টসে হেরে নিগার সুলতানা বলেছিলেন, ‘গুড টস টু লুজ’। অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটারদের বিপক্ষে তাঁর বোলাররা কেমন করেন, সেটি দেখতে টসে জিতলে নাকি তিনি বোলিং নিতেন। এ কারণে বোলিং পাওয়াতে খুশিই হয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তাঁর বোলাররা শুরুতে পড়েছিলেন জর্জিয়া ওয়ারেহাম ও গ্রেস হ্যারিসের ঝড়ের কবলে, এরপর দারুণভাবে ঘুরেও দাঁড়ান। ফারিহা ইসলাম তো করেছেন হ্যাটট্রিকও। কিন্তু ম্যাচশেষে সে খুশিটা থাকেনি নিগারের।
অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ১৬২ রানের লক্ষ্য ছোঁয়ার ধারেকাছেও যেতে পারেনি বাংলাদেশ। ওপেনার দিলারা আক্তারের ২৫ বলে ২৭ রানের পর স্বর্ণা আক্তার খেলেছেন ১৭ বলে ২১ রান, এরপরও ২০ ওভারে ১০৩ রানেই আটকে গেছে স্বাগতিকেরা। ৫৮ রানের বড় জয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতল অস্ট্রেলিয়া।
মুর্শিদা খাতুন ও দিলারার ওপেনিং জুটিতে বাংলাদেশের শুরুটা অবশ্য ছিল আশাজাগানিয়াই। প্রথম ওভারে ৪ ওভারে ৩০ রান তোলেন তাঁরা। পঞ্চম ওভারে মেগান শুটের বলে কট বিহাইন্ড হন মুর্শিদা, যদিও আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট মনে হয়নি তাঁকে। বাংলাদেশের পথ হারানোর শুরুও সেখান থেকেই। সে সময় ১৪ রানের মধ্যে আরও ৩ উইকেট হারিয়ে কার্যত লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে তারা। পঞ্চম উইকেটে ফাহিমা খাতুন ও স্বর্ণা ৩০ রানের জুটি গড়লেও তাতে পার্থক্য গড়ে ওঠেনি। দুই স্পিনার সোফি মলিনু ও অ্যাশলেই গার্ডনার নেন ৩টি করে উইকেট নেন।
এর আগে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং অর্ডারের ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে গ্রেস হ্যারিসের সঙ্গে ওপেন করতে আসেন ফিবি লিচফিল্ড। আট বছর আগে দুবার ওপেন করেছিলেন হ্যারিস (রান করতে পারেননি কোনো), লিচফিল্ড ক্যারিয়ারে ওপেন করেছিলেন মাত্র একবার। তাঁদের ওপেনিং জুটিতে অবশ্য আসে ১৫ রান, ফারিহার বলে কাভারে লিচফিল্ড ক্যাচ তুললে ভাঙে সেটি।
তবে ক্যারিয়ারে এর আগে কখনোই সাত নম্বরের আগে না খেলা জর্জিয়া ওয়ারেহামের সঙ্গে হ্যারিসের জুটিতে ওঠে ৫৪ বলে ৯১ রান। প্রথম ৬ ওভারে ৪০ রান ওঠার পর গতি বাড়ান দুজন, স্বর্ণার অষ্টম ওভারে তোলেন ২০ রান। ওয়ারেহাম ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি করেন মাত্র ২৬ বলেই। বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ১৮৯ রানের স্কোর তো বটেই, ২০০-ও সম্ভব মনে হচ্ছিল তখন।
তবে ১২তম ওভারে নাহিদাকে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ওয়ারেহাম ধরা পড়ার পর থেকেই ছন্দপতন হয় অস্ট্রেলিয়ার। ক্যারিয়ারসেরা ৩০ বলে ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন ওয়ারেহাম। পরের ওভারে ফাহিমা করেন জোড়া আঘাত—চারে আসা অ্যাশলেই গার্ডনারের পর ফেরেন হ্যারিস। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি থেকে ৩ রান দূরে থামেন হ্যারিস, যিনি খেলেন ৩৪ বল।
মাঝে এলিস পেরি ও তালিয়া ম্যাকগ্রা যোগ করেন ৩৯ রান, যদিও তাতে লেগে যায় ৩৪ বল। ব্রেক থ্রুয়ের খোঁজে বারবার বোলার পরিবর্তন করা বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার ব্যবহার করেন সাতজনকে। প্রথম ৩ ওভারে ১৩ রান দেওয়া ফারিহাকে আনেন শেষ ওভারে।
প্রথম বলে চার মারেন পেরি। চতুর্থ বলে গিয়ে স্বর্ণার হাতে ওয়াইড লং অফে ক্যাচ তোলেন তিনি, পরের বলে মলিনু ধরা পড়েন পয়েন্টে। শেষ বলে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে অ্যারাউন্ড দ্য লেগে বোল্ড হন মুনি। ফারিহার হ্যাটট্রিক পূর্ণ হয় তাতেই। আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে প্রথম এবং সব মিলিয়ে তৃতীয় বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক নারী টি-টোয়েন্টিতে দুটি হ্যাটট্রিক করলেন এ পেসার। তাঁর প্রথম হ্যাটট্রিকটি এসেছিল ২০২২ সালে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া নারী দল: ২০ ওভারে ১৬১/৮ (ওয়ারেহাম ৫৭, হ্যারিস ৪৭, পেরি ২৯; ফারিহা ৪/১৯, নাহিদা ২/২১, ফাহিমা ২/৩৪)
বাংলাদেশ নারী দল: ২০ ওভারে ১০৩/৯ (দিলারা ২৭, স্বর্ণা ২১, ফাহিমা ১৫; মলিনু ৩/১০, গার্ডনার ৩/১৭, শুট ২/৩১)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৫৮ রানে জয়ী