ে বাসিতের মন্তব্য, ‘স্কুল দলের অধিনায়কত্ব করছে নাকি! কেউ প্রশ্ন করার নেই...বাংলাদেশ সামনে আয়না রেখে আমাদের আসল চেহারাটা দেখিয়ে দিয়েছে। আমি সত্যি বলছি, বাংলাদেশের বোলিং, ব্যাটিং, ফিল্ডিং ও ম্যানেজমেন্ট আমাদের সবাইকে বলেছে (বুঝিয়েছে), দেখো তোমাদের (ক্রিকেটীয়) চেহারাটা এমন! তোমাদের দমই নেই। তাদের বোলাররা পাকিস্তানের ৩৬টি উইকেট নিয়েছে। আমাদের বোলাররা নিয়েছে ২৪ উইকেট। বিশ্বমানের বোলিং!’
টেস্ট সিরিজে পাকিস্তানের পারফরম্যান্স নিয়ে বাসিত এরপর সোজাসাপটা বলেছেন, ‘একদম তৃতীয় শ্রেণির পারফরম্যান্স। পাকিস্তান (দ্বিতীয়) টেস্ট ম্যাচটি হেরেছে অধিনায়কত্বের কারণে। ২৬ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর লিটন ও মেহেদী যেভাবে খেলেছে, তাতে (পাকিস্তানের) অধিনায়কত্বের বড় ভূমিকা আছে। কোনো কাটাছেঁড়ার দরকার নেই। কারণ, পাকিস্তান দল নিজেরাই নিজেদের কাটাছেঁড়ার কাজ করে ফেলেছে। (পিসিবি চেয়ারম্যান) মহসিন নাকভির এটা নিয়ে ভাবা উচিত।’
রমিজ বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘বলতেই হবে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—সব জায়গাতেই খুব ভালো পারফরম্যান্স করেছে এবং পাকিস্তানের চেয়ে বিস্তর এগিয়ে ছিল।’
এরপর পাকিস্তান দলকে খোঁচা মেরে সাবেক এই ওপেনার বলেছেন, ‘পাকিস্তানকেও মোবারক। রেকর্ড হার। আমি জানি না পাকিস্তান ক্রিকেট এখান থেকে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে! বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু অলৌকিক কিছু ঘটলেই তা সম্ভব।’
বাসিতের মতো রমিজও পাকিস্তান অধিনায়ক শান মাসুদের সমালোচনা করেছেন। তাঁর ভাষায়, ‘শান মাসুদকেই উত্তর দিতে হবে। কারণ, সে দলের নেতা। দলকে ম্যাচ জেতানো অধিনায়কের দায়িত্ব। শান মাসুদ অনেকবার ভুল করেছে...শান জানত পাকিস্তান দলের ফিটনেস কেমন। অধিনায়ক যখন নিজে রান করে, তখন অর্ধেক সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু অধিনায়ক নিজে রান না পেলে এবং বাংলাদেশের কাছে হারলে আর সেটা যদি হয় সফরকারীদের কাছে প্রথমবারের মতো—এমন হারে শিরোনাম হবেই।’
রমিজ এরপর সোজাসাপ্টাই বলেছেন, ‘পাকিস্তান ক্রিকেটের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশংসা করার মতো কিছু নেই।’