সিডনি টেস্ট খেলে ক্রিকেটের দীর্ঘতম সংস্করণ থেকে বিদায় নিয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার
সিডনি টেস্ট খেলে ক্রিকেটের দীর্ঘতম সংস্করণ থেকে বিদায় নিয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার

ওয়ার্নারের ব্যাগি গ্রিন রহস্য: আদতে যা ঘটেছিল

ডেভিড ওয়ার্নার তাঁর বিদায়ী টেস্টের আগে হারিয়ে ফেলেছিলেন ব্যাগি গ্রিন ক্যাপ। যে বিষয় গড়িয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত। ওয়ার্নার এরপর তাঁর ক্যাপ ফিরে পেয়েছেন। সিডনিতে ঘরের মাঠে বিদায় বলেছেন দীর্ঘ সংস্করণের ক্রিকেটকে। এরপর হেলিকপ্টারে ভাইয়ের বিয়ে থেকে সরাসরি সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এসসিজি) এসে জন্ম দিয়েছেন নতুন আলোচনারও

ওয়ার্নার ও ক্রিকেট দুনিয়া চলছে স্বাভাবিকভাবেই। তবে ওয়ার্নারের ব্যাগি গ্রিন আসলে হারিয়েছিল কোথায়, পাওয়া গেল কীভাবে—সে প্রশ্ন রয়ে গেছে। ব্যাগি গ্রিন রহস্যের সে অধ্যায় নিয়ে আলোচনা হলেও তখনো খোলাসা করেননি কেউ। এবার জানা গেল, আদতে কী ঘটেছিল।

অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম দ্য এজ জানিয়েছে ওয়ার্নারের ব্যাগি গ্রিন হারানো এবং খুঁজে পাওয়ার ঘটনার বিস্তারিত। সে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদতে ওয়ার্নারের যে ব্যাকপ্যাকে ব্যাগ্রি গ্রিন দুটি ছিল, সেটি জায়গা থেকে নড়েইনি। মেলবোর্ন থেকে সিডনিতে আসা পর্যন্ত সেটি ছিল জায়গামতোই।

এয়ারলাইনস কোম্পানি কোয়ানটাস, টিম সিকিউরিটি এবং মেলবোর্ন ও সিডনির হোটেলের স্টাফরা যখন ওয়ার্নারের ওই ব্যাকপ্যাক খুঁজে হয়রান, সেটি আসলে সিডনির ডাবল বের ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের টিম রুমে অন্য ব্যাগগুলোর সঙ্গেই ছিল। দলের দুটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য এজকে জানিয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর মেলবোর্ন থেকে সিডনিতে এসেছিল ৬৪টি ব্যাগ। একজন সাপোর্ট স্টাফ ঘটনাক্রমে ওয়ার্নারের ব্যাগটি দেখেছিলেনও।

নিজের ক্যাপ হারিয়ে ফেলার পর শেষ টেস্টে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে নেওয়া নতুন একটি ক্যাপ পরেছিলেন ওয়ার্নার

তবে এরপরও কেন সেটি হারিয়ে গেছে বলে চাউর হলো, সেটি বোঝা যাবে নিচের ঘটনাক্রমে।

ওয়ার্নারের ব্যাকপ্যাকটি ছিল একটি ‘হাফ কফিন’ ক্রিকেট ব্যাগে। সাধারণত খেলোয়াড় ও সাপোর্ট স্টাফরা তাঁদের ছোটখাটো সরঞ্জাম এমন ব্যাগে বহন করেন। তবে হারিয়ে যাওয়া ব্যাকপ্যাকটি খুব সম্ভবত কোথায় থাকতে পারে, সে প্রসঙ্গে ওয়ার্নারকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি তিনটি ‘ফুল কফিন’ ব্যাগের কথা বলেছিলেন।

‘হাফ কফিন’ নাকি ‘ফুল কফিন’—কোন ব্যাগে ব্যাকপ্যাকটি ছিল, তা নিয়ে তৈরি হওয়া ধোঁয়াশার মধ্যে ওয়ার্নার, তাঁর স্ত্রী ক্যানডিস বা টিম স্টাফের কোনো সদস্য আর সেটি খুঁজে পাননি। সব কটি ব্যাগেই ‘ডেভিড ওয়ার্নার’ নামের লেবেল ছিল। কিন্তু ঝামেলা হলো, ওয়ার্নারের যে হাফ কফিন ব্যাগ, সেটি ছিল রুমের অন্য একটি অংশে। তার ওপর সে ব্যাগটি ছিল এমনভাবে, যাতে ওয়ার্নারের নামের লেবেলটি ছিল দেয়ালের দিকে মুখ করে। সবাই যখন হন্যে হয়ে খুঁজছেন, সে ব্যাগ পড়ে ছিল তার জায়গাতেই!

