যুদ্ধ বলেন আর জীবন বলেন, কোনোমতে সারভাইভ করার কোনো জায়গা নেই পৃথিবীতে

মুমিনুল হক: ম্যাচের সময় তেমন কিছু মনে হয়নি। তবে পরে অবশ্যই ভালো লাগে। ওই ইনিংসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

মুমিনুল: আপনি তো জানেন, আমি ৫৫ টেস্ট খেলে ফেলেছি। এই পর্যায়ে এসে আসলে টেকনিক্যাল বিষয়টা অতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না। আমি টেস্ট খেলার সিস্টেমটা জানি। জানি, আমি কীভাবে রান করি। ওই সময় হয়তো মানসিকভাবে ভালো অবস্থায় ছিলাম না। আমি ক্যাপ্টেন ছিলাম। দল নিয়ে অনেক বেশি চিন্তাভাবনা করেছি। আমি যখন ক্যাপ্টেনসি নিই, তখন আমার অনেক বড় স্বপ্ন ছিল। যেটা আমি আপনাদেরও বলেছিলাম। আমি যখন স্বপ্ন বুনতে শুরু করলাম, তখনই মনে হয় ছোটখাটো একটা ধাক্কা খেলাম। ওটার কারণে আমার ফোকাসটা হয়তো সরে গেছে।

মুমিনুল: ধাক্কা মানে…আসলে আপনি যখন দল নিয়ে স্বপ্ন দেখবেন, তখন আপনার নিজেকেও পারফর্ম করতে হবে। আমার নিজের পারফরম্যান্স ভালো হচ্ছিল না।

মুমিনুল: মানে আমি যথেষ্ট অ্যাগ্রেসিভ না। আমি সর্বশেষ যে কয়টা ইনিংস খেলেছি, সবগুলোতে আমার স্ট্রাইক রেট ৩০–এর আশপাশে। তিনি এটাও বলেছিলেন, তুমি যতই রান করো না কেন, তুমি যদি ১০০-ও করো, কিন্তু স্ট্রাইক রেট যদি ৩০ হয়, তার মানে তুমি ফর্মে ফেরোনি।

মুমিনুল: হ্যাঁ, এই জিনিসটা আমার খুব কাজে দিয়েছে। আমি এরপর চিন্তা করলাম, আসলেই তো! আমার যে অ্যাগ্রেসিভনেসটা ছিল, সেটা তো নেই। ভারতের সঙ্গে হয়তো আমি ৮৪ করেছি, সেটায় কিন্তু স্ট্রাইক রেট ঠিক ছিল।

মুমিনুল: হ্যাঁ, এটাই আমার ন্যাচারাল খেলা, যেটা আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ওই যে বললাম না, অধিনায়কত্বের দায়িত্ব, দল নিয়ে চিন্তাভাবনা থেকে এই জিনিসটা হয়েছে। মাউন্ট মঙ্গানুইতে আমি রান করেছিলাম। কিন্তু সেখানেও আমি অনেক সময় নিয়েছি।

মুমিনুল: কিন্তু ওটা তো আমার ন্যাচারের বাইরে। আমি যদি ওভাবে ১০টি ইনিংস খেলি, তাহলে হয়তো ৩টায় সফল হব। আমি আমি যেভাবে খেলে বড় হয়েছি, সেভাবে খেললে আমার সাফল্যের হার বাড়বে। হয়তো ১০টার মধ্যে ৭টায় সফল হব। মাউন্ট মঙ্গানুইতে আমি যেটা খেলেছি, সেটা আমার ন্যাচারাল খেলা না।

মুমিনুল: মেরে খেলা মানে পজেটিভ ইনটেন্ট নিয়ে খেলা। পজেটিভ ইনটেন্ট মানে এই না যে, সব বল মারব।

মুমিনুল: ক্যাপ্টেনসি না করলে তো প্রেশার অবশ্যই কমে আসে। তখন আপনি আপনার নিজের খেলা নিয়ে বেশি ফোকাস করবেন। নিজেকে নিয়ে ভাববেন। কিন্তু স্বপ্নটা তো কোনো সময় শেষ হয় না। আমার যে স্বপ্ন ছিল…সেটা।

মুমিনুল: অলমোস্ট। পেস বোলিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা অনেকটা এগিয়েছি।

