বোলিংয়ে বাংলাদেশের মোহাম্মদ রফিক, ব্যাটিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বোয়েটা ডিপেনার। প্রথম বলেই কাভারে যুবরাজ সিংয়ের হাতে ক্যাচ। ভারতের মহেন্দ্র সিং ধোনি, শ্রীলঙ্কার সনাৎ জয়াসুরিয়া আর পাকিস্তানের মোহাম্মদ ইউসুফরা মাঠের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসে অভিনন্দন জানালেন রফিককে।
ঘটনাটি ২০০৭ সালের ১০ জুনের। ক্রিকেট–দুনিয়ায় তখনো আইপিএল আসেনি। একই জার্সিতে কয়েকটি দেশের খেলোয়াড়দের একসঙ্গে খেলতে দেখার ঘটনা নিয়মিত দেখা যেত না। চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে সেদিন রফিক, যুবরাজ, জয়াসুরিয়া আর ইউসুফরা এক দল হয়ে খেলতে নেমেছিলেন এশিয়া একাদশের হয়ে। প্রতিপক্ষ ছিল আফ্রিকা একাদশ। ডিপেনারটিসহ রফিকের ৪ উইকেট নেওয়া ম্যাচটি ছিল আফ্রো–এশিয়া কাপ তিন ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচ। এখন পর্যন্ত সর্বশেষও।
দেড় যুগ পর আবারও এমন কিছু ম্যাচ দেখার সম্ভাবনা বেড়েছে। আফ্রো–এশিয়া কাপ চালু নিয়ে এরই মধ্যে আলোচনা হয়েছে আফ্রিকান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশেন (এসিএ) ও এশিয়ান ক্রিকেট বাউন্সিলের (এসিসি) মধ্যে।
ক্রিকেটপোর্টাল ইএসপিএনক্রিকইনফোর খবরে বলা হয়, শনিবার এসিএর বার্ষিক সাধারণ সভায় একটি ৬ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন কমিটি গঠন করা হয়েছে, যাদের দায়িত্ব সংস্থার পুনর্গঠন ও আফ্রিকা মহাদেশের খেলোয়াড়দের জন্য প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের সুযোগ বৃদ্ধি করা।
এর অংশ হিসেবে এসিসিসহ অন্যান্য সংগঠনগুলোর সঙ্গে আন্তমহাদেশীয় ক্রিকেটের সুযোগ খুঁজে দেখবে কমিটি, যেখানে আছে আফ্রো–এশিয়া কাপও। বর্তমানে আইসিসির পূর্ণাঙ্গ সদস্যদেশ ১২টি। এর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার অবস্থান এশিয়ায়। আফ্রিকায় আছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ে।
অন্যদের মধ্যে ইউরোপে ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড, ওশেনিয়ায় অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। মহাদেশকেন্দ্রিক ক্রিকেটে এসিসি বা এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলই সবচেয়ে সক্রিয়, নিয়মিত আয়োজিত হয় এশিয়া কাপ।
আফ্রিকা অঞ্চলে দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের পাশাপাশি কেনিয়াও একসময় নিয়মিত খেলত। আইসিসি সব সহযোগী দেশের টি–টোয়েন্টি ম্যাচকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়ার পর উগান্ডা, নামিবিয়ার মতো দলগুলোও এখন নিয়মিত খেলে।
২০০৫ আসরে এশিয়া একাদশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পাকিস্তানের ইনজামাম উল হক, খেলেছিলেন বীরেন্দর শেবাগ, কুমার সাঙ্গাকারা, শহীদ আফ্রিদিরা।
আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের খেলোয়াড়দের নিয়ে আফ্রো–এশিয়া কাপ এখন পর্যন্ত দুবার আয়োজিত হয়েছে। প্রথমবার ২০০৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায়, দ্বিতীয়বার ২০০৭ সালে ভারতে। এরপর ২০০৯ আসর কেনিয়ায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সেটি আর কখনোই হয়নি।
দেড় যুগ পর টুর্নামেন্টটি যদি আবার অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে লম্বা সময় পর ভারত ও পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের আবার একসঙ্গে খেলতে দেখা যাবে। ২০০৮ আইপিএলের পর এ দুই দেশের খেলোয়াড়েরা আর এক দলের হয়ে খেলেননি।
এসিএ–গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের (জেডসি) প্রধান তাবেঙ্গুয়া মুকুহলানিকে। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে, আফ্রিকার মধ্যে কথা তো হয়েছেই। তারা চায় আফ্রো–এশিয়া কাপ পুনরুজ্জীবিত হোক।’ এ বিষয়ে এসিসির কারও মন্তব্য নিতে পারেনি ক্রিকইনফো।
২০০৫ আফ্রো–এশিয়া কাপের তিন ম্যাচের সিরিজ শেষ হয়েছিল ১–১ সমতায়, একটি ম্যাচ বৃষ্টিতে পণ্ড হয়েছিল। সেবার এশিয়া একাদশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পাকিস্তানের ইনজামাম উল হক, খেলেছিলেন বীরেন্দর শেবাগ, কুমার সাঙ্গাকারা, শহীদ আফ্রিদিরা।
গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন আফ্রিকা একাদশে ছিলেন জ্যাক ক্যালিস, হিথ স্ট্রিক, তাতেন্দা তাইবুরা। ২০০৭ আসরে তিন ম্যাচই জিতেছিল এশিয়া একাদশ। মাহেলা জয়াবর্ধনের নেতৃত্বাধীন এই সিরিজে বাংলাদেশ থেকে রফিকের পাশাপাশি মাশরাফি বিন মুর্তজাও অংশ নিয়েছিলেন।