এরই মধ্যে ওয়ার্নার তাঁর ব্যাগ ও ক্যাপ হারিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিওতে সেটি খুঁজে পেলে পুরস্কারের কথাও বলেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে কথা বলেন, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী নিক হকলিও ব্যক্তিগতভাবে ব্যাগ ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। এ নিয়ে কথা বলেন ওয়ার্নারের বাবা হাওয়ার্ডও

এসসিজিতে বিদায়ী টেস্টের পর স্ত্রী ক্যান্ডিসের সঙ্গে ওয়ার্নার, মাথায় ফিরে পাওয়া ব্যাগি গ্রিন

এতকিছুর পর ৬৪টি ব্যাগ আবার খোঁজার সিদ্ধান্ত নেন দলের ম্যানেজার ক্যাথরিন উইটম্যান। ৪ জানুয়ারি সিডনি টেস্টের দ্বিতীয় দিন চলে ওই চিরুনি অভিযান। যে অভিযানে বাদ যায়নি ওয়ার্নারের ওই ‘হাফ কফিন’ ব্যাগও, যার মধ্যে ছিল তাঁর ব্যাগি গ্রিন সংবলিত ব্যাকপ্যাকটি। ওয়ার্নার এরপর জানান, ‘আমি আপনাদের জানাতে পেরে খুশি ও স্বস্তি বোধ করছি যে আমার ব্যাগি গ্রিনগুলো ফিরে পেয়েছি। যেটি দারুণ সংবাদ।’

সে সময় জানা যায়, সিডনিতেই ব্যাগটি খুঁজে পাওয়া গেছে। তবে কীভাবে সেটি সেখানে এল, তা তখনো খোলাসা করা হয়নি। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টের শেষ দুই দিন নিজের পুরোনো ব্যাগি গ্রিন পরেই নামেন ওয়ার্নার। এ টেস্টের শুরুতে যাঁকে দেওয়া হয়েছিল নতুন একটি ক্যাপ।

ঠিক কী হয়েছিল, সে ব্যাপারে সিডনি টেস্টের পর জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে। তিনি বলেছিলেন, ‘এটা আমার বলার গল্প নয়। ডেভির (ওয়ার্নার) সঙ্গে কথা বলতে পারেন।’ তবে কি কোনো ধরনের প্রাঙ্ক ছিল এটি? সেটি অবশ্য নাকচ করে দেন ওয়ার্নার নিজেই, ‘নিরাপত্তাকর্মীদের জিজ্ঞাসা করুন। এ রকম একটা প্রাঙ্ক করতে পারলে তো ভালো লাগত। আপনারা ফ্রাঙ্ক দিমাসি বা স্টু বেইলিকে (নিরাপত্তাকর্মী) জিজ্ঞাসা করুন। আক্ষরিক অর্থেই ওগুলো আমি হাতেই পেয়েছি। এখানে আমার অন্য কিছু বলার নেই। এটাই আসল কথা।’

অবশ্য টিম স্টাফের কোনো সদস্য যদি ৩১ ডিসেম্বর এ ব্যাপারে আরেকটু খুঁতখুঁতে হতেন, তাহলে এত নাটক তৈরি হতো না। নিজেদের ব্যাগ মনে করে ভুলক্রমে ওয়ার্নারের হাফ কফিন ব্যাগটি খুলেছিলেন কেউ। যখন দেখেন ব্যাকপ্যাকটি তাঁর নয়, এরপর সে ব্যাগ বন্ধ করে রেখে দেন। তবে এরপর অবশেষে যখন ওয়ার্নার তাঁর ব্যাকপ্যাকটি খুঁজে পান, সেই স্টাফ এরপর দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে দেখেন—আদতে পাঁচ দিন আগে সিডনিতে পৌঁছেই সে ব্যাগটি দেখেছিলেন!

মাঝে হয়ে গেছে এত নাটক। অবশ্য এতকিছুর পর ওয়ার্নারের প্রাপ্তি—দুটির জায়গায় তিনটি ব্যাগি গ্রিন নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ টেনেছেন তিনি।