মুমিনুল: এই স্টান্সটা নতুন। আমি হয়তো এটা এখনই টেস্ট ক্রিকেটে ট্রাই করব না। যখন সাদা বলে খেলব, তখন করব। আমি প্র্যাকটিস করে দেখেছি, মনে হয়েছে টেস্টে করাটা ঠিক হবে না। এই স্টান্সে সাদা বলে আপনি সব দিকে খেলতে পারবেন।

মুমিনুল: বলটা ভালো দেখা যায়। পাঁজরের দিকে বল এলে সহজে শট খেলা যায়।

মুমিনুল: না। এর আগের বিপিএলে যখন খেলেছিলাম, তখন মনে হয়েছিল, সাদা বলে একরকম খেলতে হবে, লাল বলে আরেক রকম। আমার যত বয়স হবে, আমাকে তত বেশি এই ছোট ছোট জিনিসগুলো পরিবর্তন করতে হবে। বল নতুন থাকলে একরকম, পুরোনো হলে আরেক রকম। স্পিনে একরকম, পেসে আরেক রকম।

মুমিনুল: এটা করতে করতে মনের ভেতর গেঁথে যাবে। মাসল মেমোরি তৈরি হবে।

মুমিনুল: না। এটা প্রথম ১৫-২০ বলের জন্য। লাল বলে করার ক্ষেত্রে একটু ঝামেলা হতে পারে। কারণ সুইংটা বেশি থাকে। তখন নড়াচড়া বেশি করলে হেড পজিশন এলোমেলো হয়ে যেতে পারে।

মুমিনুল: আমি আসলে কীভাবে লাল বলে শট বাড়ানো যায়, সেই চিন্তা করি। আমি যদি লাল বলে শট বাড়াতে পারি, তাহলে সেটা তো সাদা বলেও কাজে লাগছে। আমার মনে হয় টেস্টের জন্য আরও দুই-একটা শট বাড়ানো উচিত।

মুমিনুল: হ্যাঁ। মানে যেটা লিটনরা মারে, ওদেরটা দেখবেন মারলেই ছয় হয়।

মুমিনুল: হ্যাঁ। উনি তখন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গে কাজ করছিলেন। স্যার ব্যস্ত ছিলেন বিপিএলের কারণে। তখন ওয়াসিম ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করেছি। আমি তখন মেন্টালি ভালো ছিলাম না। স্যারও ব্যস্ত। কাউকে পাচ্ছিলাম না। নাফীস (শাহরিয়ার নাফীস) ভাইয়ের কথা বলতে হয়। উনি ওই সময় আমার অনুশীলনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এখন যখন সাদা বলে খেলি, তখন শাফল করি।

মুমিনুল: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি মেন্টালি স্ট্রং হন, বাঁকাত্যাড়া হয়েও আপনি রান করবেন। অনেকেই আছেন এমন ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটে। অনেকে ভালো স্টান্স নিয়েও রান পান না।

মুমিনুল: আগে যেমন ছিলেন, তার চেয়ে আরও ম্যাচিউরড মনে হয়েছে। সব দিক থেকেই আগের চেয়ে অনেক ভালো।

মুমিনুল: আমার সঙ্গে কোনো ঝামেলা হয়নি। ঝামেলাটা আপনারা বানিয়েছেন (হাসি)।

মুমিনুল: এটা নির্ভর করে কন্ডিশন ও প্রতিপক্ষের ওপর। কন্ডিশন যদি ভালো থাকে, আপনি ১০০ ওভারে ৪০০–ও করতে পারেন। এখন যদি খেলা ভারত বা অন্য কোন বড় দলের সঙ্গে হয়, তাহলে ভিন্ন অ্যাপ্রোচে খেলতে হবে। কন্ডিশন যদি ভালো থাকে, যেখানে আপনি এক দিনেই ৪০০ করতে পারবেন, তাহলে আপনি কেন করবেন না? উইকেট পড়ুক না, ৫টা উইকেট পড়ুক।

মুমিনুল: আমার এটা খুবই ভালো লাগে।

মুমিনুল: হ্যাঁ, এই কারণেই। বেশি ডিফেন্সিভ খেললে আমার জন্য কঠিন। আপনি যদি ৩০০ বল খেলে ১০০ করেন, তাহলে বুঝতে হবে উইকেট ভালো। কারণ আপনি ৩০০ বল খেলেছেন। ৩০০ বল খেললে আপনাকে কমপক্ষে ২০০ মারতে হবে। সুযোগ থাকলে আপনি এক দিনে ৪০০ করেন। পাঁচ দিনের খেলা চার দিনে শেষ করে দেন।

মুমিনুল: অবশ্যই। ক্রিকেট সেদিকেই যাচ্ছে। টেস্টের ড্রিংকস ওভার, লাঞ্চ ওভারে সব ফিল্ডার ওপরে আনা হয়। কারণ ব্যাটসম্যানের মানসিকতাই থাকে উইকেট না হারিয়ে বিরতিতে যাওয়ার। সামনে দেখবেন, ফিল্ডার ওপরে এলে মাথার ওপর দিয়ে ছয় মেরে দিচ্ছে ব্যাটসম্যানরা। মিড অফ, মিড অন ওপরে, স্পিনার বল করছে, একটা সুযোগ নিই। দিন শেষে এটা রানের খেলা। হ্যাঁ, এভাবে খেলতে গেলে শুরুর দিকে হয়তো সফল হবেন না। কিন্তু আলটিমেটলি সফল হবেন। আপনি যত ডিফেন্সিভ থাকবেন, তত মরবেন। শুধু টিকে থাকার চিন্তা করলেই মরবেন। যুদ্ধ বলেন আর জীবন বলেন, কোনোমতে সারভাইভ করার কোনো জায়গা নেই পৃথিবীতে। আপনি যদি ডমিনেট করতে চান, প্রথমে বিপদে পড়লেও পরে সফল হবেন।

মুমিনুল: হ্যাঁ, অবশ্যই। দর্শকও মজা পাবে। ক্রিকেটাররাও উপভোগ করবে। এই এক ধরনের খেলা খেলতে কার ভালো লাগে।

মুমিনুল: হ্যাঁ, এটা ক্রিকেটারদের থেকেই আসতে হবে। আর এটা পুরোপুরি মানসিকতার ব্যাপার। আপনি যদি একবার মনে গেঁথে নেন, এক দিন, দুই দিন না হলেও তিন দিনের দিন ঠিক পারবেন।

মুমিনুল: আমার ইচ্ছা আছে। আগামী এনসিএলে আমাদের চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে এটা শুরু করব। যদি উইকেট ভালো হয়, খেলা হবে ফাস্ট স্কোরিং।

মুমিনুল: তখন কঠিন। কন্ডিশন ভালো হলে আপনি মারতে পারবেন।

মুমিনুল: হ্যাঁ, এটাই বুঝাতে চাচ্ছি। এখন যদি আপনার ওপেনার ২০ ওভার খেলে ফেলে, তার জন্য কিন্তু মেরে খেলা সহজ। ধরুন তামিম ভাই ২০ ওভার খেলে ফেলেছেন, উনি কিন্তু সমানে অ্যাটাক করবেন। উনি তো নতুন বলেই অ্যাটাক করেন। পরে আরও বেশি করবেন। পরে যে আসবে, তার জন্য বলটা কিন্তু পুরোনো। সে মেরে খেলতে পারবে। এটা কিন্তু বুঝতে হবে, সবটাই কন্ডিশনের ওপর নির্ভর করবে। আর শুধু মেরে খেলাই কিন্তু পজেটিভ ইনটেন্ট না। আপনি ভালো বলটাকে পা নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছেন, সেটাও কিন্তু পজেটিভ ইনটেন্ট। তার মানে কী, আপনার পা ঠিক চলছে।

মুমিনুল: আস্তে আস্তে হবে। এখন হয়তো বিষয়টা কঠিন। একটা সময় আসবে সেটা কঠিন মনে হবে না। সময়ের সঙ্গে উন্নতি আসছে। সামনেও আসবে।

মুমিনুল: আমার তো প্রিমিয়ার লিগ শেষ। কদিন পরই শুরু করব। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দল আসবে। আমি হয়তো সেখানে দুটি চার দিনের ম্যাচ পাব। সেগুলো নিশ্চয়ই সাহায্য করবে। আমি লম্বা সময় মাঠে থাকব। এটা কাজে দেবে।